somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জানেন? ক্রসফায়ারে কিন্তু একটা মানুষ মারা যায়। আপনার মতো মানুষ। আমার মতো মানুষ।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এড়িয়ে যান প্লিজ। একটা মানুষই তো মারা যাচ্ছে। এমন বেশি কিছু না।


একটু মনে করিয়ে দেই।
ক্রসফায়ারে কিন্তু জলজ্যান্ত মানুষই মারা যায়। আপনার আমার মতোই কোন মানুষ। যার দুটো চোখ আছে। দুটো হাত আছে। দুটো পা আছে।
মাথার ভেতর একটা মস্তিষ্ক আছে। এরকম উন্নত মস্তিষ্ক আর কোন প্রাণির নেই।
তার বুকের ভেতর একটা হার্ট আছে। প্রতি মুহুর্তে হার্ট-টা পাম্প করছে। রক্ত পৌছে দিচ্ছে দেহের প্রতিটা কোষকে।
প্রতিটা কোষে আবার চলছে আরো জটিল সব কর্মকান্ড।

ক্রসফায়ারে যারা মারা যায় তাদের কিন্তু একটা পরিবারও আছে। সেই পরিবারে হয়তো তার খুব বুড়ো একটা মা আছে। তার হয়তো খুব ফুটফুটে দুটি শিশু আছে। একটা স্ত্রী আছে।
তারা হয়তো সারাদিন অনেক অপেক্ষায় থাকে তাদের সন্তানের, তাদের বাবার, তাদের স্বামীর।

কিন্তু... একটা গুলি শেষ করে দেয় সব।
প্রকৃতি যে মানুষটাকে তার সব কিছু দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছে একটা গুলি এসে সেই মানুষটাকে মুহুর্তে লাশ বানিয়ে দিয়ে যায়।

কোন দুর্ঘটনায় মানুষটা মারা গেলে সমস্যা ছিলো না।
কোন দুষ্কৃতিকারীর গুলিতে মারা গেলে সমস্যা ছিলো না।
মানুষটা মারা যায় এদেশের "আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী"র গুলিতে।

ধরুন কাল সকালে আমি বাসা থেকে বের হলাম। "ক্রসফায়ার"এর কবলে পড়ে মারা গেলাম। আমার ভাবতে ভয় হয় আমার পরিবারের তখন কী হবে। আমার মা-র কী হবে। আমার বাবার কী হবে। আমার ছোট্ট বোনটার কী হবে।

কিংবা ধরুন আমার বাবা অফিসে যাবার জন্য বের হলেন। ক্রসফায়ারে পড়ে বিকেলে ফিরলেন লাশ হয়ে।
আমি তখন কোথায় যাবো? আমার মা-র, আমার বোনের তখন কী হবে?
আমি ভাবি না। ভাবতে চাইও না।

যে মানুষগুলো ক্রসফায়ারে পড়ে মারা যায় আমি হলফ করে বলে দিতে পারি তাদের পরিবারের কেউও এরকম কিছু ভাবেনি। কিংবা ভাবলেও পরক্ষণেই শিউরে উঠতো তারা।

কিন্তু সত্যটা হচ্ছে - মানুষগুলো "ক্রসফায়ারে" মারা যাচ্ছে। তাদের পরিবারগুলোকে খুব নির্মম একটা সত্য হজম করতে হচ্ছে।
যে মানুষটাকে হত্যা করা হলো তার সন্তানরা কোনদিন কারো কাছে বিচার চাইতে পারবে না। এক অসহায় আক্রোশ নিয়ে তারা পিতা হারানোর কষ্টটা বয়ে বেড়াবে সারা জীবন। তবু কাউকে বলতে পারবে না - "আমার বাবাকে এরা হত্যা করেছে। আমি বিচার চাই।"
রাষ্ট্র নিজেই যখন খুনী তখন বিচার করবে কে!


আমার খুব অবাক লাগে যখন দেখি রাষ্ট্র নিজেই একটা খুনী বাহিনী সৃষ্টি করে ফেলতে পারে। এই বাহিনীকে খুন করার জন্য নিয়মিত খাবার দেয়া হয়, পুষ্টি দেয়া হয়। যখন যাকে ইচ্ছা হত্যা করতে পারে এরা। এই বাহীনিকে কোন কিছুর জন্য জবাবদীহি করতে হয় না কারো কাছে। কেবল খুন করার পর একটা অদ্ভুত গল্প শুনিয়ে দিলেই হয়।

হ্যাঁ। এরা খুন করার পর খুব উৎকট একটা রসিকতা করে সেটা নিয়ে। মুখস্ত গল্পটা শুনিয়ে দেয় সবাইকে। একটা পাগলও বিশ্বাস করবে না যে গল্পটা। কেউ বিশ্বাস করেও না।
পত্রিকায় "ক্রসফায়ার" কিংবা "বন্দুকযুদ্ধ" শব্দটাকে তাই ইনভার্টেড কমার ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়।

সবাই সবকিছু জানে। সবাই বুঝে এটা অন্যায়। এটা বানানো গল্প। সবাই বুঝে এটা হত্যা। কিন্তু তারপরেও থামছে না এই হত্যাযজ্ঞ। প্রতিদিন ক্রসফায়ারে হত্যার খবর পাওয়া যায় পত্রিকায়।
এখন ক্রসফায়ারের খবরগুলো পাওয়া যায় ভেতরের পাতায়। মানুষকে ধরে ধরে এই রাষ্ট্র হত্যা করছে - এই ভয়াবহ খবরটা আমাদের কাছে অনেক স্বাভাবিক। আমরা খবরটা দেখে পাতা উল্টিয়ে যাই। পরদিন একই রকম আরেকটা খবর দেখার অপেক্ষায় থাকি।

রাতে আপনার রুমে এসে আপনাকে গলা টিপে মেরে ফেলা আর রাস্তায় গুলি করে মেরে ফেলার মধ্যে কি আসলে কোন পার্থক্য আছে? মোটেও না।

একটা মানুষ অপরাধ করেছে, তার বিচার করো। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে নিয়ে যাও। কেনো তাকে ধরেই গুলি করে মেরে ফেলতে হবে?
আমাদের মাথামোটারা কী এটা বুঝেন না যে র‍্যাব নামক এই বাহীনিটা আমাদের বিচার ব্যবস্তার ব্যার্থতার প্রতীক ছাড়া আর কিছুই না? যে বিচার ব্যাবস্থা একটা অপরাধের বিচার করতে পারে না। জন্ম দেয় আরেকটা হত্যার!


সব শেষে খুব পরিচিত একটা খবর শেয়ার করি - র‌্যাবের গুলিতে পান্থপথে যুবক নিহত

খবরটা এড়িয়ে গেছেন। তাই না?
শুনুন, এই যুবকটা আপনিও হতে পারতেন। কিংবা আগামী কাল এই যুবকটা আপনি হতে পারেন।


** রিলেটেড পোস্টঃ নরসিংদীতে র‌্যাবের বন্দুক যুদ্ধের পোস্টমর্টেম - ক্রস ফায়ার ওর সিক্স মার্ডার! - সহজ পৃথিবী

একইসাথে ব্যাক্তিগত ব্লগেও প্রকাশিত।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:২৪
৩৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×