তোমাকে যদি হঠাৎ জিজ্ঞেস করি, আচ্ছা ১১৩-এর বর্গ জানি কত? তোমাদের অধিকাংশই মুখে মুখে বলতে পারবে না, আমি জানি। এ লেখাটা ভালো করে পড়লে হয়তো মুখে মুখেই এটা বলে দিতেপারবে। আগে কিছু কথা বলে নিই- সংখ্যা নি:সন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপারগুলোর একটি। আমার ক্লাস নাইন টেনের একটাবড় সময় চলে গেছে সংখ্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে। আর সেই সময়টা যে কী অসম্ভব সুন্দর কেটেছে, সেটা ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারব না। আমার খুব প্রিয় একটা কাজ ছিল মনে মনে সংখ্যার বর্গ করা। খুব দ্রুত পারতাম না। (আমি সাধঅরণ মানুষ, কোনো প্রডিজি না), তবে দুই ঘর হলে পারতাম। তোমাদের চলো শিখিয়ে দিই, মনে মনে কীভাবে বর্গ করতে হয়।
আগে ভালো করে এই প্যাটার্ণগুলো দেখো। গণিত শিখতে হলে আগে দেখতে শিখতে হয়। গভীরভাবে দেখতে হবে। হৃদয়ের সব জানালা খুলে দাও, আলো আুক, বাতাস আসুক- যদি কোনো দু:সংবাদ আসতে চায়, তাকেও আসতে দাও...সবকিছু আসুক....ভুলটাকে পরে ফেলে দেওয়া যাবে...
ঠিক আছে, তাহলে প্যাটার্ণগুলো দেখো....
১১ এর বর্গ = ১২১
১০১ এর বর্গ = ১০২০১
১০০১ এর বর্গ = ১০০২০০১
১০০০১ এর বর্গ = ১০০০২০০০১
আশা করি, এখন আমি যদি জিজ্ঞেস করি, বলো তো, ১ (এর পর ১ কোটিটা শূন্য) ১, এই বিরাট সংখ্যাটাকে বর্গ করলে কত হয়, তুমি নিশ্চয়ই পারবে। এটার উত্তর হবে ১ (তারপর ১ কোটিটা শূন্য) ২ (এরপর ১ কোটিটা শূন্য) ১।
আবার লক্ষ করো,
১০১ এর বর্গ = ১ ০২ ০১
১০২ এর বর্গ = ১ ০৪ ০৪
১০৩ এর বর্গ = ১ ০৬ ০৯
১০৪ এর বর্গ = ১ ০৮ ১৬
এটুকু দেখা হলে একটি থামো। ভালো করে আবার দেখো। মূল সংখ্যাটার দিকে একবার তাকাও, আর এর বর্গের দিকে একবারতাকাও, দেখো কোনো মিল খুঁজে পাও কি না?
একটু তাকালেই দেখবে আমার মূল সংখ্যাগুলো সব শুরু হয়েছে ১ দিয়ে আর তাপর দুটি ঘর আছে। বর্গটাতে শুরুতেই আছে ১। এরপরদুটি দুটি করে ঘর রেখেছি। তাকিয়ে দেখো, প্রথম দুই ঘরেআছে দ্বিগুণ আর শেষদুই ঘরে আছে বর্গ। যেমন: ১০৪ এর ক্ষেত্রে প্রথমে ১ এর পর দুটি দুটি করে ঘর রেখেছি....
১ .. ...
এরপর প্রথম দুই ঘরে বসিয়েছি ০৪-এর দ্বিগুণ ০৮
১০৮...
আর শেষ দুই ঘরে বসিয়েছি ০৪ এর বর্গ ১৬
১ ০৮ ১৬
তাহলে এবার তোমরা বলতে পারবে যে ১০৫ এর বর্গ = ১ ১০ ২৫; ঠিক একইভাবে ১০৬ এর বর্গ = ১ ১২ ৩৬
এখন যদি প্রশ্ন করি, আচ্ছা বলো তো, ১১২ এর বর্গ কত?
তাহলে সামান্য ঝামেলায় পড়তে পারো...
প্রথমে তো ১ লিখে জায়গা রাখলে দুটি দুটি করে - ১----
প্রথম দুই ঘরে বসল ১২ দুগুণে ২৪ - ১২৪
এরপরই ঝামেলা: ১২ এর বর্গ হলো ১৪৪, এখানে আছে ৩ ঘর। কিন্তু আমাদের বর্গের শেষে তো মাত্র দুটি ঘর ফাঁকা আছে, তাহলে?
চিন্তা কী? শেষ দুই ঘরে ১৪৪ এর ৪৪ বসবে, হাতে থাকবে এক। সেটা গিয়ে যোগ হবে ২৪ এর সঙ্গে, হবে ২৫।
তাহলে সংখ্যাটা হবে ১ ২৫ ৪৪
এখন ১৩-এর বর্গ হলো ১৬৯। সুতরাং ১১৩-এর বর্গ হবে ১ ২৭ ৬৯।
যদি ওপরের অংশটা ঠিকঠাক দেখে থাকো, তাহলে বলতে পারবে ১ ০১২ এর বর্গ কত?
এবারে ১-এর পর তিনটি তিনটি করে ঘর রাখো এভাবে - ১--- ----
আগের মতো প্রথম তিন ঘরে বসবে ০১২-এর দ্বিগুণ, আর শেষের তিন ঘরে বর্গ; সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১ ০২৪ ১৪৪
আমি এতক্ষণ যা করলাম সেটা অনেকটা প্রাইমারি স্কুলের স্যারদের মতো... ‘তোরা দ্যাখ, এমনে এমনে অংক করতেহয়। কেন এটা হলো সেটা বলিনি। কিন্তু গণিতের আনন্দের একটা বড় অংশ এই ‘কেন’ প্রশ্নটা জুড়ে। তাই তোমাদের বলে রাখি, শিক্ষক যত ভালোই হন না কেন, তাঁকে সরাসরি বিশ্বাস করে নেবে না। একবার নিজে ভাববে, তিনি এমন কেন বললেন, এটা কেন হলো, এটা কি আসলেই ঠিক- যদি তোমার মন সায় দেয়, তবেই বিশ্বাস করতে পারো।
এ নিয়মটা কেন কাজ করে। আসলে এর পেছনে আছে একটা খুবই ক-ঠি-ন সূত্র:
(ধ+ন)২=ধ২+২ধন+ন২
এটা বোধহয় আমাদের জীবনে শেখা বীজগণিতের প্রথম সূত্রগুলোরএকটা। এবার বোঝাই ১০৪ এর বর্গটা দিয়ে-
১০৪ = (১০০+৪); এখন (১০০+৪)২=
১০০২ -১ ০০ ০০ - এ জন্যই বলেছিলাম ১ এরপর দুটি দুটি করে ঘর রাখো
+ ২ * ১০০ * ৪ - ৮ ০০ - মাঝের প্রথম দুই ঘরে ০৪ এর দ্বিগুণ
+ ৪২ - ১৬ - শেষের দুই ঘরে ০৪ এর বর্গ
------------
১ ০৮ ১৬
খেয়াল করো, আমি আমার মূল সংখ্যাটাতে সব সময় সামনে ১ রেখেছি। বোঝানো শুরু করার জন্য এটা অনেক ভালো। কিন্তু দুনিয়ার সব সংখ্যা তো আর ১ দিয়ে শুরু হয় না, তাই না? তাহলে ২ ০১৩-এর বর্গ কীভাবে করা যাবে? চিন্তা কি? আমরা তো এখন মূল সূত্রটা জানিই। আগেরবার বর্গের প্রথমে ১ রেখেছিলাম। কারণ ১ এর বর্গ ১। এখন মূল সংখ্যায় যদি ২ থাকে, বর্গে থাকবে ৪- এ আর এমন কী? এরপর তিনটি তিনটি করে ঘর রাখি-
৪-----
লক্ষ করো, আগেরবার প্রথম তিনটি ঘরে বসিয়েছিলাম শুধু ০১৩-এর দ্বিগুণ। এবারে কিন্তু তা বসালে চলবে না। কারণ মূল সূত্রে আছে ২ধন। তাই বসাতে হবে ২*২*০১৩=০৫২। শেষের তিন ঘরে আগের মতোই ০১৩-এর বর্গ। সংখ্যাটা দাঁড়াবে - ৪ ০৫২ ১৬৯ ভেঙে বললে, ২০১৩ = (২০০০+১৩)। এখন (২০০০+১৩)২=
২০০০২ - ৪ ০০০ ০০০ - এ জন্যই বলেছিলাম, ৪ এর পর তিনটা তিনটা করে ঘর রাখো + ২*২০০০*১৩ - ৫২ ০০০ - মাঝের প্রথম তিন ঘরে ২*২*০১৩=০৫২
+১৩২ - ১৬৯ - শেষের দুই ঘরে ১৩ এর বর্গ - ৪ ০৫২ ১৬৯
এ কাজগুলো মনে মনে করাটা কি খুব কঠিন? মনে হয় না। এবং তুমি কি বুঝতে পারছ, বর্গ করায় তুমি কত শক্তিশালী হয়ে উঠেছ? তুমি যদি তোমার কোনো বন্ধুকে গিয়ে বলো যে, ২০১৩ এর বর্গ- এ আর এমন কী- এটা হলো ৪ ০৫২ ১৬৯ বা চল্লিশ লক্ষ বায়ান্ন হাজার একশ ঊনসত্তর, তোমার কি মনে হয়, সে অবাক হবে না? অথচ দেখো সূত্রটা কত চেনা; সেই ছেলেবেলার ‘এ গ্লাস বি হোল স্কয়ার’- এর সূত্র।
বর্গ এ পর্যন্তই। ও আচ্ছা, তোমার তো এ প্লাস বি হোল কিউব’ এর সূত্রও জানো। তাহলে ১০২৩ এর মান যে ১ ০৬ ১২ ০৮ হয়, এটা বোঝো না কি, চেষ্টা করে দেখো তো...
আবার মুখে মুখে বর্গ করার এই সামান্য জিনিসটা নিজে নিজে শিখতে চার-পাঁচ মাস লেগে গেছে, অথচ তোমরা যারা এই লেখাটা পড়ছ, তারা ১০-১৫ মিনিটেই শিখে গেলে। এতে তোমাদের মনে হতেই পারে, নিজে এত সময় ধরে শিখে লাভ কী; তার চেয়ে কেউ শিখুক, আমি তার থেকে শিখে নেব। এই ভুলটা যেন না হয়, তার জন্যই ভ্রমণের কথাটা বললাম।
জেনে রেখো, যেটা দেখার জন্য তুমি ভ্রমণে বের হবে, সেখানে যাওয়ার রাস্তাটা তার চেয়েও বেশি সুন্দর হতে পারে। তাই তোমরা ভ্রমণ করো, নিজের জগতে। খুলে দাও হৃদয়ের সব জানালা, চিন্তা করো নিজের আনন্দে। চিন্তার জগতে তোমাদের যাত্রা শুভ হোক।