somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের গোলকধাঁধা

১৭ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Time travel তথা সময়ে ভ্রমণ কল্প বিজ্ঞানের এক বহুল অালোচিত বিষয়। ব্যাপক অপেক্ষবাদ হোক কিংবা quantum physics, কোথাও Time travel এর সম্ভাব্যতাকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই, যদিও তা এখনো তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের মাঝেই সীমাবদ্ধ অাছে। তবে সময়ে ভ্রমণ মোটেও সহজসাধ্য কোন বিষয় নয়, বরং তা বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন grandfather paradox শব্দটির সাথে অামরা প্রায় সবাই পরিচিত। একজন সময়ে ভ্রমণকারী যদি অতীতে যেয়ে তার grandfather কে হত্যা করে, তাহলে তার কোন অস্তিত্বই থাকে না। অাজকে তেমন অারেকটি সমস্যার কথা গল্পের ছলে বলবো।

একদিন খুব সকালে অামি রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম। কিছুক্ষণ হাটার পর অামি লক্ষ্য করলাম এক অপরিচিত ব্যক্তি অামার দিকেই ছুটে অাসছে, মুখে দাড়ি, এলোমেলো চুল কিন্তু চেহারা অনেকটা অামার মতই। সে অামার সামনে এসে সঙ্গে সঙ্গে অামাকে জড়িয়ে ধরলো। তার মুখে অাতঙ্কের ছাপ। অামি তাকে কিছুটা সরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে অাপনি, এমন করছেন কেন? লোকটি অাতঙ্কিত কন্ঠে জবাব দিল যে সে ভবিষ্যতের অামি, ২ বছর পরের সময় থেকে সে অতীতের এই সময়ে এসেছে অামার জীবন বাঁচাতে! তার কথাগুলোর অর্থ অামি কিছুই বুঝলাম না, মনে মনে ভাবলাম হয়ত লোকটা পাগল। লোকটা অাবার বলতে লাগলো, "অার সামনে যেয়ো না, তুমি মারা যাবে"!! এবার অামি বিরক্ত হয়ে গেলাম। লোকটাকে সরিয়ে দিয়ে বললাম, "যান তো এখান থেকে"। তারপর অাবার সামনে হাটতে শুরু করলাম। কিন্তু লোকটা নাছোড়বান্দা, পিছন থেকে অামার হাত টেনে ধরলো, বললো, "বিশ্বাস করো অামি মিথ্যা বলছি না, অামি সত্যিই ভবিষ্যত থেকে এসেছি তোমাকে বাঁচাতে, কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি accident করে মারা যাবে"! তার কথা শুনে অামি প্রচন্ড রেগে গেলাম। ধাক্কা দিয়ে অামি তাকে ফেলে দিলাম। লোকটা থেকে পিছু ছাড়াতে অামি রাস্তা ক্রস করে অপরপাশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম. তাড়াহুড়া করে যখনই রাস্তা পাড় হতে নিলাম, একটা গাড়ি খুব স্পিডে অামার দিকে ছুটে এলো, অামি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না যে কি করবো, খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিল মৃত্যু অাসন্ন। গাড়িটা যখন অামাকে ধাক্কা দেয়ার দ্বারপ্রান্তে, হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন অামাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দিলো। তারপর একটা শব্দ হলো, অামিও রাস্তার ধারে পড়ে গেলাম। উঠে দাড়িয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি সেই অপরিচিত লোকটা রাস্তায় ছটফট করছে, পুরো শরীর রক্তে ভেসে গেছে। সে অামাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই অাহত হয়েছে। অামি দ্রুত তার কাছে গেলাম, চিৎকার করতে লাগলাম সাহায্যের জন্য। লোকটি অামার হাত চেপে ধরে বললো, "কাউকে ডেকে লাভ নেই, অামার মৃত্যু এখানেই হবে। অামি তোমাকে মিথ্যা বলছি না, অামি ভবিষ্যতের তুমি। দুবছর লেগেছিল অামার টাইম মেশিন তৈরী করতে। এটা তৈরী করেছিলাম যেন অতীতে এসে এই accident টা প্রতিরোধ করতে পারি, তোমাকে বাঁচাতে পারি, তথা নিজের জীবনকেই বাঁচাতে পারি, কিন্তু পারলাম না। তুমি অাজকে থেকেই কঠোর পরিশ্রম করো, একটা টাইম মেশিন তৈরী করো। তারপর সেই টাইম মেশিন দিয়ে অতীতের এই সময়ে এসে এই accident থেকে নিজেকে রক্ষা করো"। এই কথা বলার পরপরই লোকটা অামার হাতের উপর নিজের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। অামার অার বুঝতে বাঁকি রইলো না যে ওই লোকটা অাসলে অামিই ছিলাম।

যাই হোক, এরপর টাইম মেশিন বানানোর কাজে মনযোগ দিলাম। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করতে লাগলাম। দুবছর পর অামার পরিশ্রম সফলতার মুখ দেখলো, অামি টাইম মেশিন তৈরী করে ফেললাম। টাইম মেশিন তৈরীর কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে নিজের দাড়িগুলোও কাটার সময় পাইনি, চুল গুলোও বেশ বড় হয়ে গেছে, এলোমেলো অার অগোছালো। সে যাই হোক, অাগে নিজেকে তো বাঁচাতে হবে, মনে মনে ভাবলাম অার এক মূহূর্ত্বও সময় নষ্ট করলে চলবে না, এক্ষুণি অতীতে যেয়ে নিজেকে বাঁচাতে হবে accident এর হাত থেকে। টাইম মেশিনে চড়ে পাড়ি দিলাম সেই accident ঘটার ঠিক পূর্ব মূহূর্ত্বে। গিয়ে দেখি অতীতের অামি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। তাকে দেখে অামার মন অানন্দে অাত্মহারা হয়ে উঠলো। অামি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু সে মনে হয় অামাকে চিনতে পারছে না! অামাকে সরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কে অাপনি, এমন করছেন কেন"? অামি তাকে জবাব দিলাম যে অামি দুবছর পরের সময় থেকে অতীতের এই সময়ে এসেছি তার জীবন বাঁচাতে। তবুও সে অামার কথার অর্থ কিছুই বুঝলো না! তখন অামি অাবার তাকে বললাম, "অার সামনে যেয়ো না, তুমি মারা যাবে"। কিন্তু সে উল্টো অামার উপর বিরক্ত হয়ে বললো, "যান তো এখান থেকে"!! তারপর সে অাবার সামনে হাটতে শুরু করলো। অামিও নাছোড়বান্দা, পেছন থেকে ওর হাতটা টেনে ধরলাম, বললাম " বিশ্বাস করো অামি মিথ্যা বলছি না, অামি সত্যিই ভবিষ্যত থেকে এসেছি তোমাকে বাঁচাতে, কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি accident করে মারা যাবে"। কিন্তু অামার কথায় সে খুব রাগ করলো, ধাক্কা দিয়ে অামাকে ফেলে দিলো। তারপর তাড়াহুড়া করে রাস্তা ক্রস করার চেষ্টা করতে লাগলো সে। অামি বুঝতে পারলাম এখনই সেই মূহূর্ত্ব যখন গাড়িটি ওকে ধাক্কা দিবে। ওর যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে অামারও কোন অস্তিত্ব থাকবে না। তাই দেরি না করে দৌড়ে গিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে গাড়িটির সামনে থেকে সরিয়ে দিলাম। গাড়িটি অামাকে সজোরে অাঘাত করলো। পুরো শরীর রক্তে ভেসে গেছে অামার, বুঝতে পারলাম যে এটাই অামার জীবনের শেষ মূহূর্ত্ব। হঠাৎ দেখলাম অতীতের অামি অামার কাছে ছুটে এলো। অামি ওর হাত চেপে ধরলাম, বললাম, "কাউকে ডেকে লাভ নেই, অামার মৃত্যু এখানেই হবে। অামি তোমাকে মিথ্যা বলছি না, অামি ভবিষ্যতের তুমি। দুবছর লেগেছিল অামার টাইম মেশিন তৈরী করতে। এটা তৈরী করেছিলাম যেন অতীতে এসে এই accident টা প্রতিরোধ করতে পারি, তোমাকে বাঁচাতে পারি, তথা নিজের জীবনকেই বাঁচাতে পারি, কিন্তু পারলাম না। তুমি অাজকে থেকেই কঠোর পরিশ্রম করো, একটা টাইম মেশিন তৈরী করো। তারপর সেই টাইম মেশিন দিয়ে অতীতের এই সময়ে এসে এই accident থেকে নিজেকে রক্ষা করো"...

গল্পটি কাল্পনিক হলেও Time travel এর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়াতে পারে। অামরা যদি নিজেদের সময় থেকে অতীতের কোন সময়ে ভ্রমণ করি, তখন সময়ের স্বাভাবিক পথের সঙ্গে অারও একটি বিকল্প পথ তৈরী হবে। অার এই দুটি পথ মিলে দুটি ভিন্ন সময়ের মাঝে সময়ের একটা পর্যায়ক্রমিক প্রবাহ তৈরী করতে পারে, যার ফলে সময়ের একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে একই ঘটনা পর্যায়ক্রমে বার বার ঘটতে পারে। যাই হোক, এটা সময়ই বলে দিবে, তবে অাপাত দৃষ্টিতে সময়ে ভ্রমণ যতটা জটিল, তার চেয়েও বেশি জটিল বিষয় অতীতে ভ্রমণ করা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:২২
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×