somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাকাত: ধনীর দায়, গরিবের হক

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জাকাত: ধনীর দায়, গরিবের হক

মো. রহমত উল্লাহ

আল্লাহ তায়ালা যাকে সম্পদ দিয়েছেন, তার ওপর জাকাত ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি মালদার হওয়া সত্ত্বেও জাকাত পরিশোধ করে না, পরকালে তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। হাদিস অনুযায়ী- যার কাছে রুপা বা স্বর্ণ আছে, অথচ সে জাকাত দেয়নি, কিয়ামতের দিন ওই রুপা বা স্বর্ণকে তামার পাতে পরিণত করে দোজখের আগুনে দগ্ধ করে বুকে-পিঠে, পাঁজরে-কপালে ছ্যাঁকা দেওয়া হবে। অন্য হাদিসে আছে- যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ধনসম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে জাকাত দেয়নি, কিয়ামতের দিন ওই ধনসম্পদ বিষাক্ত সাপ হয়ে তাকে গলায় পেঁচিয়ে ধরবে এবং দুই গালে দংশন করবে। ইসলাম ধর্মের এই বিধানটি সমাজের দরিদ্র শ্রেণীকে ধনীর সম্পদের অংশীদার করেছে। ধনী ও দরিদ্রের আর্থিক ব্যবধান কমাতে সহায়তা করে এই জাকাত ব্যবস্থা। আমরা অনেকেই জাকাতের মাসয়ালা সঠিকভাবে জানি না কিংবা জানতে চাই না। জাকাত না দেওয়ার বা কম দেওয়ার জন্য ফাঁকফোকর খুঁজতে গেলেই বিষয়টি জটিল। নিয়ত সহিহ থাকলে বুঝতে এবং মানতে কোনো জটিলতা নেই। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, মাসয়ালা-মাসায়েলের ফাঁকফোকর খুঁজে-বেছে জাকাত পরিশোধ করতে গিয়ে বিন্দুমাত্র কম পরিশোধিত হলে অসীম পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। তাই সহজ-সরল হিসাবে কিছু বেশি অর্থ পরিশোধ করাই সর্বোত্তম। এতে শতভাগ জাকাত প্রদান নিশ্চিত হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের জন্য আল্লাহ তায়ালা অতিরিক্ত নেকি দান করবেন। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মানুষের অন্তর বোঝেন।

ইসলাম ধর্মের অনুসারী ধনী ব্যক্তির জন্য শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত প্রদানের বিধান করা হয়েছে। অর্থাৎ মালদারের প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে আড়াই টাকা গরিবের। এটি ধনীর দায় এবং গরিবের হক। প্রশ্ন হচ্ছে, কী পরিমাণ ধনসম্পদের অধিকারী হলে জাকাত ফরজ হবে? যে ব্যক্তি সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের কিংবা তৎমূল্যের টাকা বা ধনসম্পদের মালিক হয় এবং তার কাছে ওই পরিমাণ টাকা বা ধনসম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী থাকে, সেই ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ হয়। এর চেয়ে কম হলে জাকাত ফরজ হয় না। তবে বেশি হলে অবশ্যই ফরজ হবে। জাকাতযোগ্য এই ধনসম্পদের পরিমাণকে নিসাব বলা হয় এবং যে ব্যক্তি (প্রাপ্তবয়স্ক-অপ্রাপ্ত বয়স্ক, নারী-পুরুষ) জাকাতযোগ্য ধনসম্পদের মালিক হয়, তাকে মালিকে নিসাব বা সাহেবে নিসাব বলা হয়। আমাদের সমাজের অনেকেই মনে করেন, যেহেতু আমার কাছে সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ নেই, সেহেতু (অন্য ধনসম্পদ যতই থাকুক) আমাকে জাকাত দিতে হবে না। আসলে এটা সঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে রুপা বা স্বর্ণ থাকা বা না থাকা কোনো বিষয় নয়। রুপা বা স্বর্ণের পরিবর্তে জাকাতযোগ্য অন্য ধনসম্পদ থাকলেও জাকাত প্রদান ফরজ হবে। রুপা বা স্বর্ণ হচ্ছে নিসাবের পরিমাণ নির্ধারণের একটি মাধ্যম মাত্র। এক বিন্দু রুপা বা স্বর্ণ না থাকলেও ওই ব্যক্তির জন্য জাকাত প্রদান ফরজ হবে, যার মালিকানায় নিসাব পরিমাণ কিংবা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ জাকাতযোগ্য সম্পদ জাকাতবর্ষ-এর শুরুতে ও শেষে থাকে। এ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে মালিকে নিসাব এবং জাকাত প্রদেয় সময় চিহ্নিত করার জন্য তিনটি প্রধান বিষয় বিশেষভাবে বিবেচ্য। প্রথমত, নিসাবের পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যম হিসেবে রুপার মূল্য ধরা হবে, নাকি স্বর্ণের মূল্য ধরা হবে? দ্বিতীয়ত, নিসাবের পরিমাণ হিসাব করার সময় কোন কোন সম্পত্তি যোগ-বিয়োগ করতে হবে? তৃতীয়ত, কিভাবে জাকাতবর্ষ গণনা করা হবে?

১. নিসাবের পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যম হিসেবে রুপার মূল্য ধরাই অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ সাড়ে ৫২ তোলা রুপার বর্তমান মূল্য সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের চেয়ে অনেক বেশি। তাই মাধ্যম হিসেবে রুপার মূল্য ধরা হলে জাকাত প্রদানকারীর সংখ্যা ও জাকাতের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায় এবং গরিব মানুষ অধিক লাভবান হয়। ফলে আল্লাহ পাক যে উদ্দেশ্যে জাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন, তা অধিক কার্যকর হয়। আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ওপর অধিক খুশি হন। লক্ষণীয়, এই হাদিসে বারবারই আগে রুপা শব্দটি এবং পরে স্বর্ণ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। তথাপি কেউ যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মূল্যকেই নিসাবের পরিমাপ নির্ধারণের মানদণ্ড ধরে জাকাত দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে জোর আপত্তির সুযোগ নেই। যেকোনো একটিকে মানদণ্ড ধরে জাকাত প্রদান করা যাবে।

২. নিসাব পরিমাণ সম্পত্তি (জাকাতযোগ্য সম্পত্তি) হিসাব করার সময় যা কিছুর মূল্য যোগ এবং বিয়োগ হবে, তা হচ্ছে-

(ক) যোগ করতে হবে : নিজের মালিকানায় থাকা সব নগদ টাকা-পয়সা, লগি্নকৃত/বিনিয়োগকৃত টাকা-পয়সা এবং এর ওপর প্রাপ্ত লাভ, রুপা ও স্বর্ণের (ব্যবহৃত/অব্যবহৃত) বাজারমূল্য, ব্যবসায়িক পণ্য (অর্থাৎ বিক্রি করে লাভ করার নিয়তে ক্রয়কৃত সব ধরনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি), ভাড়ায় খাটানো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার টাকা, আদায় হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন পাওনাদি ইত্যাদি।

(খ) যোগ করতে হবে না : নিজেদের ব্যবহৃত বা ব্যবহারের নিয়তে ক্রয়কৃত সব ধরনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি (রুপা ও সোনা ব্যতীত), ভাড়ায় খাটানো সব ধরনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, বাবা-মা ও স্বামী-সন্তানের মালিকানায় থাকা সম্পত্তি (কারণ প্রত্যেকের হিসাব পৃথক হবে), আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন পাওনাদি ইত্যাদি।

(গ) বিয়োগ করতে হবে : সব ধরনের দায়দেনা।

৩. জাকাতবর্ষ হিসাব করার সময় বছরের শুরু এবং শেষ দেখতে হবে। ধরা যাক, কাদির মোল্লার মালিকানায় জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন নিসাব পরিমাণ ধনসম্পদ ছিল এবং তিনি ওই ধনসম্পদের জাকাত দিয়েছিলেন। তারপর যেকোনো কারণেই হোক, কয়েক মাস তার ধনসম্পদ নিসাব পরিমাণের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ডিসেম্বর মাসের শেষ দিনে আবার নিসাব পরিমাণ ধনসম্পদ তাঁর মালিকানায় এসেছে। এমতাবস্থায় ওই মালের ওপর শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত পরিশোধ করতে হবে। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর- এই ১২ মাসই হবে তাঁর জাকাতবর্ষ। জাকাত শুধু গরিব ব্যক্তির হক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন, আমরা যেন যথাযথভাবে জাকাত পরিশোধ করতে পারি, আমাদের নিয়ত যেন সহিহ্ থাকে, হৃদয় যেন গরিবদের পক্ষে থাকে।

মো. রহমত উল্লাহ
লেখক: অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ




০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×