[তালিবান বলছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অহেতুক আমেরিকাপ্রীতি অর্জনের জন্য সম্প্রতি উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ওয়াজিরিস্তানে এই সংখ্যার কয়েকগুন বেশি সংখ্যক নিরীহ নিরপরাধ শিশু-বৃদ্ধ-নারীকে হত্যা করেছে। কিন্তু বিশ্ব মিডিয়াতে বা মানবিকতাবাদীদের তরফে এ নিয়ে কোন সংবাদ, প্রচারণা, দুঃখ প্রকাশ বা অ-তালিবান শিশু-বৃদ্ধ-নারী হত্যার কোনই প্রতিবাদ দেখা যায়নি। বিশ্বমানবতার এই পক্ষপাতমূলক দ্বিচারি ভূমিকার প্রত্ত্যুত্তর হিসেবে এই প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে]
যে কারণই দর্শানো হোক—এরকম নৃশংসতা যুক্তির নয়, পাশবিকতার! সমূলে বিনাশ হওয়াই তালেবানের যথার্থ প্রাপ্য। গান্ধীর ভাষ্যটির সতত সত্যতাই দেখা যাচ্ছে—চোখের বদলে চোখ তুলে নেবার নীতি পুরো মানবজাতিকে অন্ধ বানিয়ে ছাড়বে।
আশার কথা এই যে কিছু গবেষণালব্বধ তথ্য এমন ধারণা দেয় যে তালেবানের জন্ম ও উৎপত্তিস্থলেই হয়তো এর বিনাশ হতে পারে।
.................................... ............... ............... ..................
মনোভাব গবেষণায় পিঊ রিসার্চ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয়। ২০১৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ ১১টি মুসলিম দেশে ইসলামি মৌলবাদের প্রতি মুসলমান নাগরিকদের মনোভাব গবেষণা করে দেখিয়েছে—[লিংক কমেন্টে দ্রষ্টব্য]
পাকিস্তানে ৮৯%, ইন্দোনেশিয়ায় ৮১%, নাইজেরিয়ায় ৭৮%, এবং তিউনিশিয়ায় ৭৭% মুসলিম ধর্মের নামে আত্মঘাতি হামলা বা কোন প্রকার ভায়োলেন্স কোন অবস্থাতেই যুক্তিযুক্ত মনে করেনা। [“In many of the countries surveyed, clear majorities of Muslims oppose violence in the name of Islam. Indeed, about three-quarters or more in Pakistan (89%), Indonesia (81%), Nigeria (78%) and Tunisia (77%), say suicide bombings or other acts of violence that target civilians are never justified.
আরো দেখা যায়ঃ
-- ৯২ ভাগ নাইজেরিয় ধর্মিয় কট্টরপন্থার কোন না কোন ক্ষতি চিহ্নিত করেছে।
-- ৬৭% উত্তরদাতাই উদ্বিগ্ন। মাত্র ২৭% উদ্বিগ্ন নয়।
-- আল কায়েদার প্রতি মাত্র ১৩% মুসলিমের ইতিবাচক মনোভাব আছে, ৫৭%ই আল কায়েদার প্রতি বিরূপ। অন্যরা অনিশ্চিত।
-- মাত্র ২% উত্তরদাতা নাইজেরিয়ার বোকো হারামের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
-- সেনেগালে ৭৫%, লেবাননে ৭৩%, তিউনিসিয়ায় ৭১%, মালয়েশিয়ায় ৭০% স্ব-স্ব দেশে কট্টরপন্থাবিরোধি। বিস্তার-সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন।
--নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, মিশর ও প্যালেস্টাইনের মত ঝুঁকিবহুল দেশেও যথাক্রমে ৬৯%, ৬৭%, ৬৭% ও ৬৪% মুসলিম কট্টরপন্থার প্রতি বিরূপ।
--আত্মঘাতি হামলায় যুক্তি আছে—এমন মনোভাবধারীর সংখ্যা খোদ পাকিস্তানেই ২০১৩ সালে মাত্র ৩%-এ নেমে এসেছে।
................ .................... .....................
দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-চিন্তার পার্থক্য বজায় রেখেও বিশ্বশান্তি ও বিশ্বমানবতা বিষয়ে মানুষের একক অবস্থান খুবই সম্ভব। ফেসবুক এই ভালো কাজটির শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হতে পারে।
কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে ফেসবুক প্রতিক্রিয়াশীল অমুসলিম ও মুসলিম মৌলবাদীর যথেচ্ছ উৎপাতস্থল হয়ে আছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক একটি দলকে দেখি মুক্তচিন্তা ও প্রগতিবাদের নিতান্তই মিথ্যা ভেক ধরা। আসলে অস্থিতে-মজ্জায় কট্টর সাম্প্রদায়িকই শুধু নয়, রক্তকণিকাজুড়েও লেপ্টে থাকে পরধর্মবিদ্বেষ। এরা পরধর্মের অপমান-হীনমান; ঘৃণা-শ্লেষ-ব্যাঙ্গবিদ্বেষ ছড়ানোর সুযোগের অপেক্ষায় ওঁত পেতে থাকে। এই দলের পোস্টের পর পোস্টে দেখছি শতশত মিথ্যা ও উগ্রতম বিদ্বেষভঙ্গির নির্বিকার ও নির্বিচার প্রচারণা।
সেরকম একগুচ্ছ অভি্যোগের একটি নিতান্ত ক্ষুদ্র অংশকে সংক্ষিপ্ত করলে যা দাঁড়ায়—সব মুসলিমই তালেবানমনস্ক; এসব ধ্বংসযজ্ঞে আম-মুসলিমেরও সায় থাকে বলে তাদের মধ্যে উ্দ্বেগ-টুদ্বেগ নেই;এসব দুষ্কর্ম ইসলাম-অনুমোদিত নয় দাবীটি মিথ্যা; ফেসবুক ফাটিয়ে পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ জানায়না [এই ক্যানো, হ্যান ক্যানো, এখন কোথায়, তখন কোথায় জাতিয় কটুক্তিসহযোগে] বলেই বোঝা যায় এদের ধর্মবিশ্বাস বিবেকবর্জিত পশুদের ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদি।
বিদ্বেষচর্চ্চাগুলো নিয়ে নির্মোহ গবেষণাধর্মি আলোচনায় বসতে গেলে বছর বছর লেগে যাবে।
সবচে’ নিরীহ ও কম ক্ষতিকর অনুযোগগুচ্ছও যে অযথার্থ— উপরের তথ্য-প্রমানগুলো কি তাই নির্দেশ করেনা?
আশা করি অতি-সাধারনিকৃত পরধর্মবিদ্বেষি সাম্প্রদায়িকতা হতে প্রগতির ভেকধারী সাম্প্রদায়িক ফেসবুকারগণ নিরত হবেন।
বিশেষ দ্রস্টব্যঃ এই লেখাটি আমার এক শ্রদ্ধেয় স্যারের লেখা। আমি স্যারের অনুমতি নিয়ে আমার প্রিয় ‘সামু’তে পোস্ট করলাম। পেশোয়ার ঘটনা জানার পর থেকে মনের মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ওরা কোন ইসলামের কথা প্রচার করছে??? সে ইসলামকে আমরা চিনি না। সত্যি চিনি না। আমি এমন একটা লেখাই লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞানে তা কুলোয়নি। তাই স্যারের স্মরণাপন্ন হলাম।
পিউ রিসার্র্চ এর জরিপ লিঙ্কঃ View this link
আর একটি লিঙ্কঃ View this link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০০