‘সোফিয়া’ নামের রোবট বাংলাদেশ থেকে ঘুরে গেল। এই রোবট নিয়ে দেশের মানুষের, বিশেষ করে রাজধানীবাসী ও বড় বড় মিডিয়ার কী উচ্ছ্বাসটাই না চোখে পড়লো।
বাঘা বাঘা সাংবাদিকরা সোফিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সোফিয়ার সাথে কথা বলেছেন। বড় বড় সংবাদপত্র তাদের প্রথম পাতায় বড় করে সোফিয়ার খবর ছাপিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সোফিয়া অনেক তথ্যই জানে। বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। সে বাংলাদেশকে বেশ ভালওবাসে।
সোফিয়াকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা এবং বাংলাদেশ থেকে ঘুরে যেতে মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি টাকা।
এটা অবশ্য খুবই সামান্য টাকা। কেননা বাংলাদেশের মানুষজন আগের তুলনায় বেশ ভাল পরিমাণে ট্যাক্স দিচ্ছে। তাছাড়া টাকাতো খরচ করারই জিনিস। গত বছর ৬৩ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ট্যাক্স আদায় হয়েছে। এ বছর এর পরিমাণ আরো অনেক বেশি। এছাড়া বিদেশ থেকে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষজন দুই হাত ভরে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। ব্যাংক ডুবে যাচ্ছে টাকায়। বড় বড় ব্যাংকগুলোতে যে কোন ধরনের লুটপাটই প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা।
সমস্যা হলো, দক্ষিণ-পশিচমাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত উপজেলার সুফিয়া বেগম এক কলসি খাবার পানির জন্য পেটে ৫ মাসের বাচ্চা নিয়ে প্রতিদিন ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। অথচ সেখানে ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ করে একটা পানির প্লান্ট করে দিলে এই কষ্টটা তাকে আর করতে হয় না। আরেক সুফিয়া খাতুন দরিদ্র গর্ভবতী মায়ের জন্য বরাদ্দ করা মাসে পাঁচ’শত টাকা পাবার জন্য ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে পথেই বাচ্চা প্রসব করে ফেলেছে। এখন এই মা আর বাচ্চা, দুইজনের অবস্থাই মুমূর্ষু! কিন্তু এই সুফিয়াদের খবর দেশের কোন বড় পত্রিকার ভেতরের কোন পাতায়ও ছাপা হয়নি।
এই অন্যায্য আর অসাম্যের পৃথিবীতে ‘সোফিয়া’ আর ‘সুফিয়া’ হয়ে জন্মানোর মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। এটা আমাদের বুঝতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৯