৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ তারিখে বাদুড় বাগান লেনের বাসায় গিয়ে অন্যতম নজরুল জীবনীকার আজহার উদ্দিন খান যে অবস্থায় কবিকে দেখেন তা সংক্ষিপ্তাকারে মোটামোটি এই রকমঃ
কবি পত্নী খাটে শায়িত । তাঁর পালিত মেয়েটি কাপড় সেলাই ক'রছেন । কবির চতুর্থ ও সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র কাজী অনিরুদ্ধ ইসলাম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একটি পত্রিকার পাতা একটার পর একটা উল্টে দেখছেন । জানলেন : কবির স্ত্রী পাশ ফিরতেও সক্ষম নন । নিম্নাঙ্গ পক্ষাঘাতে সম্পূর্ণ অচল । অতি কষ্টে চিঠি পত্রের জবাব লেখেন ।
পালিতা কন্যা উঠে গিয়ে পাশের ঘরের কপাট খুলে দিলেন । কবি বেরিয়ে এলেন । পরনে একটা লুঙ্গি ও ধূসর বর্ণের হাফ শার্ট । মুখে একটা তীব্র উত্তেজনার ভাব ফুটে বেরুচ্ছে । সেই বিদ্রোহী প্রাণশক্তির ছাপ কেবল অস্তরাগের বিলিয়মান আভার মতো মুখে খেলা ক'রছে । দরজার পাশেই আসন পাতা । চারিদিকে বিভ্রান্ত'র মতো তাকিয়ে সেখানে ব'সে পড়লেন তিনি ।
পাশেই পুরানো মাসিক, সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো ছেঁড়া অবস্থায় গুছানো রয়েছে । সেগুলোর পাতা একটার পর একটা উল্টে হ'লেছেন কবি । পড়েন না । কপাট খুলে দেওয়া হয় কিংবা কখনো নিজে কপাট খুলে ঐ জায়গায় ব'সে বই । পত্রগুলো ওল্টাতে থাকেন । খাওয়া দাওয়া সম্বন্ধে উদাসীন । খাইয়ে দিলে খান ।
জিভে আঙুল দিয়ে পাতা উল্টে হ'লেছেন কী যেন একটা জরুরী জিনিষ খুঁজছেন ।
আজহার উদ্দিন খান চাইলেন যেন তাঁর খাতায় কবি নিজের নামটা লিখে দেন । কাজী অনিরুদ্ধ ইসলাম তখন খাতা আর কলমটা এগিয়ে দিয়ে তাঁর আব্বাকে কাজী নজরুল ইসলাম, এই নাম পুরো দস্তখত ক'রতে ব'ললেন । কবি তাঁর পুরো নাম লিখে দিলেন ।
ধারণা করার অনেক কারণ আছে যে, কবিকে স্তব্দ ও নীরব ক'রে দেওয়ার একটা গভীর ষড়যন্ত্র হ'য়েছিল । কবিকে শারীরিকভাবে জখম করা হ'য়েছিল । ঘটনার তিন দশকেরও অনেক পর কবির ঘাড়ে প্রচন্ড আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেছে । পরবর্তীকালে ঢাকায় বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের ফাইন্ডিংস -এ এ কথাই বলা হয় ।
সূত্রঃ নবযুগ ও নজরুল জীবনের শেষ পর্যায়-২৮৭
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:২৫