somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিজবুত তাহরীর ও আমাদের বিবেচনা

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন প্রিয় ভাই জানালেন, হিযবুত তাহরীর থেকে তাঁর কাছে দাওয়াত এসেছে। এক্ষেত্রে তাঁর কী করা উচিত?


হিজবুত তাহরীর বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ছিল এই পোস্টে, আমার খুবই প্রিয় একটা লেখা: Click This Link


ওই লেখার পর থেকে আলোচনা হোক। এক্ষেত্রে মাত্র তিনটা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

১. মানুষ হিসেবে দৃষ্টিভঙ্গি।
২. ধার্মিক/ধর্মানুসারী (এক্ষেত্রে মুসলিম) হিসেবে দৃষ্টিভঙ্গি।
৩. নাগরিক (এক্ষেত্রে বাংলাদেশি বাঙালি) হিসেবে দৃষ্টিভঙ্গি।

১. মানুষ হিসেবে দৃষ্টিভঙ্গি:

পৃথিবীতে দুই হাজারের বেশি ধর্ম ও মূল ধারার মতবাদ রয়েছে। এবং দশ হাজারের বেশি উপ-মতবাদ রয়েছে। যেমন, খ্রিস্টধর্মে প্রধান উপ-মতবাদ দেড়শ'রও বেশি। ইহুদি ধর্মে প্রধান উপমতবাদ সত্তরেরও বেশি। ইসলাম ধর্মে প্রধান উপমতবাদ সত্তরের অধিক। প্রধান উপমতবাদের প্রধান প্রধান শাখার সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি।

এই অযুত নিযুত অক্ষৌহিনী মতবাদের মধ্যে আমাদের মানুষ হিসেবে একটা ফিল্টার রয়েছে, যা দিয়ে সহজেই ছাঁকা যায়। আর তা হল, কোন্ মতটা একটা দেশ বা একটা অঞ্চলের সাধারণ মানুষের গণ-সহাবস্থানের বিপরীতে যায়? সেটা আমি গ্রহণ করব না। কারণ, আল্টিমেটলি মানুষে মানুষে সহাবস্থানটাই মূল কথা। ধর্ম যার যার, যে যারটার জবাব দিবে। কিন্তু ধর্মকেন্দ্রীক বা মতকেন্দ্রীক কোন কিছু যদি বিশাল সংখ্যক মানুষের অস্বস্তির কারণ হয়, তা যদি সন্ত্রাসবাদের দিকে গিয়ে থাকে, তার সমর্থন যদি অত্যল্প কিছু মানুষের মধ্যে থেকে থাকে- মানুষ হিসাবে বিল্ট ইন ফিল্টার আমাদের জানায়, এই ধরনের মত শেষ পর্যন্ত পরিবর্তনের বদলে চরম অস্থিতিশীলতা আনে।

২. ধার্মিক/ধর্মানুসারী (এক্ষেত্রে মুসলিম) হিসেবে দৃষ্টিভঙ্গি:

ইসলামের অণ্তত ৭৩ টি মতভেদ রয়েছে। যার সব কখনোই শুদ্ধ নয়, বরং বুখারী ও মুসলিম সহ অগুণতি সহিহ হাদীস অনুসারে, ৭২ টি মত এতই পথভ্রষ্ট যে, তা জাহান্নামের দিকে আমাদের ধাবিত করবে। আমাদেরকে জাহান্নামি করবে।

এছাড়াও, ইসলামে এই ৭৩ মতভেদের মধ্যে অন্তত ৪,০০০ উপমতভেদ আছে।

উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট করা যায়। শিয়া মতের মধ্যে জায়িদি শিয়া, আশারিয়া ইমামিয়া শিয়া, ইসনা আশারিয়া ইমামিয়া শিয়া, ইসমাঈলী, জাফরী, নিজারি, মুস্তালি, সপ্ত-অনুসারী, তাইয়্যিবি, দ্রুজ, উসুলি, মুশতালিয়া, নিজারিয়া ইত্যাদি অসংখ্য উপমত রয়েছে।

ওয়াহাবি (ইবনে তাইমিয়ার কট্টর বাণীগুলোর অনুসারী) মতবাদের মধ্যে:
* সৌদি সালাফি (সৌদি আরবের ২২.৯% যারা নিজেদের ওয়াহাবি পরিচয় অপছন্দ করে এবং এই মতবাদ সারা বিশ্বে প্রচার করে। সৌদি সালাফি মতবাদ হল ক্ল্যাসিক ওয়াহাবি মতবাদের সাথে ১৯৬০ পরবর্তীতে সংমিশ্রিত একটা ধারা যার আক্বিদা ওয়াহাবি কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্নতর। সৌদি সালাফির মধ্যে "আক্ষরিক-বাদী", "কট্টর" এবং "শোধনবাদী" এই তিনটা ধারা প্রচলিত। যেমন, মাদখালিজম। সালাফিদের মধ্যে একটা প্রবল শক্তি হল সালাফি-জিহাদি যারা প্রতিটা কাজের মধ্যে জিহাদ দেখে ও করে। )
* আহলে হাদীস (সৌদি আরবের বিশাল সংখ্যক মানুষ যারা নিজেদের ওয়াহাবি পরিচয় অপছন্দ করে না),
* জামাতে ইসলাম (ক্ল্যাসিক্যাল ওয়াহাবিজমের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা একটা মতবাদ যার সাথে পুরনো ওয়াহাবিজমের দ্বন্দ্ব হওয়ায় সালাফি ও আহলে হাদীসরা এদের কিছু বিষয় গ্রহণ করে না)
* কুতুববাদী (মিসরের নিহত সালাফি নেতা কুতুব ও তার মতবাদ অন্য সব ওয়াহাবি/সালাফি মতবাদের সাথে মিললেও তা সম্পূর্ণ মেলে না)
* মুসলিম ব্রাদারহুড/ইখওয়ানুল মুসলিমিন/হাসানুল বান্নার দল/হামাস: মুসলিম ব্রাদারহুড সালাফি। কিন্তুর এর কার্যপদ্ধতি অন্যান্য সালাফি মতধারার সাথে মেলে না। মুসলিম ব্রাদারহুডের অ্যাবাউট পেইজে তাদের পরিচয় সালাফি হিসাবে নিবন্ধিত রয়েছে।
* হিজবুত তাহরীর: হিজবুত তাহরীর সালাফি হলেও তা মূলধারার সালাফির পূর্ণ সমর্থন না পাবার কারণ হল, আক্বিদা। হিজবুত তাহরীরের আক্বিদা সালাফি আক্বিদা থেকেও ভয়ানক। তারা মুতাজিলা মতবাদ ও সালাফি মতবাদের সমন্বয়ে আক্বিদা সৃষ্টি করেছে।
* সালাফি/ওয়াহাবি জিহাদিস্ট: আইএস, আল কায়েদা ও তালেবান পৃথিবীর সবচে উল্লেখযোগ্য তিন ওয়াহাবি জঙ্গি গোষ্ঠী। এই তিন জঙ্গি মতবাদের মধ্যে আক্বিদায় আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে যদিও তিনটিই ইবনে তাইমিয়ার নব্য মতবাদ থেকে উৎসরিত। এমন অগুণতি জিহাদি গ্রুপ রয়েছে যারা প্রায় সবাই সালাফি/ওয়াহাবি থেকে এলেও এদের আক্বিদা তথা ঈমানে পর্যন্ত কিছুটা ফারাক।

এবং এই কালো দরজা উন্মুক্ত হবে, যখনি আমরা অ্যাওয়েকেনিং, পিস টিভি বা হিজবুত তাহরীর ধরনের কোন বাহ্যিকভাবে নরম প্রচারমুখী সঙ্গঠনের সাথে যুক্ত হব বা এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হব। কারণ, বহু জামাতি-হিজবুতি-ওয়াহাবি-আহলে হাদীস অনুসারীকে দেখেছি, একের পর এক মতবাদে সুইচ করতে। মূল বিষয়টা হল, ওয়াহাবিজম। একবার এই ঘরানায় ঢুকে গেলে আবর্ত তা ঘিরেই হবে। এবং জিহাদিস্ট মতবাদধারীদের সমর্থক এভাবেই বাড়ছে।

তেমনি, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্ বা আহলে সুন্নাতের মধ্যেও উপদলের কোন অভাব নেই। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এই সমস্ত মতভেদের মধ্যেও আক্বিদার (ঈমানের মৌল ভিত্তি) মিল অত্যন্ত প্রকট। যেমন, সকল শিয়াদের আক্বিদার একটা বেসিক মিল রয়েছে এবং সকল ওয়াহাবি মতবাদেরও আক্বিদার একটা বেসিক মিল রয়েছে।

মাজহাবের দৃষ্টিভঙ্গিতে: বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে হানাফি, শাফিয়ি, হাম্বলি এবং মালিকি যারা পরস্পরের পূর্ণ সঠিকত্বের স্বীকৃতি দেন অর্থাৎ যেখানে কোন মতভেদ নেই।

তরিক্বাহ'র দৃষ্টিভঙ্গিতে: ক্বাদিরি, চিশতি, নক্সবন্দী, মুজাদ্দিদি সহ ৪৬ টি তরিক্বাহ সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করলেও বিশ্বাস-ব্যবস্থা একই থাকায় এখানেও মৌলিক মতভেদ নেই।

এই পরিমাণ মতের ধারা ইসলামে থাকার কারণ মাত্র একটা। প্রত্যেক মানুষ যেন গভীর অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়ে সরল পথের উপর চালিত হতে পারে।

আল্লাহর রাসূল দ. বলেছেন, আমার উম্মাহর বেশিরভাগ কখনো ভুলের উপর ঐক্যমত্য প্রকাশ করবে না।
এটা বারংবার প্রমাণিত সহীহ্ হাদীস।

পৃথিবীতে সর্বমোট মুসলিম জনসংখ্যার ৬০% এরও বেশি চার মাজহাবের অন্তর্গত। এবং চার মাজহাব পরস্পরকে স্বীকৃতি দেয়। এবং এই অবস্থা চলছে আজ তেরশো বছর ধরে। অর্থাৎ তেরশ'রও বেশি বছর যাবৎ পৃথিবীর সকল মুসলিমের অধিকাংশ মাজহাব অনুসারী।

তাই কোন না কোন মাজহাব পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ করাই শুধু এই একটি প্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে সঠিক। অথচ আরো বহু যৌক্তিক প্রমাণ রয়েছে।

মাজহাবসমূহের মধ্যে পৃথিবীর ২৭-৩৫% মুসলিমই অনুসরণ করেন হানাফি মাজহাব। আর বাংলাদেশের লিস্টেড মুসলিমদের মধ্যেও ৯০% এর অধিক অনুসরণ করেন হানাফি মাজহাব। তাই মত অনুসরণের সহজ সমাধান আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে।

হিজবুত তাহরীর, যা ৩০ টির বেশি দেশে সামরিক অভুত্থান করার চেষ্টা করেছে, একটাতেও আজ পর্যন্ত সফল হয়নি, পৃথিবীর বেশিরভাগ মুসলিম দেশে যা নিষিদ্ধ- তা কী করে বেশিরভাগ উম্মাহর প্রতিনিধিত্ব করে আর কী করেই বা তা সফল হতে পারে?

এই হানাফি মত অনুসরণ করেই আমরা হাজারো বছর ধরে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মোঙ্গলয়েড-ককেশিয়ান-কালো সাদা মিলে মিশে থাকছি। না মন্দির ধ্বসাতে হয়েছে, না মসজিদ পোড়াতে হয়েছে। আবেগি মানুষের দ্বারা ধর্মভিত্তিক রায়ট হয়েছে- কিন্তু সংগঠিত সন্ত্রাসবাদ কখনো হয়নি। চিরায়ত ইসলামের সবচে সহনশীল ইন্টারপ্রিটেশন হাতের কাছে থাকতে যদি চরমপন্থী ও রিঅ্যাক্টিভ কোন মত আমরা গ্রহণ করতে শুরু করি, এর জবাব শুধু ব্যক্তি আমাদের দিতে হবে না, বরং পরিবার-দেশ-সমাজ নিয়ে এর ফল ভুগতে হবে। যেমন চরমপন্থীদের জন্য একাত্তরে আমাদের ভুগতে হয়েছিল।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×