somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামহোয়্যার ইন আন্দোলন (ব্লগান্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ময়না তদন্ত)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি কঠিন গবেষনাধর্মী পোস্ট।


ঘটনার শুরুঃ
ব্লগে পোস্ট আসছে একটার পর একটা। কোনটা ১৮+, কোনটা ১৮-, কোনটা জ্বালাময়ী রাজনৈতিক পোস্ট আবার কোনটা ক্যাচাল পোস্ট।
হঠাৎ করে কেউ দিলো পোস্টঃ
"টুনির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে! টুনির মা করছেনটা কী? (সরজমিনে টুনির বাসা থেকে ঘুরে এসে লেখা পোস্ট)"
নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। টুনির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে! এ কীভাবে সম্ভব? পরক্ষনেই মনে হলো এ দেশে সবই সম্ভব।
তারপরেও নিজের মাথায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখা দেয়। যে জাতি জন্ম দিয়েছে ৫২, ৬৯, ৭১, ৯১ সেই জাতি আবার টুনির বিয়ে দেয় কীভাবে? আমরা কি আমাদের মনুষত্ত্বকে কবর দিয়ে দিয়েছি? আমরা কি বিকিয়ে দিয়েছি আমাদের বিবেক? প্রশ্নের উত্তর খুজলাম। পেলাম না। চোখ ভিজে গেলো জলে।
দজ্জাল মহিলা টুনির মা। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়েছিলাম টুনির বাসার অবস্থা দেখতে। বুড়ি কীভাবে যেনো টের পেয়ে গেলো আমার উপস্থিতি। ধরে দিলো মাইর। আমার ঠোট ভিজে গেলো রক্তে। রক্ত গঙ্গা বয়ে গেলো কপালের কোনে। তারপর কঠিন ভাষায় বললো "আর যদি দেখি...!!"
ব্লগার ভাইদের কাছে আমি বলতে চাই... আর কতো রক্ত ঝরবে? আর কতো টুনি পর হয়ে যাবে? আর কতোকাল টুনি মায়েরা আমাদের পিঠের চামড়া তুলবে?
আমরা কী উঠে দাড়াবো না?


আগুনে ঘি ঢালাঃ
ধীরে ধীরে কমেন্ট পড়তে থাকে টুনি বিষয়ক সেই পোস্টে। কমেন্টের নমুনাঃ
- ও মাই গড! এসব কী হচ্ছে? টুনির মাকে ধিক্কার।
- ভাই আপনাকে স্যালুট। আপনি যা করলেন! আপনার কথা আমরা কখনো ভুলবো না।
- আমাদের কি কিছুই করার নেই?
- যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন প্লিজ। টুনির মা কি পেয়েছেন?
- তোমার ভয় নেই টুনি। আমরা এখনো মরে যাইনি।
- টুনি তোমার ভয় নাই। লক্ষ টোনা তোমার চাচাতো ভাই।

বলা বাহুল্য প্রায় সব কমেন্টের সাথেই বলা থাকে "পোস্ট স্টিকি করা হোক"

ত্যাড়া কমেন্টও থাকে অনেক। এগুলো করেন সাধারণত ক্যাচালবাজ ব্লগাররা।
নমুনাঃ
- ছাগু মডারেশন। এই পোস্ট স্টিকি করবে না। তারা তলে তলে টুনির মার টাকা খেয়ে বসে আছে। ধিক! সামুর মডু তোমায় ধিক।

- বালের ব্লগ, বালের মডু। প্রথম পাতায় বালছাল ঝুলাইয়্যা রাখছো। লাত্থি মারতে মুঞ্চায়। এই পোস্ট স্টিকি করতে সমস্যা কী?

- ভাদা মডু। এই পোস্ট জীবনেও এরা স্টিকি করবে না। আমাদের উচিত ফেসবুকে এই পোস্ট শেয়ার করে ছড়িয়ে দেয়া।

- জানি স্টিকি হবে না। দালাল ব্লগ। এদের কাছ থেকে বেশী আশা করাই অন্যায়।



অবশেষে পোস্ট স্টিকিঃ
অনেক আলোচনা সমালোচনারর পর মডুরাম কাংখিত হিট পাবার পরে স্টিকি করেন পোস্ট। যিনি আগে বলেছিলেন "জানি স্টিকি হবে না" তিনিই আবার বলেন, "ধন্যবাদ মডারেশনকে স্টিকি করার জন্য"


কর্ম পরিকল্পনাঃ
একের পর এক পরিকল্পনার কথা আসতে থাকে কমেন্টে। যেমনঃ


- ঝাড়ু মিছিলঃ টুনির মায়ের বিপক্ষে ঝাড়ু মিছিল করা হবে আগামী শনিবার। আমাদেরকে প্রয়োজনে কাজি অফিস ঘেরাও দিতে হবে। বিয়ে নিষিদ্ধ করতে হবে। টুনির বিয়ে ঠেকাতেই হবে।
- প্রতিকি তালাকঃ টুনির বিয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান জানাতে প্রতীকি তালাক অনুষ্টান আয়োজন করতে হবে।
- কুশুপুত্তুলিকা দাহঃ যে কাজী বিয়ে পড়াবে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করতে হবে।
-


সম্পুরক পোস্ট ও কমেন্টঃ
স্টিকি পোস্টের পাশাপাশি আসে কিছু সম্পুরক পোস্ট। নিজ নিজ রাজনৈতিক আদর্শের উপর ভিত্তি করেই লেখা হয় পোস্টগুলো।
বামপন্থিদের পোস্টঃ
উপনৈবেশিক আগ্রাসন আর কতো? সম্রাজ্যবাদী টুনির মা-র চোখ রাঙ্গানী আমরা আর সহ্য করবো না। ডাক দিয়ে গেলাম ভাই সকল। রাস্তায় নামো। নেমে দেখিয়ে দাও আমাদের শক্তি। টুনির বিয়ে ভেঙ্গে দাও সবাই।


আওয়ামীপন্থিদের পোস্টঃ
সরকার একটু বাড়াবাড়িই করছে আসলে। টুনির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ঠিক। এটা সরকারেরই ব্যার্থতা। কিন্তু সব ব্যার্থতার দায় কী কেবল সরকারের? না। এখানে টুনিরও দোষ আছে। তাছাড়া আমরা জেনেছি টুনির এক খালু বি এন পি-র রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার ধারনা তাই এটা আসলে বিএনপিরও চক্রান্ত।


বিএনপি ও জামাত পন্থিদের পোস্টঃ
ছিহ ছিহ ছিহ। শেখ হাসিনা আর কতো ভারতের দালালী করবেন? টুনির বিয়ে ঠেকাতে পারেন না ক্ষমতায় থেকে কী লাভ? মধ্যবর্তী নির্বাচন দেন। আমাদের হাতে ছেড়ে দেন।


বিবিধ পোস্টঃ
আচ্ছা! সবাই তো চিল্লাচ্ছে। আমার প্রশ্ন অন্য যায়গায়। টুনির বাবা কী করছেন? কেনো আমরা কেবল টুনির মা কে নিয়ে পড়ে আছি? টুনির বাবার কি কোন ভুমিকাই নেই?


ডক্টর জাফর ইকবালঃ
জাতীয়তাবাদী ও ছাগুবাদীদের পুরোনো জ্বলুনী মাথা দিয়ে উঠে এই চান্সে। জাফর ইকবাল বার বার জামাতিদের আন্ডু খুলে ফেলেন - তাই তারা এবার আক্রমন করা শুরু করবে জাফর ইকবালকে।
নমুনাঃ টুনির বিয়ে নিয়ে জাফর ইকবাল নীরব কেনো? কই? জামাত ইস্যুতে তো তিনি নীরব থাকেন না। ন্যাংটু করে দেন জামাতিদের। তাহলে এবার নীরব কেনো জবাব দাউউউউ।



আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকেঃ
- ফেসবুকে বাম, ডান, ছাগুদের হিডেন গ্রুপগুলো সজাগ হয়ে উঠে এর মাঝে।
- ফেসবুকে খোলা হয় ইভেন্ট।
- অত্যান্ত বিনোদনমূলক ক্যাচাল দেখা যায় সামু ও আমুর কিছু ব্লগারদের। আমুর একজন ব্লগারের সাথে এক বাক্যে সুর মেলান আমার ব্লগে ডট কম-এর বাকি সব ব্লগার।
- নিখিল বঙ্গ মডু সমাজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন যে "টুনির বিয়ে ঠেকাতে হলে সাইবার আইন জরুরী।"
- যাই হোক... আন্দোলনের ব্যাপারে প্ল্যান করা কখন কী করা হবে, কখন করা হবে।




সবশেষেঃ
সব শেষে এসে সাধারণত দুটি ঘটনা ঘটে।

ঘটনা একঃ সবাই আস্তে আস্তে টুনির কথা ভুলে যায়। টুনির বিয়ে হয়ে যায়। টুনি নতুন সংসারে সুখে শান্তিতে বসবাস শুরু করে।
ঘটনা দুইঃ শাহবাগে মিটিং হয়। ব্লগে ফেসবুকে সেই মিটিং এর ছবি আপলোড করা হয়। তারপর সবার কাজ শেষ হয়ে যায়।
টুনি চলে যায় পরের ঘরে। পরে অন্য কোন সময় আবার সবাই টুনির বোন মনিকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
তারপর... জানতে ইচ্ছে করলে লেখাটি আবার প্রথম থেকে পড়া শুরু করে দিতে পারেন।
******************************************************************


** আধা ঘন্টায় লেখা। প্রচুর টাইপো থাকার কথা। আস্তে আস্তে ঠিক করবো। :)
এক কপি থাকলো পার্সোনাল ব্লগে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:০০
৫৮টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×