somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘হিরো আলমরা’ই কিন্তু বাংলাদেশ!

০১ লা জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে, আমাদের গ্রাম থেকেই দুইজন প্রার্থী ছিলেন! একজন হাবিব ভাই। হাবিব ভাই একসময় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। অনুমিতভাবেই রিটায়ার্ডের পর, হাবিব ভাইয়ের মাথা আউলা-ঝাউলা হয়ে গেল! অনেক বেশি কথা বলে! সারাক্ষণ বড় বড় কথা...! আর গোঁফে তা’ দিয়ে, চটাং চটাং চটির আওয়াজ তুলে সারাদিন দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়ায়!

কে যে তারে এই কুবুদ্ধি দিছে! মেম্বার পদে দাঁড় করাইয়া দিলো। অনেক চেষ্টা করেও তাকে ‘বসানো’ গেলোনা! ফলাফল যা হবার কথা তাই হয়েছে। হাবিব ভাই বিরাট ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছে। মাঝখানে প্রায় সর্বশান্ত হওয়ার পথে! এবারের ঈদে বাড়ি গেলে বুঝতে পারবো হাবিব ভাইয়ের ‘মাথা’ বাকিটুকু অবশিষ্ট আছে, নাকি পুরোটাই গ্যাছে..

এর আগে সিরাজ ভাইয়েরও একী দশা ছিল। প্রায় প্রতি ইলেকশনে ‘খাড়াইয়া’ যাইতেন। সিরাজ ভাইকে আমি কখনো জিততে দেখিনাই। তাতে কী? তার উল্লাস কখনো থেমে থাকেনি!

বঙ্গদেশে হাবিব ভাইদের অভাব নাই। বিশেষ করে ইলেকশন আসলে তাদেরকে দেখা যায়। গ্রামের পথে রিকশায় উঠলে, হুট করে রিকশা চালকের দিকে তাকিয়ে আপনার হয়তো চোখ কপালে উঠে গেল! চালকের হাতে সোনালী চেইনের ঘড়ি, তেল চুপচুপ মাথাভর্তি চুল। সেই বাবরি চুলের বাহার নেমে এসেছে ঘাড় অব্দি! মুখে শিষ! রঙিন রিকশা চলছে হাওয়াই হাওয়াই... কে একজন ছিলেন না? প্রতিবারই প্রেসিডেন্ট পদে ইলেকশনে নমিনেশন দাখিল করতেন? নামটা মনে পড়ছেনা।

এসব গ্রামের মানুষের বিনোদনের উৎস কী? হাবিব ভাই, অথবা সিরাজ ভাইদের নিয়ে গালগল্প- হাসিঠাট্টা, বছরে একবার ওয়াজ মাহফিল, বর্ষাকালে খেলাধুলা, গ্রামের বাজারে কোন এক দোকানের পেছনে তাসের আড্ডা, ক্যারাম বোর্ড, কারো গাছ থেকে মধ্যরাতে ডাব চুরি, দোকানে দোকানে হিরো আলমের নাচ আর সঙ্গে তুমুল হাত তালি!

এই যে, এইতো সর্বনাশ হয়ে গেল। হিরো আলমের নাম বলে ফেললাম! আমারতো এবার জাত যাবার দশা হয়ে গেল! ফেসবুকজুড়ে এখন হিরো আলম। তার ভিডিও আমরা শেয়ার দিচ্ছি, হাসাহাসি করছি। কিন্তু কেন? হিরো আলমের ভিডিওগুলো কী খুব বেশি নতুন কিছু আমাদের জন্য?

আমরা মমতাজকে নিয়ে এখন হইচই করি, তিনি সংসদ সদস্যও! মমতাজ যখন যাত্রায় গান গাইতেন, সেই অনেক বছর আগে, তার পোষাক-আশাক, কথাবার্তা মোটেও এই হিরো আলম থেকে কী খুব ভাল ছিল? এখনও আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যাত্রা’র পরিস্থিতি কিন্তু এরকমই আছে। কারণ হলো, এটাই সাধারণ মানুষের বিনোদনের মাধ্যম! এ ধরনের বিনোদনই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়!

আমরা কী এই সময়ের বাংলা সিনেমা দেখি? শাকিব খানের সঙ্গে যখন ২/৩ জন নায়িকা এদিক-সেদিক, তিড়িং-বিড়িং করে নাচানাচি করে, সেটা কী কোনভাবেই এর’চে ভাল? শুধু মেকাপ আর পোষাক যদি বদলে দেয়া যায়? বাংলাদেশের প্রায় সব গ্রামেই হিরো আলম’রা আছে। এরা কখনো না কখনো, টিভিতে তার চেহারাটা দেখাতে চায়। এর জন্যে অর্থ খরচ করতেও রাজি। কিন্তু সবাই আর সে স্বপ্নের কাছে পৌঁছাতে পারেনা। উদাহরণ আরো দেয়া যাবে। অনেক!

আমাদের সমস্যা হলো, আমরা সবকিছু নিজের মতো করে দেখতে পছন্দ করি। ভাবি, আমার যা পছন্দ, রুচি, বাকি সবার রুচি যদি ওরকম না হয়, তাহলে তারা খুবই খারাপ! তাদের আবার জাত আছে নাকি? অথচ আমরা ভুলে যাই, গ্রাম প্রধান এই দেশটায় এখনো হিরো আলমেরাই প্রতিনিধিত্বশীল! আমরা হাইব্রিড। কিছুটা শহুরে চাকচিক্য থেকে শেখা! বাকিটা বলিউড, হলিউডের সৌজন্যে!

আমার বন্ধু তালিকার বড় একটা অংশ যেভাবে হিরো আলমকে অস্বীকার করলেন, আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে, আমরা হয়তো এই দেশটাকে চিনিনা, না হয় নিজের সাথে প্রতারণা করি। অনবরত! কেননা, ‘হিরো আলমরা’ই কিন্তু বাংলাদেশ!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:২৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×