somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফারকীর ডুব ও আমাদের হুমায়ুন আহমেদ

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বলে নেই, আমি ফারুকীর কাজের ভক্ত। তার কাজ অন্যদের থেকে আলাদা। নিঃশন্দেহে ডুবও তার ব্যতিক্রম না । তাই তার ডুব ছবি নিয়ে কোন কথা হবে না, হবে ছবির বিষয় নির্বাচনে । ফারুকী বলেছেন, ডুব হুমায়ুন আহমেদের জীবনী না, জীবন থেকে অনুপ্রাণিত মাত্র । অনেকেই বলছেন হুমায়ুন আহমেদকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ডুবে ডুব দিতে, তবেই ডুবের মজাটা পাওয়া যাবে ।
কিন্তু গত ২৬ জুন হলিউড রিপোর্টার এবং ২৮ জুলাই ভ্যারাইটি প্রকাশ করে ডুব ছবির রিভিউ। সেখানে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় লেখক ও চলচ্চিত্রকারের জীবন থেকে নির্মিত হয়েছে ডুব। ছবির চলচ্চিত্রকারের সম্পর্ক হয় কন্যার সহপাঠীর সঙ্গে। ভ্যারাইটি লিখেছে, পারিবারিক সংকট চমৎকরভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন শুধুমাত্র দৃশ্যের কারিশমায়। হলিউড রিপোর্টার লিখেছে, দীর্ঘদিনের সংসার ও মর্যাদাবান একজন স্ত্রী ও টিনএজ সন্তানদের রেখে সেই চলচ্চিত্রকার বিয়ে করেন কন্যার সহপাঠীকে। মানুষের অহংকার ও অভিমান একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সবাইকে কীভাবে বেদনায় ডুবিয়ে দেয় সেই গল্পই এ সিনেমায় দেখানো হয়েছে। ( তথ্যসূত্র প্রথম আলো ) - আমাদের হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে এই ম্যাসেজটাই ফারুকী তার ডুব ছবির মাধ্যমে সারা বিশ্বকে জানিয়েছেন ।
হুমায়ুন আহমেদ আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। কিন্তু বলতে দ্বিধা নেই, তাঁর বিতর্কীত অসম দ্বিতীয় বিয়ে তাঁর জীবনের এক কালো অধ্যায়। তার এই বিতর্কীত অসম বিয়ে আমরা মেনে নিয়েছি ঠিক কিন্তু মনে নিতে পারি নি । কারণ এটা আমাদের অহংকারের বুকে একটি কালো দাগ । তাই বলে এই দাগ আমরা দশজনকে বলে বেড়াতেও চাই না, বলতে ভালও লাগে না ।
তাঁকে সমাহিত করার উপযুক্ত স্থান ছিল জাতীয় কবির পাশে। কিন্তু কার কারণে, কিসের জন্যে উনাকে নুহাস পল্লীতে সমাহিত করা হয়েছে তা ফারুকীর মত আমরাও জানি। যেমন জানি স্যারের চিকিৎসা কালে আমেরিকার ঘটনাবলি। সে সব আমরাও মানতে পারি নি, আমাদেরও পুড়িয়েছে - কেননা হুমায়ুন আহমেদ স্যার শুধুমাত্র একজন স্বামী বা একজন বাবাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলা ভাষাভাষী সবার অহংকার ।
এখন প্রশ্ন হলো, ফারুকীর আশেপাশের নাড়া দেয়ার মত আর কি কোন ঘটনা ছিল না - যে স্যারের জীবনের কালো অধ্যায়টা নিয়েই তাকে ছবি বানাতে হবে ?
মহাত্মা গান্ধী কৌমার্যব্রত চর্চার জন্য নিজের ভাতিজার কন্যা, মৃদুলার সাথে রাতের পর রাত এক বিছানায় ঘুমিয়েছেন ! - একবার ভাবুনতো ভারতের কোন পরিচালক এই বিষয়টা নিয়ে ছবি বানাবে কি না ?
অথবা রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রেম নিয়ে কলকাতার কোন পরিচালক ছবি বানাবে কি না ?
ছাড়ুন এ সব, ফারুকী ছবির মানুষ, ছবি দিয়েই বলি - পাল হার্বার নিয়ে আমেরিকান ও জাপানী দুই দেশের পরিচালকরাই ছবি বানিয়েছে । হলিউডের ছবিতে জ্বলন্ত ডুবন্ত জাহাজের ডেকে একটা রাইফেল নিয়ে একজন আমেরিকান সোলজারকে জাপানী যুদ্ধ বিমানের বিরুদ্ধে একাই লড়তে দেখি । অন্যদিকে জাপানী ছবিতে দেখি একজন জাপানী পাইলট বোমা ফুরিয়ে গেলে তার যুদ্ধ বিমানটা নিয়ে কিভাবে আমেরিকার যুদ্ধ জাহাজের ডেকে আছড়ে পড়ে ! এর উল্টোটা কখনও দেখি নি । কখনও হলিউডের ছবিতে জাপানী সোলজারের বীরত্ব বা জাপানী ছবিতে আমেরিকান সোলজারের বীরত্ব দেখি নি। এখানেই একজন পরিচালকের দায়বদ্ধতা - তার সমাজের প্রতি, তার ভাষার প্রতি তার সংস্কৃতির প্রতি । আর এখানেই ফারুকী ব্যর্থ ।
ঘটনা মনকে যতই নাড়া দিক, সব ঘটনা নিয়ে ছবি বানানো যায় না, বানাতেও নেই । ফারুকী কি বিষয়টা জানেন না ? জানেন, উনি জেনে বুঝেই তরুণদের জন্য ডুব বানিয়েছেন, তরুনদেরই প্রিয় মানুষটার জীবনের একমাত্র মন্দ দিকটা নিয়ে। বর্তমানের বাংলা সাহিত্যের সব চেয়ে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী লেখকের সাহিত্য কর্মকে যেখানে আমাদের বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবার কথা, সেখানে তা না করে আমরা উনার কন্যার বান্ধবীকে বিয়ে করার খবরটা সবার কাছে তুলে ধরলাম ?
জয়তু ফারুকী !
( শেষ কথা :- ডুব ছবিটি এক বাবা ও তার কন্যার মনোবেদনার ছবি । কিন্তু আমার কেবলই মনে হয়, আজ যদি ফারুকীর স্ত্রী, তিসার বয়স +/- পঞ্চাশ হতো, তা হলে ছবিটা হয়ত একজন স্বামী ও তার স্ত্রীর হতো। যে স্ত্রী তার কন্যার বান্ধবীর কাছে রাজা ও রাজ্য দুই হারিয়েছেন ।)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৭
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×