somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্যাসিবাদি স্বৈর দস্যু রাষ্ট্রের গহ্বর থেকে উদ্ধার ও মুক্তির পরিক্রমা—২

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ষোল শতকে ইতালীর নিকোলো মেকিয়াভেলি প্রথম ভৌগলিক-ভাষা-বর্ণ-লিঙ্গ তথা বস্ত ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের রাষ্ট্র গঠনের মন্ত্র গঠন করে ।


পরবর্তীতে ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটে ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের পর । ফরাসী বিপ্লবের পরই ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ অপরাজনীতির হাতিয়ার এবং মতবাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । ক্রমে তা আমেরিকা, ইউরোপ এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ।


নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট সাম্প্রাজ্যবাদের হাতিয়ার হিসেবে ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে ইস্যু করে অষ্টিয়া, জার্মান ও স্পেনের ক্ষমতা দখল করলে, এর তীব্র প্রতিক্রীয়া স্বরূপ ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের চেতনার জাগরণ শুরু হয় । এতে ইন্ধন জোগায় রোমান্টিক আন্দোলন । ম্যাটাসনি ও ফিকটের রচনা ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভাবধারাকে নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করে ।


জনৈক ইতালীর দেশপ্রেমিক ম্যাটাসনিক প্রচার করে, একই ঐতিহ্য ও বিধি ব্যবস্থা দ্বারা ইতালীয়ানরা ঐক্যবদ্ধ জাতি । ফিকট প্রচার করে জার্মানিরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি ।

অষ্টাদশ শতকের ফ্রান্স-ব্রিটেনের যুদ্ধ, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ইউরোপের দেশগুলোর জোটবদ্ধ আক্রমণ হত্যা লুন্ঠন ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সৃষ্ট করুন ও নিকৃষ্ট সভ্যতার মুখোমুখি করেছে ।


সে কারণে ধর্ম বিরোধী বারট্রান্ড রাসেল বলেন: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ হলো আমাদের সময়ের সবচেয়ে অশুভ শক্তি, মাতলামি, মাদক সেবন, বাণিজ্যে অসাধুতা কিংবা অন্য যেকোন অকল্যাণের চেয়ে ক্ষতিকর ।

কে.এইচ.হায়েস বলেন: ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ জাতীয়তা এবং এই দুইটি আধুনিক অনাসক্ত বিষয়ের এক আবেগপূর্ণ সমন্বয় ও অতি রঞ্জিত বরণ ।

লর্ত ব্রাইস বলেন: ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ হচ্ছে ভাষা-সাহিত্য-ধ্যান-ধারণা ও ঐতিহ্যের দ্বারা ঐক্যবদ্ধ একটি জনসমষ্টিকে নিজেদের পৃথক মনে করে ।

আল্লামা ইকবাল (রহঃ) রাষ্ট্র দর্শনের প্রাথমিক পর্যায়ে, নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির মতবাদে উদ্বুদ্ধ ছিলেন । তাই তিনি ‘তারানা-ই-হিন্দী’ কবিতায় ভূখণ্ড বা ভৌগলিক তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জয়গান গেয়েছেন। লিখেছেন: ‘সারে জাহাঁ হে আচ্ছা/হিন্দুস্তাঁ হামারা’, বলেছেন, ‘ভারতের ফুল বাগানে আমি এক বুলবুল ।

১৯০৪ সাল পর্যন্ত আল্লামা ইকবাল (রহঃ) ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় সীমারেখা-ভাষা-গোত্র ভিত্তিক তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রপঞ্চ বা প্রসঙ্গ নিয়ে যে চিন্তা-দর্শন আল্লামা ইকবাল (রহঃ) উপস্থাপন করেছেন, জীবনের অবশিষ্ট সময়ে তিনি তা প্রত্যাখান করেছেন । এ জন্য আল্লামা ইকবাল (রহঃ) এর ইউরোপ জীবন (১৯০৫-১৯০৮) তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে বলে দাবি করা হয় । দাবি করা হয় লন্ডন, ক্যামব্রিজ, মিউনিখ এবং ইউরোপের বিভিন্ন শহরে অবস্থানকালে আল্লামা ইকবাল (রহঃ) পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক মতবাদ ভেতর থেকে দেখার ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছিলেন । এই পর্যবেক্ষণ ও সুযোগ আল্লামা ইকবাল (রহঃ) নিকোলো মেকিয়াভেলির ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয়-ভাষা-বর্ণ-লিঙ্গ-গোত্র তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যা ও অনুশীলন এবং এর ভয়াবহ পরিনাম বিষয়ে সচেতন করেছে । ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয়-ভাষা-বর্ণ-লিঙ্গ-গোত্র তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ মানবতার জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দেয় । এসব বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ মানুষের জন্য অমানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে । বিপরীতে ঈমানী জাতীয়তাবোধ মানবতার জন্য আর্শীবাদ এবং মানুষ "মানুষ" হিসেবে স্বীকৃতি পায় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৯) সূত্রে প্রচলিত ভৌগলিগ বা রাষ্ট্রীয়-ভাষা-বর্ণ-লিঙ্গ-গোত্র তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের মর্মান্তিক মাশুল আল্লামা ইকবাল (রহঃ) দেখেছেন । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) সৃষ্ট মানবিক বিপর্যের আশঙ্কা করেছিলেন আল্লামা ইকবাল (রহঃ) । "সাম্রাজ্যবাদের দানব" এ বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি ।
আল্লামা ইকবাল (রহঃ) নির্দিষ্টভাবেই উচ্চারণ করলেন, ‘জাতীয়তা' ভৌগলিক সীমারেখা বা দেশ ও ভাষার ভিত্তিতে হয় না,’ ভূখণ্ডভিত্তিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ বিষয়ে আল্লামা ইকবাল (রহঃ) লিখলেন: ‘হে অঞ্চল-পূজারী,/ এরা হিন্দী আর ওরা খোরাসানী,/এরা আফগানী আর ওরা তুরানী-/বাদ দাও এসব, ছড়িয়ে পড়ো সারাবিশ্বে/সাগর তরঙ্গময়।’ লিখলেন: ‘এক জাতি যে আরেক জাতির দুশমন-তার মূলতো এই,/ দেশ দখল নেশাও আসে এই স্বদেশের প্রেম থেকেই।/রাষ্ট্র থেকে ধর্ম যে আজ পৃথক তারও এই কারণ/এতেই করে সরলরা ভাই দুর্বলদের আক্রমণ।

ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয়-ভাষা-বর্ণ-লিঙ্গ তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সেই বিষক্রীয়ার ফলে মানবসত্ত্বা ও মানবসভ্যতা ধ্বংসের মুখে । উদাহরণ: ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সম্মিলিত স্বৈর পরাশক্তির গহ্বরে নিমজ্জিত ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর এবং পরিশেষে মায়ানমার সেই একই আগ্রাসনের স্বীকার । এতে মানবমন্ডলী ও মানবসভ্যতা অসহায় স্বৈর অপকাঠামোয় বন্দী । মানবমন্ডলী চাইলেও স্বাধীনতা অধিকার মর্যাদা নিরাপত্তা ফিরে পাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মানবতার রাষ্ট্র ও বিশ্ব ব্যবস্থা কায়েম না হয় ।

ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত কার্যকরী শাখা ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ । মানবত্মা ও মানবজীবন বিনাশী বস্তুবাদী স্বৈর অপশক্তির গহ্বর থেকে উদ্ধার ও মুক্তির কালজয়ী সময়-উপযোগী দিশা ও দর্শন প্রবর্তন করেন মহামান্য ইমাম হায়াত । বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের দিশায় ।

মানুষ ও মানবতার মুক্তি সাধনায় এবং স্বৈর ফ্যাসিবাদের গহ্বর থেকে পরিত্রাণের উপায় দান করেন । যাহা রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বয়িকভাবে খেলাফতে ইনসানিয়াত । এই খেলাফতে ইনসানিয়াতই, স্বৈর ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনে খন্ড-বিখন্ড মানবমন্ডলী ও মানবসভ্যতা বিনাশী ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় তথা বস্তু ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের অবসান অনিবার্য । কারণ খেলাফতে ইনসানিয়াত বিশ্বাস করে প্রাকৃতিক দুনিয়া প্রাকৃতিকভাবেই থাকা অনস্বীকার্য । প্রাকৃতিক দুনিয়াকে পেশীবাদি ভৌগলিক বা রাষ্ট্রীয় স্বৈর অপশক্তির উন্মেশ হওয়াতে অখন্ড মানবতা মুক্ত বিশ্বের দুনিয়া আর থাকে নাই ।

যার ফলে মানব ও মানবতার হাহাকার আর্তনাদ বিপর্যয় খুন-খারাপী দারিদ্রতা বৈষম্য বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি দীর্ঘায়িত হচ্ছে । এইধারা চলমান থাকলে বিশ্বসভ্যতা ধ্বংস অনিবার্য । অনিবার্য ধ্বংসের গহ্বর থেকে উদ্ধার ও মুক্তির অবিকল্প পথ বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব ।

বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব পার্টি এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য স্বৈর ফ্যাসিবাদের গহ্বর থেকে অখন্ড মানবতার মুক্ত বিশ্বের নতুন দুনিয়া গড়া । কারণ দুনিয়া সকলের, সকল মানুষের প্রাকৃতিক দুনিয়া । দেশ ও দুনিয়া একক কোন ধর্মের, মতবাদের, শ্রেণীর, বর্ণের নয় । দেশ ও দুনিয়া সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন সমমর্যাদাপূর্ণ কল্যাণকর রাষ্ট্র ও বিশ্ব ব্যবস্থা বিনির্মাণ করা ।
(লেখাটি অসমাপ্ত, অসংশোধিত, অসম্পাদিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:০৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×