সাইফুস সাকিল কিতাবের ১৫৬ পৃষ্ঠায় আল্লামা কাওসারী বলেন, আবদুস সালাম ইবনে তায়মিয়া ওহাবী ফেরকার মহাগুরু ও একজন ধর্ম নাস্তিক ইমাম হিসেবে প্রসিদ্ধি ছিল । তার নীতিমালায় ছিল যে, আম্বিয়া, আওলিয়া ও শহীদগণের মাজার শরীফ জিয়ারত করা হারাম ও নাজায়েজ এবং মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করাও হারাম । ধর্ম নাস্তিক ইমাম আরো বলে, যদি কোন ব্যক্তি মাজার শরীফ জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে কোথায় ভ্রমণরত হয় তাহলে পথে নামাজও কছর করতে হবেনা । কারণ তার মতে ঐ ভ্রমণ পাপ কামাবার জন্য পাপের সফর । ইবনে তায়মিয়া দামেশকে বসে একটি ফতোয়ার মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিল যে, কেহ যদি মহান প্রিয়নবীর রওজা শরীফ জিয়ারত করার উপলক্ষে সফর সূচী গ্রহণ করল সে যেন একটি বড় পাপে লিপ্ত হল । পাপ কাজের সফরে নামাজ কসর করতে হবে না । ইবনে তায়মিয়া তার ফতোয়া খানাতে এই কথাও ঊল্লেখ করে যে, যারা বলে মহান প্রিয়নবীর রওজা শরীফে রাতের পর রাত, দিনের পর দিন লক্ষ্য লক্ষ্য ফেরেশতা রওজা শরীফ জিয়ারত করছেন, তারা মিথ্যা বলে । আর যদি উহা সত্য হয় তবে ফেরেশতাগণও পাপ কার্যে লিপ্ত হচ্ছে ।
ইবনে তায়মিয়ার উল্লেখিত ধর্ম কুৎসা সম্বলিত ফতোয়াখানা ঘোষিত হওয়ার পর মিশর, শ্যাম, বাগদাদ ও দামেশকের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্তরে আঘাত লাগে । বিশেষ করে শ্যামদেশীয় মুসলমানগণ ইবনে তায়মিয়ার ফতোয়ার প্রতিবাদ করেন । এ নাস্তিক ইমামের উক্ত কুফুরী ফতোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে শরীয়ত সম্মত কি সাজা দিতে হবে সে সম্বন্ধে ওলামায়ে কেরাম হতে ফতোয়া তলব করা হয় ।
আল্লামা বোরহান বিন ফারকাহ ফজারী ও আল্লামা শিহাব বিন জাবহাল উভয় ধর্মীয় মুফতী সাহেবান কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক একটি ৪০ পৃষ্ঠার ফতোয়া রচনা করেন । সে ফতোয়াতে ইবনে তায়মিয়াকে কাফের ও ধর্মচ্যুত বলে ফতোয়া প্রদান করেন । আবার সেই রচিত ফতোয়াখানাকে হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবীয় কাজীগণের সমীপে পেশ করা হয় ।
১ । কাজী বদর বিন জামহা, যিনি শাফেয়ী মাযহাবের সরকারী কাজী ছিলেন । তিনি ঘোষণা করেন যে, ইবনে তায়মিয়াকে এরূপ মিথ্যা ও ভ্রান্ত ফতোয়া দেয়া হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হউক । সে এই আদেশের বরখেলাপ করলে তাকে গ্রেফতার করে পিটুনীর নির্দেশ প্রদান করেন ।
২ । কাজী মোহাম্মদ বিন জারিরী, যিনি হানাফী মাযহাবের কাজী নিযুক্ত ছিলেন । তিনি ঘোষণা দেন যে, ইবনে তায়মিয়াকে বিনা শর্তে গ্রেফতার করে কতল করা হউক । কারণ ধর্ম কুৎসাকারী ধর্মচ্যুতেরই শামিল ।
৩ । কাজী মোহাম্মদ বিন আবুবকর যিনি মালেকী মাযহাবের ইমাম ও কাজী নিযুক্ত ছিলেন । তিনি বলেন, ইবনে তায়মিয়াকে এরূপ ভ্রান্ত ফতোয়া দেয়া হতে বিরত রাখা হউক ।
৪ । কাজী আহাম্মদ বনি ওমর মাকদাসী যিনি হাম্বলী মাযহাবের কাজী নিযুক্ত ছিলেন । তিনি বলেন, ইবনে তায়মিয়াকে সাধারণ শাস্তি দেয়া হউক ।
উল্লেখিত চার জন বিচারকের রায়ের মধ্যে হানাফী মাযহাবের বিচারকের রায়কে প্রাধান্য দেয়া হয় । প্রাধান্য রায়কে কার্যকরী করার জন্য ইবনে তায়মিয়াকে “দামেশক” হতে গ্রেফতার করা হয় । তৎকালে দামেশক শহরে কোন কারাগার না থাকার কারণে তাকে ৭২৭ হিজরী শাবান মাসে দামেশকের কিল্লাতে বন্ধি করা হয় । সে বন্ধি অবস্থায় ৭২৭ হিজরী জিলকদ মাসের ২০ তারিখে মৃত্যুমুখে পতিত হয় । মৃত্যুকালে ইবনে তাইমিয়ার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর । তার জন্ম ছিল ৬৫২ হিজরীতে । তার জন্ম স্থানের নাম “হাররান” ।
ইবনে কায়্যুমে জুজীও ইবনে তায়মিয়ার অনুরূপ ধর্ম নাস্তিক ছিল । এই নাস্তিকতার কারণে তাকেও দামেশকের কিল্লাতে বন্ধী করা হয়েছিল । উক্ত তথাকথিত দু’ইমাম এক পথের পথিক ছিল ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৯