somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন এই রসিকতা?

১৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমে মুরগীর ছাল তুলে নিতে হবে। তারপর গরম পানিতে সিদ্ধ করে ‍মুরগীটাকে ‍চিৎ করে ধরে, বুকের মাঝামাঝি হালকা করে কেটে নিতে হবে। এরপর মুরগীর পশ্চাৎদেশ দিয়ে পরিমাণমতো নুডলস ঢোকাতে হবে। তারপর মুরগীটাকে তেলে ভেজে নিতে হবে। ব্যস হয়ে গেল, নুডলসের চিকেন বড়া!

এটা একটা নুডলসের রেসিপি, যা বাংলাদেশের একটা প্রথম সারির টেলিভিশন চ্যানেল তাদের প্রাইম সময়ে প্রচার করেছে। শুধু এই একটাই নয়; গোটা রোজার মাস ধরে নুডলসের এরকম অদ্ভুত সব রেসিপি আমাদেরকে হজম করতে হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নুডলসের আচার, নুডলস দিয়ে বিরিয়ানি, নুডলসের পাকোড়া, দো-পেয়াজা ইত্যাদি। সেদিন দেখলাম, নুডলস দিয়ে তিনি দইবড়া বানাচ্ছেন!

নুডলসের মতো এরকম একটা ঝটপট রান্না করা যায় এবং যথেষ্ট সুস্বাদু খাবারের এই ভয়ানক পরিণাম দেখে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে কেন এই রসিকতা? বাংলাদেশের কোন এলাকার মানুষ নুডলসের চিকেন বড়া অধবা দই বড়া খায়? আমি অন্তত জানি না। যদি না খায়, তাহলে এরকম উদ্ভট রান্না বা রেসিপি’র কারণ কি? যারা চ্যানেল চালায় তারাই বা এরকম একটা অনুষ্ঠান কেন সম্প্রচার করেন? তারা নিশ্চয় জানেন যে, মানুষ এসব দেখে হাসাহাসি করে, তাচ্ছিল্য করে।

শুধু তাই নয়! তিনি সেই রান্নার অনুষ্ঠান ধারণ করার জন্য বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়া, মরুভুমির বালুচর, সমুদ্রের কিনার অথবা সুন্দরবনের গহীন জঙ্গলকে বেছে নেন।

এটা মানলাম যে, এর পেছনে ব্যবসায়িক মনোভাবটা কাজ করে। বিজ্ঞাপন পেয়ে যে টাকা পান, সেটাকে হালাল করার চেষ্টা; কিন্তু সেটার একটা লজিক তো থাকতে হবে? যাদের মাথা থেকে এসব উদ্ভট আইডিয়া বেরিয়ে আসে, তাদেরকে থামানোর মতো কি কেউ নেই?

এবার আসি আরেক প্রাজ্ঞজনের বিষয়ে!

তিনি এই নিয়ে দু্ইবার ঘণ্টাব্যাপি একক সংগীতানুষ্ঠান নিয়ে হাজির হয়েছেন টেলিভিশনের পর্দায়! না আছে তার সুর, না লয়। এরকম ভয়ানক গানের গলা নিয়ে একটা মানুষ গোটা এক ঘণ্টার একটা অনুষ্ঠান করতে পারে কোন সাহসে? শুধু তাই নয়; তিনি নিজেই সমস্ত গানের মডেল। সেই সব মডেলিংয়ে অদ্ভুতভাবে হাত-পায়ের অঙ্গভঙ্গি, পোশাক-আশাকের বাহারি ব্যবহার। তিনি দেয়ালের গায়ে M+M লিখে সেটাকে অাবার নিজেই চুমু খাচ্ছেন! উনি বুঝতে পারছেন না যে, গোটা ব্যাপারটা তার সাথে যাচ্ছে না, বরং খুবই হাস্যকর আর খেলো দেখাচ্ছে? ব্যাপারটা কি অনেকটা এমন যে, চ্যানেলটা আমার। অতএব আমার চ্যানেলে আমি যা ইচ্ছা তাই করবো, তাতে কার কি?

কিন্তু সেই চ্যানেলটাতো কারো ব্যক্তিগত ড্রয়িং রুম কেন্দ্রীক চ্যানেল নয়। এটা একটা পাবলিক চ্যানেল, হাজার হাজার মানুষ যার দর্শক। এরকম হাজারো মানুষের রুচিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যা ইচ্ছে তাই নিয়ে হাজির হওয়া যায়? যা খুশি করা যায়? সেখানে পাবলিকের মতামতের কোন গুরুত্ব নেই?

সমস্যার কথা হলো, তাদের এই অদ্ভুত কার্যকলাপ নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হচ্ছে! বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল হচ্ছে। সবাই হাসাহাসি করছে। সমালোচনা হচ্ছে খুব। অথচ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তারা সেই ট্রলকে তাদের বিরাট অর্জন বলে দাবি করছেন। তারা বলছেন, তারা ভাল করছেন বলেই মানুষ তাদের নিয়ে কথা বলছে। এবং এসব কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন!

কি ভয়ানক একটা ব্যাপার!

তার মানে, তারা যে দেশের সমগ্র মানুষের সঙ্গে এক ধরনের রসিকতা করছেন, এই রসিকতা যে দেশের মানুষের রুচিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার শামিল, সেটা কি তারা বুঝতে পারছেন না?

আমার ধারণা তারা বুঝতে পারছেন।

কিন্তু এটা তারা বুঝতে পারছেন না যে, তাদেরকে নিয়ে আশেপাশের কিছু মানুষ তোষামোদের নামে চরম রসিকতা করছে!

তাদেরকে থামানোর কি কেউ নেই কোথাও?

দেশে তো আইন - আদালত বলেও কিছু আছে?

তা না থাকলে অন্তত ক্রসফায়ার না বন্দুকযুদ্ধ কি জানি বলে, সেসবতো আছে?

মানুষের রুচিকে উপর্যুপরি ধর্ষণ, দিনের পর দিন চক্ষু এবং শব্দ দূষন কি অপরাধ নয়?
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×