বনানী থেকে গুলশান ১- এ যাবো। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে যেতে হবে। এর মধ্যে ঘড়ির কাঁটা প্রায় পাঁচটার ঘরে
ঢাকার জ্যামের উপর বিশ্বাস নাই। অতএব গাড়ি নেয়ারও কোন মানে নাই। তাহলে? সামনে বসে থাকা আমার অতি বুদ্ধিমান সহকর্মী বলে উঠলো, ‘পাঠাও’ ছাড়া আপনার আর কোন গতি নাই।
আমি ঝটপট ‘পাঠাও’ এর এ্যাপস নামিয়ে ফেললাম। সার্চ লাগালাম। মিনিটের মধ্যে ফোন। আমার অফিসের গোড়াতেই বাইক দাঁড়িয়ে আছে!
প্রায় দৌড়ে গিয়ে উঠে বসলাম। বাইকারের সাইজও আমার মতোই। দীর্ঘ শরীর। মোটাসোটায় আমার চেয়েও খানিকটা বাড়তির দিকে। স্কুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! মনে মনে ভাবলাম, ‘আজ আমার খবর আছে। ইয়া মাবুদ! রক্ষা করো। সে বসবে কই, আর আমিই বা কই বসবো?’
উঠে বসলাম। টুকটাক আলাপ শুরু হলো। আমি কি করি। তিনি কি করেন। কে কোথায় থাকি, ঢাকার মেয়র আনিসুল হকের প্রস্থান, রাস্তাঘাটের জ্যাম, ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ।
ছেলেটার নাম ইমরান। নিয়মিত বাইকার না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করেছে। এখন ফুলটাইম চাকুরি করে। মৎস্য ভবনের ওদিকে বাসা। বনানীতে অফিস। সকাল বেলায় বাসা থেকে বের হয়ে একটা রাইড নিয়ে বনানী বা গুলশানের দিকে চলে আসে। তারপর অফিস। পাঁচটায় অফিস থেকে বের হয়ে বনানী-গুলশান এলাকায় ২/১ টা রাইড। এরপর আরেকটা রাইড নিয়ে বাসার এলাকায় চলে যায়। প্রতিদিন বেশ কিছু বাড়তি ইনকাম।
আমি মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনছিলাম। ‘একটা ছেলে ফুল টাইম চাকুরি করছে, চাকুরির পাশাপাশি নিজের বাইক চালাচ্ছে, বাড়তি কিছু রোজগার করছে। কেউ সিএনজিওয়ালা, রিকশার ড্রাইভারের মতো ব্যবহার করে। ও গা করে না। ওর মধ্যে কোন দ্বিধা বা অাফসোস নাই। কারণ ও জানে ও কী করছে।’
কিসের প্রাতিষ্ঠানিক চাকুরি? কে বলে অামাদের তরুণ প্রজন্ম বিসিএস ক্যাডার, ব্যাংকের অফিসার, কর্পোরেট লিডার হওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছে? কে বলে ওসব হওয়া ছাড়া জীবনে আর কিছু করার নেই?
আমাদের তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তিতে মজেছে। ওরা ‘পাঠাও’ এর বাইকার। উবার এর ড্রাইভার। আব্দুল্লাহপুর থেকে সকাল বেলায় মাছ-সব্জি কিনে সারাদিন বিক্রি করে, রাস্তার পাশে কাবাব বেচে, গ্রামে মাছের চাষ করে, কৃষি খামারের মালিক এই তরুণ প্রজন্মই। ওরা এখন কাজকে ‘কাজ’ মনে করে। ওরা জেনে গেছে, সত্যিকার ‘কাজে’ কোন লজ্জা নাই। গোটাটাই গর্বের।
তাহাদের রুখিবে সাধ্য কার?