somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ভাল স্ত্রী মানে হল, সুন্দরী, সতী, নরম-শরম স্ত্রী, যে আবার ঠিকঠাক যত্নও নিতে পারবে। আর ভাল স্ত্রীরা কিছুটা রোজগারও করে...’

১৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়ার্ল্ড ইকানমিক ফোরামের ২০১৭ সালের লিঙ্গ বৈষম্যবিষয়ক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, নারী পুরুষের সমতায় বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভাল।

শুধু ‘বেশ ভাল’ বললে খুবই কম বলা হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবার উপরে! সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম! দক্ষিণ এশিয়ার বাকি সব দেশের অবস্থান এক শ’র উপরে...ভারতের অবস্থান ১০৮!

নারী-পুরুষ বৈষম্য সবচেয়ে বেশি ইয়েমেনে, তাদের অবস্থান ১৪৪তম। এর পরেই আছে আমাদের ‘সাবেক মাতব্বর’ পাকিস্তান! ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার ৪৬ বছরের মাথায় এই পরিবর্তন নি:সন্দেহে লক্ষ্যনীয়, উদযাপন করার মতোই! বাংলাদেশ কতটা এগিয়ে গেছে, আর কোথায় পড়ে আছে পাকিস্তান!

মোট ১৪টি সূচকের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪টি সূচকে বাংলােদেশ সারা পৃথিবীতেই প্রথম। সেই চারটি সূচক হলো, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি, গত ৫০ বছরের সরকার প্রধানের সূচক এবং জন্মের সময় নারী-পুরুষের সূচক। অভিনন্দন বাংলাদেশ!

তবে খারাপ খবর হলো, স্বাস্থসম্মত জীবন-যাপন, মন্ত্রিত্ব পদ, শ্রম বাজার এবং উচ্চতর শিক্ষার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভাল নয়!
বাংলাদেশ অনেক বছর ধরেই শিক্ষার সূচকে ভাল করেছে, যদিও এটা পুরোটাই সংখ্যাগত দিক থেকে। কিন্তু মানের প্রশ্নে বাংলাদেশকে বহুপথ যেতে হবে। অন্যদিকে গত ২৫ বছর ধরেই বাংলাদেশের সরকার প্রধান নারী, সরকার প্রধান নারী হলেই যে সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমে আসবে - এই প্রতিবেদন থেকে সেটাই প্রমাণিত হল। গত দুই সংসদে নারীরা মন্ত্রিত্বের পদে এগিয়ে এসেছেন। এর আগে এই অবস্থান খুবই নাজুক ছিল। এই ধারা অব্যাহত থাকলে, ভবিষ্যতে এই সূচকেও বাংলাদেশ ভাল করবে।

তবুও এই রিপোর্টটা সম্মানের। শত খারাপ খবরের মাঝে, নানা সূচকে যখন আমরা তলানির দিকে, তখন এ খবর আমাদেরকে আনন্দিত করে, নি:সন্দেহে! কিন্তু পথ এখনো অনেক বাকি। যেতে হবে বহুদূর...

এই প্রসঙ্গে আমাদের একটা কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই।

কিছুদিন আগে আমরা একটা গবেষণা করেছিলাম। মূলত: গ্রামীণ এলাকায়। খুলনা এবং সাতক্ষীরা এলাকায়। সে গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল, নারী-পুরুষের বৈষম্য দেখা এবং সর্বোপরী, পরিবারে নারীকে কিভাবে দেখা হয় - সেটা দেখা। আমি সেখান থেকে কয়েকটা তথ্য দিতে চাই।

নারী-পুরুষের সম্পর্ক এবং ক্ষমতার দ্বন্ধ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম আমরা! দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিবারই নারীকে অায় বর্ধক কাজে দেখতে চায় না। আবার গৃহস্থালি কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ নগন্য; বরং এই অংশগ্রহণকে খুব ‘খাটো’ করে দেখা হয়। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ‍কিছু জায়গায় পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেও আচরণ কিন্তু একইরকম রয়ে গেছে। অর্থ্যাৎ মুখে নারীর ক্ষমতায়ন স্বীকার করা হলেও, বাস্তবে কিন্তু তা দেখা যায় না। বাইরে হয়তো বলছে যে, আমার স্ত্রী বা বোন ঘরের বাইরে কাজ করলে অামার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু সেই নারীর সাথে কথা বলে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ঘরের ভেতর এমন পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে যে, নারী আর সাহস করে বাইরে গিয়ে কাজ করার আগ্রহ পাচ্ছে না।

অধিকাংশ পুরুষই মনে করে, ‘তারাই সংসারের আয়-রোজগারকারী, অতএব, তারাই হবে পরিবারের সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, ব্যস’!

নারীদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভাল স্বামী বলতে কি বুঝায়? অধিকাংশ নারীই বলেছেন, ‘সেই ভাল স্বামী, যে ভাল রোজগার করে এবং তার পরিবারকে স্বাচ্ছন্দে চালাতে পারে। রোজগার করতে না পারলে পুরুষ কিসের’?

পুরুষদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভাল স্ত্রী কারা? অধিকাংশ পুরুষই বলেছেন, ‘ভাল স্ত্রী মানে হল, সুন্দরী, সতী, নরম-শরম স্ত্রী, যে আবার ঠিকঠাক যত্নও নিতে পারবে। আর ‘ভাল স্ত্রী’রা কিছুটা রোজগারও করে...’

শুধু তাই না। আরো নানা বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম। প্রায় সবখানেই অবস্থা নাজুক। বিয়ে, পারিবারিক দ্বন্ধ এবং তার সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ নানা বিষয়ে যে মন্তব্য/ ধারণা আমরা পেয়েছি সেটা এখোনে বিস্তারিত বলতে গেলে অনেকেরই খটকা লাগতে পারে। অনেক স্বামী-স্ত্রীই শুধমাত্র সেক্স ছাড়া আর কোন বিষয়েই কখনোই কথা বলে নি। এমন অনেক দম্পতি আছে, যারা ‘একঙ্গে অবসর সময় কাটানো’ বলে যে কিছু আছে - সে ধারণাই তাদের নেই। কেউ কেউ খুব বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, স্বামী-স্ত্রী আবার দরকার ছাড়া কথা বলবে কেন?

এই আলোচনাটা বরং শেষ করি। কেননা এটা একটা অমীমাংসিত বিষয় এবং এ বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলে সমাধানে আসা খুবই কঠিন। কেননা, গোটা ব্যাপারটাই সম্ভবত: একটা ধোঁয়াশার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এবং সবক্ষেত্রেই, কেউ পরিস্কার করে কথাবার্তা বলতে রাজি নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বরং এটা শুনতে হয় যে, ‘এটা নিয়ে এত কথা বলার কি আছে’?

সূচক দিয়ে নারী-পুরুষের সমতা হয়তো দেখা যায়, কিন্তু সবার আগে নারীর নিরাপত্তা, পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠানে সহাবস্থান সম্ভবত: বেশি জরুরি। আর সে জন্য পারিবারিক শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। তবে সবার আগে সম্ভবত: নারীকেই এই বাধা পেরানোর জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

গ্রামের নিরক্ষর একজন বাবাও কিন্তু মনে করেন যে, তার মেয়েটাকে কম বয়সে বিয়ে দেয়াটা ক্ষতিকর। কিন্তু ১৪/১৫ বছরের একটা মেয়ের নিরাপত্তা কি আমাদের সমাজ দিতে প্রস্তুত আছে? সেই প্রশ্নের জবাব দেবার আগে এই নিয়ে কথা বলা বেশ ব্রিবতকর বটে!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×