ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ বিকেলে বইমেলায় ঢোকার আগে টিএসসি’র মোড়ে দাঁড়িয়ে ভাজা-পোড়া খাচ্ছিলাম। সারাদিন অফিস করলেও চোখ পড়ে ছিল ক্রিকইনফো’র স্কোরকার্ডে। আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েই বাংলাদেশ জিতেছে। এটাইতো স্বাভাবিক। হঠাৎই বিরাট মিছিল। মোটর বাইকের মিছিল। বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে হারিয়েছে সেই আনন্দে মিছিল! বাসায় ফিরে টিভির স্ক্রলে দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী/প্রেসিডেন্ট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কী আবেগি জাতি! বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে হারাবে এটাই স্বাভাবিক না?
এবার ২৭ তারিখের কয়েকটি পত্রিকার শিরোনাম: ক্যাচ ফেলেই ম্যাচ শেষ (প্রথম আলো), স্বপ্নটা শেষ হয়ে গেল শুরু হতে না হতেই (কালের কণ্ঠ), এ কোন টাইগার (সমকাল), কাল হয়ে দাঁড়াল ফিল্ডিং ব্যর্থতা (ইত্তেফাক), নত হয়ে মাঠ ত্যাগ মাশরাফিদের (বাংলাদেশ প্রতিদিন), ম্যাচে মনই বসাতে পারেনি বাংলাদেশ (নয়া দিগন্ত) এবং ইত্যাদি.....। এভাবেই ২৬ তারিখে শ্রীলংকার সাথে হারার পর বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট করেছে।
এসব তো পত্রিকার শিরোনাম। আপামর জনতার প্রতিক্রিয়াতো আর এখানে লেখা সম্ভবনা। সম্ভবনা বিভিন্ন টিভি’র বিশ্লেষকদের (!) বক্তব্য উপস্থাপনেরও। কী করে লিখবো ডাইনিং টেবিলে বসে, শিক্ষিত মানুষের অশ্রাব্য বিশ্লেষণ! ব্যাপারখানা এমন যে, বাংলাদেশ প্রায়ই শ্রীলংকাকে হারায়। এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা হেরে বিরাট অন্যায় করে ফেলেছে...কী ভীষণ আবেগি জাতি আমরা? কী ভীষণ অযৌক্তিক!
৫ তারিখ (আজ) সকালে ঘুম থেকে উঠে টিভি ছেড়ে দেখলাম প্রথম ইনিংস শেষ। স্কটল্যান্ডের রান ৩১৮। বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। চোখ ঘষতে ঘষতেই গাজী টিভিতে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। উপস্থাপিকার সাথে ফারুক আহমেদ আর নূর তুষার আলোচক। কেন বাংলাদেশ টসে জিতে ফিল্ডিং নিলো? কেনো সাকিবকে দিয়ে বোলিং ওপেন করানো হলো? কেন একজন স্পিনার খেলানো হলো? রীতিমত কচুকাটা অবস্থা....খুব মন খারাপ করেই অফিসে রওয়ানা করলাম।
মিটিংএ বসেই দলের জেতার খবরটা পেলাম। রীতিমত স্কটল্যান্ডকে কচুকাটা করেছে। ৬ উইকেট হাতে রেখে, প্রায় ২ ওভার না খেলেই।
একে একে সবগুলো মুখ ভেসে আসছিলো সামনে। ফারুক আহমেদ, মারিয়া নূর, নূর তুষার, ডাইনিংয়ের সহকর্মী, পত্রিকার প্রতিবেদক, বিশিষ্ট ‘সাহিত্যিক’ উৎপল শুভ্র....
এদের চেহারাটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তখন...
ইস! আগেকার দিনের ক্যাসেটের ফিতার মতো যদি একবার টেনে দেখতে পারতাম!!
প্লিজ আবেগের সুতোয় লাগাম দিন। যুক্তিকে সামনে নিয়ে আসেন। নাহলে মুক্তি নাই...