অাজকের পর্বটি রং দিয়েই সাজিয়েছি। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, অাকাশ, সমুদ্রের পানি নীল দেখায় কেন?মেঘের রং কেন সাদা? সূর্যকেই বা কেন লাল, কমলা রংয়ের দেখায়? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই অাজকের পর্বটি সাজিয়েছি। অাশা করি অাপনাদের ভাল লাগবে।
১) অাকাশ নীল কেন?
সূর্য থেকে যেই দৃশ্যমান সাদা অালো পৃথিবীতে পৌছায়, তা অনেকগুলো বর্ণালীর মিশ্রণ। উপরের চিত্রটি লক্ষ্য করুন, বেগুনী, নীল, অাসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল। বেগুনী অালোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, তারপর নীল এভাবে বৃদ্ধি পেয়ে লাল রংয়ের ক্ষেত্রে তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। অামাদের বায়ুমন্ডলে অসংখ্য বস্তু কণা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অাছে। সূর্য থেকে যখন অালোকরশ্মি পৃথিবীর দিকে অাসে, তখন এই কণাগুলো অালোকরশ্মির বিভিন্ন বর্ণালীকে বিভিন্ন মাত্রায় বিক্ষিপ্ত করে। যেহেতু কণাগুলো খুবই ক্ষুদ্র, তাই ক্ষুদ্র তরঙ্গের অালোকরশ্মিই সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। বর্ণালীতে অামরা দেখতে পাচ্ছি, বেগুনী রংয়ের অালোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, তারপর নীল। তাহলে তো বেগুন রংয়ের অালোকরশ্মি সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হওয়ার কথা! তাহলে অাকাশ বেগুনী না হয়ে নীল দেখায় কেন?
এর কয়েকটি কারন রয়েছে। প্রথমত, সূর্য থেকে যেই সাদা রংয়ের অালো পৃথিবীতে অাসে তাতে বেগুনী রংয়ের অালোকরশ্মি তুলনামূলকভাবে কম থাকে। দ্বিতীয়ত, বেগুনী অালোকরশ্মি বায়ুমন্ডলেই কিছুটা শোষিত হয়। তৃতীয়ত, অামাদের চোখে তিন ধরনের রং সংবেদনশীল কোষ অাছে, নীল, লাল এবং সবুজ। এই কোষগুলো বেগুনী রংয়ের অালোকরশ্মির প্রতি অপেক্ষাকৃত কম সংবেদনশীল। এসব কারণে অাকাশকে অামরা বেগুনী দেখি না। বেগুনী রংয়ের পরই নীল রংয়ের অালোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম। তাই এটি সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। ফলে অামরা অাকাশকে নীল দেখি।
২) তাহলে সমুদ্র নীল দেখায় কেন?
সমুদ্রের পানির কণাগুলো বেশ বড়। এগুলো বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অালোকরশ্মিগুলো(লাল, কমলা, হলুদ) শোষণ করে নেয়। বাঁকিগুলোকে বিক্ষিপ্ত করে। ফলে অাকাশের মত সমুদ্রকেও অামরা নীল দেখি।
৩)কিন্তু মেঘ সাদা কেন?
মেঘের ভেতরে যেই পানির অণুগুলো রয়েছে, তা সব রংয়ের অালোকরশ্মিকেই সমভাবে বিক্ষিপ্ত করে। যার ফলে অামরা মেঘকে সাদা দেখি।
৪)সূর্যকে লাল-কমলা দেখায় কেন?
সূর্য যখন ওঠে কিংবা অস্ত যায়, তখন এটি দিগন্তের কাছাকাছি অবস্থান করে। সহজ কথায়, এই দুটি ক্ষেত্রে সূর্য থেকে অালোকরশ্মি অামাদের চোখে পৌছানোর জন্য সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বায়ুমন্ডলকে ভেদ করতে হয়। ফলে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অালোকরশ্নি বেশি বিক্ষিপ্ত হয়, অার বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অালোকরশ্মি কম বিক্ষিপ্ত হয়। যেহেতু বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অালোকরশ্মি কম বিক্ষিপ্ত হচ্ছে, তাই এগুলো সহজেই বায়ুমন্ডল ভেদ করে অামাদের চোখে অাসে। তাই সূর্য ওঠা এবং অস্ত যাওয়ার সময় এটিকে লাল-কমলা রংয়ের দেখায়।
কিন্তু দুপুরবেলা সূর্য যখন মাথার উপরে থাকে, সূর্যের অালোকরশ্মিকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে অাসতে সবচেয়ে কম বায়ুমন্ডল ভেদ করতে হয়। ফলে অালোকরশ্মিগুলোও সবচেয়ে কম পরিমাণে বিক্ষিপ্ত হয়। এজন্য সূর্যকে তখন সাদাটে দেখায়। সূর্যকে মহাশুন্য থেকে দেখলেও এটাকে সাদাটেই লাগবে। এটাই সূর্যের অাসল রং।
৫) অাচ্ছা বলুন একটি অাপেলকে লাল দেখায় কেন?
কারন অাপেল লাল রং ব্যাতিত অন্য রংয়ের অালোকরশ্মিরগুলোকে শোষণ করে নেয়। ফলে শুধুমাত্র লাল রংয়ের অালোকরশ্মিই অাপেল থেকে প্রতিফলিত হয়। এজন্যই অামরা অাপেলকে লাল দেখি।
অাজকে অার নয়। অাগামী পর্বে অাবারও অাপনাদের সামনে নতুন কোন বিষয় নিয়ে হাজির হবো ইনশাঅাল্লাহ। সবাই ভাল থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪৪