somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুমাইয়া শিমুর বিয়ে! বর কালো! আর আমাদের চুলকানি...

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুমাইয়া শিমু বিয়ে করেছেন। সেই বিয়ে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। ঘটনা এরকম না যে, বহু যুবক তাদের হৃদয় ভাঙ্গার অপরাধে তোলপাড় শুরু করেছেন। তোলাপাড়ের বিষয় হলো, ‍শিমুর বর দেখতে ভালোনা। পরিষ্কার করে বললে, চেহারা খারাপ। যে সমস্ত পত্রিকা ছবিসহ বিয়ের খবর করেছে, সেই খবরের নিচের মন্তব্যগুলো পড়া কোনো সুস্থ্য মানুষের পক্ষ্যে সম্ভব না! মন্তব্যগুলো যারা করেছে, তাদের সুস্থ্যতার বিষয়ে নির্দ্বিধায় সন্দেহ করা যায়! অথবা কীভাবে তাদের বিষয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করা যায়, তা আমার জানা নাই।

সুমাইয়া শিমু এবং তার বর দুজনকেই আমি চিনি! শিমু আপা জাহাঙ্গীরনগরে আমাদের ‍সিনিয়র। তিনি সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। একই বিল্ডিংয়ে আমারও ডিপার্টমেন্ট! আমাদের চেয়ে ৪ বছরের সিনিয়র। আমরা যখন ক্যাম্পাসে ঢুকি তখনো তিনি ওখানকার ছাত্রী। একইরকম সুন্দরী। নাকি আরো বেশি সুন্দরী ছিলেন? ওনার প্রেমে পড়ে ছ্যাঁকা খাওয়া কত কত বড় ভাইয়ের হৃদয়বিদারক গল্প শুনেছি! তবে তখনো এতটা জনপ্রিয় হননি।

সুমাইয়া শিমুর বর, নজরুল ভাইকে আমি একটু বেশি করে জানি। তিনিও জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র। তবে চেনাটা জাহাঙ্গীরনগরে নয়! আমি তখন একটা ন্যাশনাল এনজিওতে চাকরি করি। আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি করতে চাই। বিভিন্ন জায়গায় এ্যাপ্লাই করছি। সিভি পাঠাচ্ছি। কোথাও কোথাও থেকে ডাকও পাচ্ছি। কিন্তু চাকরি হচ্ছেনা। এরকমই এক সময়ে এক ভদ্রলোক আমাকে ফোন করলেন। তিনি আমার ‘সিভি’ দেখেছেন। সিভি দেখে তার ভালো লেগেছে এবং আমার সাথে কথা বলতে চান। পরিচয় দিলেন তিনি রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশের প্রধান!

হতভম্ভ অবস্থা সামলে নির্ধারিত তারিখে গেলাম তার অফিসে। শ্যামলা রঙের, টিকোলো নাক, কালো প্যান্টের ওপর ফুলহাতা শার্ট পরা এক ভদ্রলোক বসে আছেন। সামনে বিরাট দুটো মনিটর। তারপর আমাদের ঘন্টাখানেক আলাপ হয়েছে। কোনো বিদেশী সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টরের সাথে এই প্রথম এতো দীর্ঘ আলাপ। তিনি প্রথমেই আমাকে সহজ করে দিলেন এই বলে যে, তিনি জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র ছিলেন। সম্ভবত এর আগে আমি কখনোই কারো সাথে দেখা করার সুযোগ পাইনি, যিনি এত সুন্দর করে, এতোটা গুছিয়ে কথা বলেন! এতো শুদ্ধ এবং দারূণ উচ্চারণে কথা বলেন। তাঁর সাথে দীর্ঘ আলাপের শুদ্ধতা বহুদিন আমার মনে গেঁথে ছিলো!

তারপর তার সাথে বিভিন্ন প্রেগ্রামে দেখা হয়েছে। টুকটাক আলাপ হয়েছে। ফোনেও কথা হয়েছে।

পত্রিকায় শিমু আপার সাথে নজরূল ভাইয়ের ছবি দেখেই আমি চিনে ফেলেছিলাম! খবরটা পড়ে আরো নিশ্চিন্ত হলাম। বেশ আনন্দ হলো! শিমু আপা এবং নজরুল ভাই বয়সের দিক থেকেও খুব কাছাকাছি। সব মিলিয়ে বেশ ভাল সিদ্ধান্তই মনে হলো। কিন্তু খবরের নিচে দর্শক/পাঠকের মন্তব্য পড়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আস্তে অাস্তে সেটা বেশ বড়সড় খবর হিসেবে সামনে চলে এসেছে। খবরের মুল কথা হলো, বর দেখতে খারাপ!

কয়েকদিন আগে আমাদের এক এমপি’র দেয়া ভাষণ মনে পড়লো। তিন বলেছেন, আফ্রিকানরা কালো এবং অসভ্য। তাদেরকে সভ্য হতে হবে। আমরা বেশ হাসাহাসি করেছি সে খবর নিয়ে। বলেছি, একজন মন্ত্রী হয়ে কী করে পারলেন এমন মন্তব্য করতে? অথচ সেই আমরাই এখন শিমুর বরের গায়ের রং নিয়ে হাসছি। কেউ কেউতো শিমুর পছন্দ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে! আমরা আসলে কোথায় পড়ে আছি? একজন মাুনষের বাকি সব যোগ্যতা, মেধা, কাজ বিসর্জন দিয়ে শুধু তার গায়ের রং নিয়ে পড়ে আছি আমরা? গায়ের রংই হয়ে গেল ভালো-মন্দ বিচারের একমাত্র নির্দেশক। অথচ জানতাম, সৌন্দর্য থাকে মনে, চিন্তায় আর কর্মে!!! কী ভুলইনা জানতাম!

কয়েকজনের করা মন্তব্য এবং একজনের দেয়া উত্তর দিয়ে লেখাটা শেষ করি। যদিও কথা শেষ হয়নি। শেষ হয়নি দীর্ঘশ্বাসও!

‘হায়রে শিমু, আমারে চোখে পড়লোনা?
- ভাই, থামেন! উচ্চতর শিক্ষা নেয়া, পিএউচডি করা, জনপ্রিয় এক অভিনেত্রীর বর হলে হজম করতে পারবেনতো?
‘আরে শিমুতো টাকা দেখে বিয়ে করেছে!;
- হুম ঠিকই বলেছেন! তো একজন বিদেশী সংস্থার প্রধান হওয়ার মতো যোগ্যতা আছেতো?
‘খাইছে, বরতো দেখি কাউলা’
- জ্বী, ঠিকই বলেছেন। তারতো শুধু গায়ের রঙটা কালো। চলেন, মনটা পরিষ্কার করি!

স্যরি! নজরুল ভাই! আমাদের মনের ময়লা দূর হতে বহু পথ বাকি!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×