somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাষ্ট্রীয়ভাবে করা প্রয়োজন যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোরের কাগজ : ১০/০৯/২০১৪
রাষ্ট্রীয়ভাবে করা প্রয়োজন যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা
মো. রহমত উল্লাহ্
স্বাধীনতার এতো বছর পরেও আমরা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারিনি। আসলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারিনি বলে আমরা সুফল পাইনি। অনৈক্যের ফাটলে হারিয়ে গেছে আমাদের অনেক অর্জন।

একটু পেছনে তাকালেই দেখা যায়, বাঙালি জাতির ইতিহাসে বাঙালি যখনই যতো বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখনই ততো বড় বিজয় অর্জন করেছে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬’র ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সবই ছিল আমাদের বজ্র কঠিন ঐক্যের সুফল।

অথচ আজ সেই মুক্তিযোদ্ধারা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ যোদ্ধারা বাঙালি, পাহাড়ি, বাংলাদেশী, গণতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রী, ভারতপন্থী, ভারতবিরোধী, চীনপন্থী, রুশপন্থী, আমেরিকাপন্থী, আমেরিকাবিরোধী, স্বজাতীয়, বিজাতীয় ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগে দ্বিধাবিভক্ত; আর সেই রাজাকাররা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা এখনো কঠিনভাবে একতাবদ্ধ পাকিস্তানপন্থী।

আমরা যখন বারবার সংশোধন করছি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, বিতর্কিত করছি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভ‚মিকা, খর্ব করছি আসল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমতা ও মর্যাদা; তখন তারা আসল আসল রাজাকারদের পুরস্কার দিচ্ছে তাদের দলের বড় বড় পদ এবং এ দেশের মন্ত্রিত্ব। দেশী-বিদেশী চাঁদার টাকায় দিচ্ছে নানান রকম আর্থিক সুবিধা।

এই অবস্থা চলতে থাকলে ধরে রাখা কঠিন হবে আমাদের বিজয়। তাই আমি মনে করি বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা আর সংশোধন করার চেয়ে রাজাকার-আলবদর-আলশামস তথা যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা তৈরি করা অধিক জরুরি।

১৯৭১ সালে যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন কেবলমাত্র তারাই মুক্তিযোদ্ধা নন। বরং যে সকল মা, বোন, বধূ, আবালবৃদ্ধবনিতা তাদের আপনজন তথা মুক্তিযোদ্ধাদের হারিয়ে বিরহের আগুনে পুড়েছেন তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা এ দেশের মাটি ও মানুষের মুক্তির জন্য যুগে যুগে আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন তারও মুক্তিযোদ্ধা। যে সকল কবি লেখক সাংবাদিক সাহিত্যিক আমাদের পক্ষে কলম ধরেছেন তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা গান গেয়ে শাণিত করেছেন আমাদের চেতনা তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা বিশ্বজনমত তৈরি করেছেন আমাদের মুক্তির পক্ষে তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন, ঐক্যবদ্ধ করেছন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন, ট্রেনিং দিয়েছেন, অস্ত্র দিয়েছেন তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা মুক্তিসেনাদের আশ্রয় দিয়েছেন, সেবা দিয়েছেন, চিকিৎসা দিয়েছেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যে সকল মা- বোন-বধূ জীবন-সম্ভ্রম সব হারিয়েও মুখ খুলে বলেননি কোথায় আছে আমাদের মুক্তিসেনাদের আস্তানা, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানি হানাদারদের ভয়ে সেদিন চেপে রাখা হয়েছিল যে অবুঝ শিশুটির বুক ফাটা কান্না, সেও তো মুক্তিসেনা। ‘রাজাকার’, ‘রাজাকার’ বলে যে ময়না পাখিটি জানান দিয়েছে আসন্ন বিপদের কথা, সে কী? তারা কি আসবে না মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়?

১৯৭১ সালে অনেকেই স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাংলার মাটি ও মানুষকে পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করে জয়পতাকা ছিনিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয়ে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান বুকে মুখে ধারণ করে নিজের জীবন বাজি রেখে সেচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন এ কথা যেমন সঠিক; তেমনি সঠিক এই কথা যে, অনেকেই তখন অনেক কারণে মিশে গিয়েছিল মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে। কেউ গিয়েছিল তথ্য পাচার করার জন্য, কেউ গিয়েছিল ভুল সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য, কেউ গিয়েছিল সম্পদ হাত করার জন্য। এমনো দেখা গেছে, এক ভাই মুক্তিবাহিনীতে আর এক ভাই রাজাকার বাহিনীতে গিয়েছে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে!

আমাদের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনী যুদ্ধে যোগদান করার পরে পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় হবে, হচ্ছে এমন সম্ভাবনা তৈরি হলে অনেক নীরব বিরোধীরাও শেষ সময়ে এসে যোগ দিয়েছিল মুক্তিসেনাদের দলে। আসলে যাদের চিন্তায়, চেতনায়, বাসনায় বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ছিল না, বুকের ভেতর ‘জয়বাংলা’ (বাংলা ভাষার জয়, বঙ্গদেশের জয়, বাঙালি জাতির জয়) স্লোগান ছিল না; তারা তো আসল মুক্তিযোদ্ধা নয়। তাদের নিয়ে কিভাবে সঠিক হবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা?

অপরদিকে আরো একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, অধিকাংশ মুক্তিসেনারা যুদ্ধ করেছেন নিজের এলাকার বাইরে গিয়ে। ফলে সকল মুক্তিসেনার সব রকম ভ‚মিকা সম্পর্কে নিজের এলাকার সাধারণ মানুষের ধারণা ততোটা পরিষ্কার নয়। অন্যদিকে অধিকাংশ রাজাকার- আলবদর-আলশামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীরা সক্রিয় ছিল নিজের এলাকায়। পরিচিতদের মধ্যেই বিস্তৃত ছিল তাদের অপকর্ম। ১৯৭১ সালে তারা সংখ্যায়ও ছিল কম।

ফলে তখনকার সকল সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে ভুক্তভোগীদের সুস্পষ্টই জানা আছে- কে রাজাকার, কে আলবদর, কে আলশামস। আসলে কোনো বিতর্ক নেই তাদের সেই জানা ও চেনার মধ্যে। তারা অনেকেই বেঁচে আছেন এখনো। বুকে ধারণ করে আছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ¯^জন হারানোর বেদনা। পুষে রেখেছেন নিজের ধন মান হারানোর ক্ষোভ। তাদের সহায়তায় এখনো তৈরি করা সম্ভব এলাকাভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সঠিক তালিকা। এবং সেই সঙ্গে ভিডিও করে রাখা সম্ভব তাদের সাক্ষাতকার। আর কিছুকাল পরে হয়তো বেঁচে থাকবেন না এ ক’জন সাক্ষিও। তেমন হলে চরমভাবে ব্যাহত হবে দেশের আনাচে-কানাচে অবস্থিত ছোট-বড় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের চিনতে ব্যর্থ হবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনই তৈরি করা প্রয়োজন প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের সঠিক তালিকা।

মো. রহমত উল্লাহ্: লেখক ও শিক্ষক।
ভোরের কাগজ: ১০/০৯/২০১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×