somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন অনুরাগীর লেখণিতে স্টিফেন হকিং এবং তার ধর্ম বিশ্বাস

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্টিফেন হকিং এর ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) বইটি পড়েছিলাম যখন আমি মিডল স্কুলে পড়ি এবং এটা অসাধারণ লেগেছিল। আর আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি তখন তার সাথে সামনাসামনি কথা বলার সুযোগ হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা হকিং, ফিজিক্স নিয়ে পড়াশুনায় আমার আগ্রহ তৈরি হবার একটি কারণও ছিলেন। সেই আগ্রহই একসময় আমাকে নিয়ে যায় হার্ভার্ডে, যেখান থেকে আমি ফিজিক্সে একটি ডিগ্রিও অর্জন করি।
.
স্টিফেন হকিং-এর ব্যাপারে একটা জিনিস সবসময় পরিষ্কার ছিল, তিনি ছিলেন একজন বিশ্বাসী। তবে স্রষ্টায় বিশ্বাসী না, তিনি গোঁড়া নাস্তিক ছিলেন। মানবীয় বুদ্ধি ও যুক্তি একসময় “গ্র্যান্ড ইউনিফাইড থিওরি অফ এভরিথিং” খুঁজে পাবেই- এ বিশ্বাসের ওপর হকিং ঈমান এনেছিলেন। কিন্তু এরকম কোন থিওরি কি আদৌ আছে? হকিং বিশ্বাস করতেন আছে, এবং আইনস্টাইনসহ অন্যান্য আরো অনেক পদার্থবিজ্ঞানীর মতোই এ থিওরি খুঁজে বের করার পেছনে তিনি নিজের জীবন ব্যয় করেছিলেন।
.
কিন্তু এরকম কোন থিওরি যে আছে, তার প্রমাণ কী? আর এমন কোন থিওরি যে আবিষ্কার করা সম্ভব, সেটাও বা আমরা কীভাবে জানি? ফিযিক্সের একজন ছাত্র হিসেবে এ প্রশ্নগুলো আমাকে ভোগাতো। আমার প্রফেসরদের কারো কাছেই শক্ত কোন জবাব ছিল না। তারা সর্বোচ্চ যা বলতেন তার সারমর্ম হল, মহাবিশ্ব এতোই সুক্ষ এবং এতে এমনই জটিল ও অসাধারণ শৃঙ্খলা বিদ্যমান যে – এসব কিছুর মূলে কিছু একটা থাকতে বাধ্য। নিশ্চয় এর পেছনে গভীর কোন সত্য আছে! এ অবিশ্বাস্য জটিল নিয়মতান্ত্রিকতা, এ “গ্র্যান্ড ডিজাইন”- এর পেছনে নিশ্চয় কোন উদ্দেশ্য আছে, কোন কারণ আছে।
.
হকিং এর ধারণা ছিল এসব কিছুকে ঘিরে আছে একটি থিওরি, হয়তো এমন কোন সমীকরণ, যা দিয়ে সব কিছু ব্যাখ্যা করা যায়। অনেক পদার্থবিজ্ঞানী একে “গড ইকুয়েশান” বলেন।
.
এধরনের বিশ্বাসে শিরকের ব্যাপারটা স্পষ্ট। বিশেষ করে হকিং এর মতো লোকদের ক্ষেত্রে, যারা মহাবিশ্ব ও এর উৎসের ব্যাপারে এধরনের মেটাফিজিক্যাল কল্পনাবাজির পাশাপাশি কট্টরভাবে; প্রায় যুদ্ধংদেহীভাবে, স্রষ্টাকে অস্বীকার করতো। প্রচন্ড সুক্ষ ও জটিল এ মহাবিশ্বের নিয়মতান্ত্রিকতা এবং মানব মনের কাছে এর বোধগম্যতার কারণ হল, মানবমন ও মহাবিশ্বের স্রষ্টা এক ও অভিন্ন – এ সুস্পষ্ট সত্যকে মেনে নেয়ার বদলে হকিং গোয়ারের মতো মুখ ঘুরিয়ে নিজ কল্পনাপ্রসূত এক অলীক ধারনা – “গড ইকুয়েশানের”- পেছনে নিজের জীবন ব্যয় করার বেছে নেয় ।
.
হকিং এবং তার মতোই নিজেদের খেয়াল খুশির উপাসনা করা অন্যান্যদের মৃত্যুর ব্যাপারে সূরা মুলকের প্রথম দিকের বেশ কিছু আয়াত আমার কাছে বেশ প্রাসঙ্গিক মনে হয়ে। তারা নিজেদের আলোকিত মনে করলেও, আসলে তারা নিজেদের সাথে প্রতারণা করে।
.
মহা মহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব ও রাজত্ব যাঁর হাতে; তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ, স্তরে স্তরে। আর-রাহমানের সৃষ্টিতে তুমি কোন অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না; আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি? অতঃপর তোমরা বারবার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখ; ক্লান্ত, শ্রান্ত ও ব্যর্থ হয়ে সেই দৃষ্টি তোমার দিকে ফিরে আসবে। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দিয়ে সুসজ্জিত করেছি, সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি। আর যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি; কতই না নিকৃষ্ট সে প্রত্যাবর্তনস্থল! [সূরা মূলক, আয়াত ১-৬]
-
উপরোক্ত লেখাটি লিখেছেন ড্যানিয়েল হাক্বিক্বাতজু (Daniel Haqiqatjou) নামের এক আমেরিকান লেখক। তার জন্মস্থান হিউস্টন, টেক্সাস, আমেরিকা। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন যেখানে তার মেজর ছিল পদার্থবিজ্ঞান এবং দর্শনশাস্ত্র। তিনি Tufts University থেকেও দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। হাকিকাতজু প্রথাগত ইসলামী বিজ্ঞান বিষয়েও অধ্যয়ন করেন। তিনি মুসলমান এবং আধুনিকতার সমসাময়িক বিষয়গুলির উপর লেখালেখি এবং বক্তৃতা করেন। তিনি মুসলিম বিতর্ক ইনিশিয়েটিভের একজন কন্ট্রিবিউটরও।

তার ফেসবুক পেজঃ https://www.facebook.com/haqiqatjou/

অনুবাদ ফেসবুক থেকে নেয়া হয়েছে।

----

স্টিফেন হকিং এর ধর্ম বিশ্বাসঃ

নিজের বই বা বক্তৃতায় নানা প্রসঙ্গে হকিং “ঈশ্বর” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তবে তার স্ত্রীসহ অনেকে তাকে একজন নাস্তিক হিসাবে বর্ণনা করেন। ১৯৯৫ সালে শুধুমাত্র নাস্তিকতার কারণেই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। কারণ উনার সহধর্মিণী ধার্মিক মনোভাবের ছিলেন। তবে হকিং নিজে মনে করেন তিনি “সাধারণ অর্থে ধার্মিক নন” এবং তিনি বিশ্বাস করেন “দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না

কিন্তু স্রষ্টাকে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে 'যদি', 'কিন্তু', 'তবে'র কোন স্থান নেই। কারও মনে একবিন্দু পরিমাণ সন্দেহ থাকলে তাকে আর বিশ্বাসী বলা যায় না। যাইহোক, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে স্টিফেন হকিং দুনিয়াবাসীর কাছে নিজের অবস্থান একেবারে পরিস্কার করে দেন।

২০১০ সালে ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বইয়ে স্টিফেন হকিং ঈশ্বর সম্পর্কে বলছেন, ‘মহাবিশ্বকে সচল রাখার জন্য কোনো নিয়ন্ত্রক ভূমিকা নিতে ঈশ্বরকে ডাকার প্রয়োজনীয়তা নেই।’

এটা পরিস্কার নাস্তিকতা। বেচারা! যাইহোক, কে বিশ্বাসী আর কে বিশ্বাসী না তার বিচারের এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহর। বিশ্বাস মানুষের অন্তরে থাকে। আর অন্তরের খবর একমাত্র অন্তর্যামী আল্লাহই অধিক জানেন।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×