somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে শীর্ষ দেশ আয়ারল্যান্ড। 'টপ টেন'-এ সব অমুসলিম দেশ।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষা রিপোর্টে দারুণ এক তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের ২০৮টি দেশ এবং অঞ্চলের ওপর চালানো সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইসলামের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণে শীর্ষ দেশ হল উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দ্বীপ রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড। সমীক্ষার সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হল, তালিকার 'টপ টেনে' থাকা সবগুলোই অমুসলিম দেশ। মানে মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ট দেশ। তালিকার অন্যান্য দেশগুলো যথাক্রমে ডেনমার্ক, লুক্সেমবার্গ, সুইডেন, ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে এবং বেলজিয়াম।



এই তালিকায় মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে প্রথমে আছে মালয়েশিয়া। তারা আছে তালিকার ৩৩তম স্থানে। এরপর কুয়েতের অবস্থান; তারা আছে ৪৮তম স্থানে। অনেকেই কষ্ট পাবেন যখন জানবেন যে, সৌদি আরব আছে তালিকার ১৩১তম স্থানে! খুবই দুঃখজনক! বাংলাদেশের অবস্থান কততম স্থানে আছে তা তালিকায় লিঙ্কে দেয়া প্রবন্ধে নেই। তবে তালিকার প্রথম দিকে যে নেই সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

সমীক্ষক টিমের একজন সদস্য জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ইরানী অধ্যাপক হুসেন আসকারি বলেন, মুসলিম দেশগুলি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের একটি যন্ত্র হিসাবে ধর্মকে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, "এমন অনেক দেশ আছে যারা নিজেদের মুসলিম দাবী করে এবং ইসলামিক দেশ মনে করে যারা অসাধু, দুর্নীতিগ্রস্ত, ও অনুন্নত এবং তারা কোন আঙ্গিকেই ইসলামিক ভাবধারার না’।

এই সমীক্ষা একটা বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। সেটা হল মুসলিমদের ধারণা ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা না থাকলে ইসলামকে পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব নয়। এই সমীক্ষা এটি ভুল প্রমাণ করেছে। ইসলামী জীবন-যাপনের জন্য রাষ্ট্র নয় বরং নিজের ইচ্ছেশক্তিই যথেষ্ট। এই সমীক্ষাই তার প্রমাণ। তবে অমুসলিম দেশটি যদি ধর্ম পালনে বাধা দান করে সেটা ভিন্ন। যেমন, চীন উইঘুর মুসলিমদের ধর্ম পালন তথা ইসলাম ধর্মের চেতনা বিনষ্টে নান হঠকারী পন্থা অবলম্বন করছে। মায়ানমারের উদাহরণ ও দেয়া যেতে পারে।

অধিকাংশ মানুষের ধারণা ইসলাম মানে শুধু নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত, দাড়ি-টুপি-হিজাব ইত্যাদি। এগুলো ইসলামের মৌলিক জিনিষ এতে কোন দ্বিমত নেই। তবে প্রকৃত ইসলামী জীবনাচারণ ছাড়া এসব মূল্যহীন। নামাজ পড়ে যদি কেউ মিথ্যা বলে, হারাম খায়া, প্রতারণা করে তবে তা অবশ্যই ইসলামী জীবনাচরণ হবে না। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যার নামাজ তাকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেনি তার নামাজই হয়নি’।

বিশ্বের বহু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইসলামের ছাপ খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। যেমন বাংলাদেশ। আমরা নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত ইত্যাদি যাই করি না কেন, সবই সওয়াবের আশায় করি। যদিও সওয়াবের আশায় নেককাজ করা মোটেও দূষণীয় নয়। বরং এসব করার পাশাপাশি অশ্লীল ও হারাম কাজ সমানে চালিয়ে যাওয়াটাই দূষণীয়। অথচ অমুসলিম দেশের মুসলিমগণ পারিবারিক-সামাজিক ক্ষেত্র ইসলামের দর্শন ও মৌলিক নীতিমালা মেনে চলার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।

আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি; সপ্তাহে একদিন জুম’আর নামাজে খুতবা শুনি; বছরে একটা গোটা মাসজুড়ে সিয়াম সাধনা করি; পরকালে মুক্তির আশায় অনেক দান-সদকা তথা সর্বপ্রকার নেককাজ করার চেষ্টা করি। অন্য কোন ধর্মবিশ্বাসীদের বেলায় তেমনটা দেখা যায় না। এসব করার ফলস্বরূপ একজন মুসলিমের নীতি-নৈতিকতা, চিন্তা-চেতনা অতি উচ্চমানের হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হয় না। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের কথাই বিবেচনা করা যেতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য, নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রে আমরা অনেক অনেক পিছিয়ে রয়েছি।

কুরআন-হাদিসের মত অমূল্য সম্পদ থেকেও মুসলিমগণ পিছিয়ে। কারণ আমরা কুরআন-হাদিস পড়ি, কিন্তু মানি না। আমরা শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে হালাল-হারাম বিবেচনা করি। কিন্তু উপার্জনের ব্যাপারে হালাল-হারাম বাছবিচার করি না। দেদারছে সুদ-ঘুষ খাই, অপরিমেয় দুর্নীতি করি, ব্যবসায় প্রতারণা করি, অসৎ উপায়ে অধিক মুনাফা করি। পাশাপাশি হজ্বও করি, মসজিদে দান-খয়রাত করে নাম কামাই। প্রতিনিয়ত আরও বহুবিধ অন্যায়-অবিচার করি। এটা তো ইসলাম মানা নয়। এটা ইসলাম হতে পারে না।

জীবনের সবক্ষেত্রে কুরআন-হাদিসের শিক্ষা মেনে চলতে হবে। ইসলামকে শুধুমাত্র মসজিদবন্দি করে রাখলে হবে না। নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাতের মধ্যে ইসলামকে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম ২৪ ঘন্টার জন্য, গোটা জীবনের প্রতিটা ক্ষণ, প্রতি পলের জন্য। এক্ষেত্রে মহানবী (সাঃ) এর জীবন হতে পারে আমাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট, শ্রেষ্ঠতম উদাহরণ। তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আল-আহজাব, আয়াত: ২১)

তাই নবী করিম (সা.)-এর সুমহান জীবনাদর্শ থেকে মানুষের প্রতি সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয়ী চরিত্র, বিনম্র ব্যক্তিত্ব, আনুগত্যতা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনসেবা ও মানবকল্যাণ সুনিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ আমাদের ইসলামের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণের তৌফিক দান করুন। আমিন।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

লিঙ্কঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৩
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×