somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ১২ মার্চ দর্শন কিংবা অতি সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা ১২ মার্চ, ২০১২

১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৪/২৫ বছরের এক ছেলে আসলেন টিভি পর্দায়। চোখে সানগ্লাস। মুখে ঘাম। একুশে টিভির মাইকের সামনে তিনি বললেন, "আমি আরাফাত রহমান রনী। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য। আমরা আজকে রাস্তায় নেমেছি আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে।"

"ছাত্রলীগ নেমেছে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে" কথাটি শুনে প্রথমেই যে কথাটি মনে আসলো সেটা হলো - শেয়াল পাহারা দেবে মুরগী!!
তারপর মনে আসলো কিছু প্রশ্ন - ছাত্রলীগ কেনো আইন শৃংখলা রক্ষা করার জন্য নামবে? ছাত্রলীগ কি আইনশৃংখলা বাহীনির কোন অংশ? এর মাধ্যমে কী প্রমানিত হলো? আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনির ব্যার্থতা নাকি ছাত্রলীগ সামাল দিতে আওয়ামীলীগের ব্যার্থতা?

ঢাকার রাস্তায় নিষিদ্ধ করা হলো সব ধরনের অস্ত্র। কিন্তু লগি বৈঠা নিয়ে আক্রমনাত্মক ভঙ্গীতে রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেলো ছাত্রলীগ কর্মীদের।

ক্ষমতা গ্রহনের একেবারে প্রথম দিন থেকেই বেপরোয়া ছাত্রলীগের বিপক্ষে এতো এতো অভিযোগ জমা হয়েছে এবং হচ্ছে। আওয়ামীলীগও নিজেও বিব্রত হয়েছে ছাত্রলীগের ভূমিকায়।
যেখানে সরকারের উচিত ছিলো ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রন করা সেখানে দেখলাম উলটোটা। সরকার ক্রমাগত লায় দিয়ে যাচ্ছে "ছাত্রলীগ" নামের এই অনুমোদন প্রাপ্ত সন্ত্রাসী বাহীনিকে। আইন শৃংখলা বাহীনি-র সমান্তরালে দাড় করিয়ে দিয়েছে তাদেরকে।

এই ঘটনাকে আমি যদি আরো অশুভ কিছুর ইঙ্গিত বলে ধরে নেই তাহলে কি কেউ আমাকে দোষ দিতে পারবে?


১২ মার্চকে "আওয়ামীলীগের স্ববিরোধীতা প্রদর্শনী দিবস" বললে খুব বেশী ভুল হবে বলে মনে হয় না।
২০০৮ সালে আমি ভোটার ছিলাম না। তারপরেও ১৮ বছর বয়সী এক নাগরিকের দৃষ্টি দিয়ে তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতোটা সম্ভব দেখার চেষ্টা করেছিলাম।
সত্যি কথা বলতে কী এই সরকারকে আমি বেশ "স্মার্ট" সরকার মনে করেছিলাম প্রথমে। আমার ভুল ভাংতে অবশ্য খুব বেশী দেরী হয়নি।
নিজেই বুঝে গিয়েছিলাম- যে সরকার বিরোধীদলকে সংসদে সামনের সারীর দুইটা আসন দিয়ে দেবার উদারতাটুকু না দেখিয়ে মুখে তুলে বিরোধীদলকে ইস্যু গিলিয়ে দেয় সে সরকারের কাছ থেকে খুব বেশী সহনশীলতা আশা করা ঠিক না।

আওয়ামীলীগের অসহনশীলতার চরম দৃশ্যায়নটা মনে হয় আজকেই হলো। মুখে যে সরকার ক্রমাগত বাক স্বাধীনতা আর গনমাধ্যমের স্বাধীনতার বুলি আওড়ায় সে সরকার কীভাবে বিরোধীদলের জনসভা সরাসরি সম্প্রচারের উপর নিষেদাজ্ঞা আরোপ করে কোন যুক্তি দিয়েই আমি সেটা বুঝতে পারি না।
সরকার গোলাম আজমকে ধরতে ৩ বছর সময় নেয়, কারাবন্দি গোলাম আজমকে আচার সরবরাহ করে, রাজার হালে থাকার ব্যাবস্থা করে দেয় কিন্তু বিরোধীদলের জনসভা সম্প্রচারের অনুমতি দেয় না! ব্যাপারটাকে কী বিশেষন দেয়া যায় বুঝতে পারছি না।

আওয়ামীলীগ নিজের অজান্তেই কি বিএনপির জনসভাকে অনেক বেশী গুরুতপূর্ণ করে তুললো না?
আমার ব্যাক্তিগত ধারনা খালেদা জিয়ার কন্ঠে এমন কোন জাদুকরী ক্ষমতা নেই কিংবা এমন বাচনশৈলীও তার নেই যেটার কারনে সবার রক্তে কাপন ধরবে, তার বক্তব্য শুনে পুরো দেশের মানুষ সরকারের পতনের জন্য রাস্তায় নেমে আসবে।
খালেদা জিয়ার বক্তব্য জানার আগ্রহ জানার যাদের আছে তারা টেলিভিশনে দেখালেও সেটা জানবে, না দেখালেও জানবে।
অন্যরা অন্য কিছু বললেও বলতে পারেন। তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে জনসভা সম্প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকে বলবো - এটা জাস্ট একটা গোয়ার্তুমি।

আমার মনে আছে আওয়ামীলীগ যখন বিরোধীদলে ছিলো বিএনপি সরকার তখন আওয়ামীলীগের জনসভায় বেশী মাইক ব্যবহার করতে দিতো না। অজুহাত ছিলো- "শব্দ দূষন হবে"। এসব করে আখেরে বিএনপি-র কি কোন লাভ হয়েছিলো? হয়নি।
এ থেকে কি আওয়ামীলীগের শিক্ষা নেয়া উচিত ছিলো না?
আওয়ামীলীগ কোন শিক্ষা তো নেয়ইনি, উলটো বিএনপিকে নতুন এক শিক্ষা দিয়ে দিলো - দেখো! এভাবে বিরোধীদলের গলা চেপে ধরতে হয়। তোমরা যখন ক্ষমতায় আসবে তখন এভাবে আমাদের গলা চেপে ধরো। ঠিক আছে?

সাহস করে জনসভা সরাসরি সম্প্রচার করে একুশে টিভি ও বাংলা ভিশন। কিন্তু পরে গোয়েন্দারা ক্যাবল অপারেটরদের বলে চ্যানেল দুটির সম্প্রচার সাময়ীকভাবে বন্ধ করে দেয়।
ভাবছি সম্প্রচারের "অপরাধে" এই দুই চ্যানেলকে কতোটুকু মাশুল গুনতে হবে ভবিষ্যতে। একুশে টিভি অবশ্য এরই মাঝে সরকারের চোখ রাঙ্গানী দেখে ফেলেছে।

যাই হোক, সম্প্রচার বন্ধের ব্যাপারে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন "সরকার গনমাধ্যমকে ভয় পায় না"।
তার কথা শুনে কী বলবো বুঝতে পারছি না।
আমার শুধু জানতে ইচ্ছে করে এতো স্ববিরোধী মন্তব্য আর কর্মকান্ডে কী রাজনীতিবিদদের একটুও লজ্জা লাগে না?


খালেদা জিয়ার বক্তব্যের একটা যায়গায় বলেছেন, "আমরা ক্ষমতায় গেলে আবার উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করবো"
বেগম জিয়ার কথার সব ঠিক আছে। আমার আপত্তি "আবার" শব্দটি নিয়ে।
বেগম জিয়া, আপনি কী নিজের অজান্তেই আবার ২০০১-২০০৬ সালে ফিরে যাবার ইঙ্গিত দিলেন? সরি, আপনার বক্তব্যটি তাহলে কিছু কট্টর বিএনপি সমর্থক ছাড়া আর কাউকে খুশি করতে পারবে বলে মনে হয় না। আপনার শাষন আমলও আমরা দেখেছি। আমাদেরকে জলন্ত কড়াই থেকে উনুনে নিয়ে যাবার "লোভ" না দেখালে ভালো হয়।

জনসভার ছবি দেখলাম অনেক। গোলাম আজম, নিজামীদের মুক্তি চাই লেখা অসংখ্য প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুন নিয়ে এসেছে জামাত শিবির।
খুব বেশি অবাক হইনি।
তবে আমার যদি খালেদা জিয়াকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ থাকতো তাহলে অনেক দিনের জমিয়ে রাখা প্রশ্নটা করতাম। "বেগম জিয়া, আপনার কাধে বন্দুক রেখে গুলি ছুড়ছে জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি দল। আপনার কী একটুও লজ্জা লাগে না? আপনিও তো মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে বুক ফুলানোর চেষ্টা করেন। প্লিজ বলবেন কি আপনার এবং আপনার দলের ন্যুনতম আত্মসম্মানবোধ জেগে উঠতে আর কতোদিন লাগবে? কিংবা আদৌ জেগে উঠবে কি না!"


দিন শেষে একটা প্রশ্ন হতে পারে- কে সফল হলো আজ? আমি এক বাক্যে বলবো, "নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে বিএনপি-র কর্মসূচি সফল করে দিলো আওয়ামীলীগ।"

* একইসাথে ব্যাক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:১৭
৪৬টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×