somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়াজালে বেড়িয়া মরণ না হইল স্মরণ, রে হাসন রাজা...

১৩ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাত বছরের মেয়ে শিশু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে শোয়া। তার সাথে মা নেই, বাবা নেই। কারণ, নিতান্ত ভালমানুষ সহজ-সরল বাবাটা, যিঁনি ভাস্তে-ভাগ্নেদের কাছে 'বেহেস্ত মামা' নামে পরিচিত, তাঁর পা ভেঙেছে দু মাসও হয়নি।

সাত বছরের মেয়ে। ব্লাড ক্যান্সার।
একদিন তোর হইবরে মরণ!

আমার এখন রক্ত চেয়ে স্ট্যাটাস, পোস্ট দেয়ার কথা। কিন্তু সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়। একই ঘটনা আরেকজনের হল। তিনিও এ বাচ্চাটার জন্য রক্ত চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে তার কিছুক্ষণ পরই নিজের ফেবু অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভ করে দিলেন। তাঁর কাছেও পুরো বিষয়টা অর্থবিহীন মনে হচ্ছে।

'ব্লাড ক্যান্সার' শব্দটার সাথে লিউকোমিয়া'র একটা যোগসূত্র পর্যন্তই জানতাম। সার্চ করে পেলাম, বহু ক্যান্সারকেই ব্লাড ক্যান্সারে ফেলা হয়।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মরণের দশ বড় কারণ বেশ চমকে দিল।
পেলাম, মরণের মূল কারণ বিলাস। মরণের মূল কারণ অনিয়ন্ত্রণ। মরণের মূল কারণ মরণের কথা বেমালুম ভুলে যাওয়া।

http://www.who.int/mediacentre/factsheets/fs310/en/

মরণের প্রথম, দ্বিতীয় ও দশম কারণই হার্ট ডিজিজ। আর হার্ট ডিজিজের একাত্র কারণ নিয়ন্ত্রণের অভাব।

তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম কারণ ফুসফুস, শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে জড়িত। এটা হয়ই শুধু সচেতন নিয়ন্ত্রণের অভাবে। আত্মসংবরণের অভাবে। মৃততুর সম্ভাব্যতাকে মাথায় না রাখার কারণে।

অষ্টম কারণ, ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পৃক্ত, আর কিছুই না। নিজেকে পদ্ধতির ভিতরে নিয়ে আসার অনীহা, অর্থাৎ কর্মফল সম্পর্কে অসচেতনতাই এর গোড়া।

পথ-দুর্ঘটনা আর ডায়রিয়া জনিত রোগ- এ দুটাও প্রায় সম্পূর্ণরূপে নিয়ম মানা ও পদ্ধতির আদলে আসা-না আসার উপর নির্ভরশীল।

এইডসের কথা আর বলার কী থাকতে পারে! শীর্ষ দশ কারণের নয়টার জন্যই যেখানে ভিকটিম স্বয়ং দায়ী, সেখানে শুধু আমরা এই এইডস ধরে দায়ী করি ভিকটিমকে।

পৃথিবীব্যাপী রোগগ্রস্ত মৃততুর শীর্ষ দশ কারণ দখল করে আছে মোট রোগে মরণের ৫০% এরও বেশি স্থান।

এর পুরোটাকেই মাত্র চারটা শ্রেণীতে ফেলতে পারি আমরা-

১. ভোগের ক্ষেত্রে অসংযম। দশটার মধ্যে পাঁচটাই সরাসরি ভোগ বিষয়ক- হার্ট, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, এইডস।

২. শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে জড়িত ভুল। বায়ু দূষণের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করার কারণে শীর্ষ দশের মধ্যে তিনটা রোগে মরণ। ড্রাগস-ধূমপান তো বাদই।

৩. ক্ষুদ্র ক্ষেত্রে সচেতন দৃষ্টির অভাব, বা অভ্যস্ত শৃঙ্খলার অভাব। ডায়রিয়া, পথ-দুর্ঘটনা... এবং দশটার মধ্যে এইডস বাদে বাকী নয়টাই এর মধ্যে পড়ে।

৪. মানসিক পরিপূর্ণতার অভাব। হার্ট জিজিজেস, স্ট্রোক, ডায়াবেটিসের সাথে সাথে শ্বাসকষ্ট (ত্রিশলাখের বেশি মরনের কারণ বছরে) সম্পূর্ণ মানসিক স্থিতি ও মনের অবস্থার সাথে জড়িত।

আসলে রোগ আমাদের মারছে না, আমরা আমাদের মারছি, রোগ শুধু একটা কারণ রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। ঠিক এই পয়েন্টেই আধ্যাত্মিকতার সূচনা বলে ধারণা করি। কারণ এই সমস্ত কিছুর সাথে কীভাবে কীভাবে যেন আধ্যাত্ম্য জড়িত হয়ে পড়ে প্রতিনিয়ত। পয়সা আছে, সবই আছে, তবু খাবারে সংযম করো, শ্বাসের সাথে কাজ করো, নিজেকে কঠিন নিয়মানুবর্তীতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করো, সর্বসচেতন হও... এ কথা প্যাকেজ আকারে আধ্যাত্ম্য ছাড়া আর কিছু কোনদিন বলে না, কোনদিন দেয় না।

ধর্ম বলব না, ধর্ম আধ্যাত্ম্যের এক খোলসমাত্র।
আপেলের খোসাতেও উপকার আছে, কিন্তু খোদ খোসা কখনোই আপেল নয়। এই আধ্যাত্ম্যের তাসাউউফ নামটাকেই পরিগ্রহণ করলাম, তারপর নিজেকে অধিগ্রহণের চেষ্টা...

আজ বহুদিন পর মনে পড়ে গেল, যখন মানসিক অস্থিতির জন্য মনে করতাম আজকেই শেষদিন। অবশ্যই আজকে শেষ দিন। হায়, যদি বাঁচতাম, তবে কী-ই না করতাম!

বেঁচে শুধু আধ্যাত্ম্যের দিকে নতুন করে ফেরা হয়েছে। সেই কথাগুলো মনে পড়ে গেল, রে হাসন রাজা... একদিন তোর হইবরে মরণ!
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×