লম্বা লম্বা রেফারেন্স নয়। অতি সরল কথা। এখন বাংলাদেশে না হলেও কোটি মানুষ কিছু মানুষকে কবর পূজারী/মাজার পূজারী/নাল পূজারী/পীর পূজারী/ নাস্তিক/মুশরিক বলেন। কিছুদিন আগে গণজাগরণ ও হেফাজতের কালে কোটি বিশ্বাসী মুসলমানকে একাধারে নাস্তিক বলা হয়েছে। প্রত্যেকটা গ্রামে, প্রত্যেকটা শহরে, প্রত্যেকটা গলিতে মানুষ মানুষকে নাস্তিক বলেছে।
এতে ইসলাম ধর্মের দিক দিয়ে আপত্তি করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। যে কবরের পূজা করে, তাকে কবরের পূজারী বলাই যাবে। এভাবে, যে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, তাকে নাস্তিক বলা যাবে। যে আল্লাহর সাথে অংশ সাব্যস্ত করে, তাকে মুশরিক বলাই যাবে! যে রাসূল দ.'র জুতার পূজা করে, তাকে নাল পূজারীও বলা যাবে। কোন সমস্যা নেই।
আপত্তিটা সম্পূর্ণ অন্য জায়গা থেকে উথলে ওঠে।
যেখানে সত্য দোষ আড়ালে বর্ণনা করলে, সেটা এতবড় পাপ হয়, যে নিজ মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া হয়! সেখানে মিথ্যা দোষ চাপালে তা হয় অপবাদ এবং ধর্মজ্ঞানসম্পণ্নরা এটাকে বলছেন গিবতের চেয়েও ভয়ানক পাপ। আর যদি সেই মিথ্যা দোষটা এমন হয়, যে একজন বিশ্বাসীকে মুশরিক বলা হল???
যে মাজার/পীর/রাসূল দ.'র জুতা মুবারক ইত্যকার পূজা করে না, যে শুধু লা শারিক আল্লাহর ইবাদাত করে, যে সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যে প্রতিমার পূজাও করে না এবং আল্লাহর গুণ ও জাতে শরিকও করে না, আল্লাহকে অমুখাপেক্ষীও জানে-
তাকে খুবই সাধারণ ধার্মিক একজন মানুষ মাজার পূজারী বলল, বা আল্লাহ'য় বিশ্বাসী একজনকে নাস্তিক বলল, যে এই দোষ চাপালো, সে সাথে সাথে কুফর করছে। কারণ, ইসলাম ধর্ম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল দ. থেকে এসেছে। রাসূল দ. বলেছেন, মুশরিক নয় এমন একজন মানুষকে মুশরিক বলার সাথে সাথে যে বলবে সে কাফির হয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষকে মাজার পূজারী বলেন, যাকে বলছেন, তার কিছু খসে যাচ্ছে না...
সর্বনাশটা হচ্ছে আপনার, আপনি যখন বলবেন, অমুক মাজার পূজারী, সাথে সাথে আপনি কাফির হয়ে যাবেন। সেই ব্যক্তির কাছে মাফ চেয়ে মাফ না নিলে কাফির অবস্থায় মৃততুবরণ করবেন, কারণ আপনি মুখকে টয়লেট বানিয়েছেন। কাফির হাজার নামাজ পড়লেও তা ব্যায়াম সাব্যস্ত হয়। শিরক সবচে বড় যুলম। একজন নির্দোষ মানুষের উপর শিরকের মত সবচে বড় অপবাদ দিয়েছেন। রাসূল দ. বলেছেন, সামলাও যা দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী এবং দুই উরুর মধ্যবর্তী।
যে মুশরিক নয় এমন ব্যক্তিকে মাজার পূজারী বলল, তাকে খোলামেলা প্রশ্ন, কিয়ামাতের ময়দানে কাফির হিসাবে উঠতে কেমন লাগবে?
এর পরের প্রশ্নটা আরো মারাত্মক। 'মাজার পূজারী' এবং অন্যান্য টার্ম কার কাছ থেকে শিখেছেন? ফকির ফাক্রার কাছ থেকে নয়। আমরা জানি কোত্থেকে শিখেছেন। কোন্ কোন্ টিভির কোন্ কোন্ লেকচারারের কাছ থেকে। কোন্ কোন্ আন্দোলনের কোন্ কোন্ নেতাকর্মীর কাছ থেকে। কোন্ কোন্ মাদ্রাসার বিরাট বড় পরহেজগার মুরুব্বী আমলওয়ালা দ্বীনদার শিক্ষক-ইমাম-মুআজ্জিনের কাছ থেকে!
হায়, এই পরহেজগার মুরুব্বী আমলওয়ালা দ্বীনদার মোদাররেস-ইমাম-মুআজ্জিন-টিভি ভাষ্যকার-নেতা-কর্মী সবাই তিনটা ভয়ানক পাপের ভার নিচ্ছে, যা তারা বহন করতে পরকালেও পারবে না।
১. নিজে কাফির হচ্ছে।
২. হাজার হাজার, লক্ষ এমনকি কোটি মানুষকে কাফির বানাচ্ছে।
৩. কোটি মানুষকে মুশরিক বলছে ও বলাচ্ছে যাদের কাছ থেকে অবধারিতভাবেই তারা জীবনেও মাফ চাইতে পারবে না।
কাফির অর্থ যে জেনেশুনে ঢেকে ফেলে। কাফিরের আরেক অর্থ যে অস্বীকার করে। উচ্চতর কাফির সেই, যে জানার পর ঢেকে রাখে, জানার পর সেটা যে সত্য, তা বোঝে, এরপর আসাবিয়্যাহ্ বা দলবাজি করে অস্বীকার করে।
পৃথিবীতে কেউ মাজার পূজা, পীর পূজা, রাসূল দ.'র পবিত্র জুতার পূজা করে না। কোটি কোটি মাজারগামী বিশ্বাসী রয়েছেন। তাঁরা ইবাদাত শুধু আল্লাহর করেন। ইলাহ শুধু আল্লাহকে মানেন।
ল অভ ন্যাচারাল রিটার্ন বা রিভেঞ্জ নামে একটা কথা আছে না? খুবই কষ্ট হয় ওই লোকটার জন্য, যে আপন মূর্খতার দরুণ কাউকে পূজারী বলে নিজের সবকিছু শেষ করে দিল।
একটা মানুষকে যখন আমরা অন্যায়ভাবে শির্ককারী বলব, তখন সেই মানুষটার মনে কী পরিমাণ কষ্ট লাগতে পারে তার কি কোন হিসাব আছে? চোর না, এমন কাউকে চোর বললে এত কষ্ট লাগার কথা না। ডাকাত না, এমন কাউকে ডাকাত বললে এত কষ্ট লাগার কথা না। আল্লাহ এটা কতটুকু সহ্য করবেন?
আজকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ পাশাপাশি লিখলে মুশরিক বলা হয়। বুখারিতে পাশাপাশি আছে। আল্লাহর নাম এবং রাসূলের নাম পাশাপাশি লেখাকে শিরক বলা হয়। রাসূল-উল্লাহ শব্দটাই তো আল্লাহ ও রাসূল দ.'র নাম পাশাপাশি লেখা। তাহলে কুরআন কি শিরকে পূর্ণ? অসম্ভব।
এমনকি হাজরে আসওয়াদে চুমু খেলে সেটাকেও শিরক বলা হয়। রাসূল দ. চুমু খেয়েছেন। উমার রা. চুম্বন করেছেন। চুম্বন করেছেন গত দেড় হাজার বছর ধরে সমর্থ্য সকল মুসলিম। এরা সবাই মুশরিক?
রাসূল দ.'র জুতা মুবারক দেখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বললে মানুষ জান্নাতে চলে যাবে, এই বিশ্বাস আবু হুরাইরা রা.'র। এই বিশ্বাস ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মুসলিম শরীফ, প্রথম খন্ড, ১১৪ পৃ.-হাদীস নং ৫৪. অনুসারে। (এর আগে বুখারী বলেছিলাম, সেটা স্মরণের ত্রুটি। বুখারী আর মুসলিম শরীফের মর্যাদায় আদৌ তফাত নেই।) আর এই বিশ্বাসের নির্দেশ স্বয়ং রাসূল দ. দিয়েছেন। এই জুতা দেখে যদি কেউ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেই ফেলে, সে তো জান্নাতে চলে যাবে, যেহেতু রাসূল দ. ভুল বলেননি। কিন্তু ওই মানুষটাকে যে মুশরিক বলবে, তার হাল কী হবে?
সে তো আবু হুরাইরা রা. কে মুশরিক বলল।
ইমাম মুসলিমকে মুশরিক বলল।
এবং স্বয়ং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ দ. কে মুশরিক বলল!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৯