ছেলেটা অপরাধীর মতো মেয়েটার পাশে দাড়িয়ে আছে। আর মেয়েটা জেরা করে যাচ্ছে অনবরত।
- কি? আমাকে ভালোবাসো?
- হুম।
- খুব বেশী?
- হুম।
- প্রেম করতে চাও?
- হুম।
- আমি কিন্তু ডেঞ্জারাস টাইপ মেয়ে। দুদিন পর প্রেম করার শখ মিটে যাবে নাতো?
- না।
- আমার সাথে প্রেম করতে হলে অনেক শর্ত মেনে চলতে হবে। পারবা?
- পারবো।
- শর্ত না শুনেই পারবা?
- হুম।
- তবুও বলে নিচ্ছি। যখন তখন দেখা করতে চাইবে না।
- আচ্ছা।
- রিকসায় উঠলে আমার চেয়ে চার আঙ্গুল দূরে বসবা। অযথা রোদ, বৃষ্টি, ঠান্ডা বলে রিকসার হুড উঠানোর চেষ্টা করবা না।
- আচ্ছা।
- রাস্তা পাড় হওয়া, রিকসায় উঠা ইত্যাদি নানান অজুহাতে হাত ধরতে চাইবে না। এতোদিন একাই চলেছি। এসব আমি ভালোই পারি। আমার কেয়ার আমি নিজেই করতে পারি।
- আচ্ছা।
- আর সর্বশেষ কথা আমার সাথে প্রেম করবা ভালো কথা কিন্তু আলগা পিরিতি দেখাবা না। এসব আমার সহ্য হয়না। আলগা পিরিতি কি বোঝ তো?
- হুম বুঝি। আচ্ছা দেখাবো না। মাত্র এই ক'টা শর্ত।
- আপাতত এই ক'টাই। পরে লাগলে আরোও দিবো।
ছেলেটা মনে মনে ভাবছে, এই মেয়ে তো দেখি খাড়া দজ্জাল। দজ্জাল মেয়েদের সাথে প্রেম করার উপায়টা শিখে নিতে হবে। ছেলেটা আর কোন কথা না বাড়িয়ে সকল শর্তে রাজি হয়ে গেলো।
বেশ কিছুদিন পর, এই জুটি রিকসায় করে কোথাও যাচ্ছে। মেয়েটা ছেলেটার হাত আকড়ে হঠাৎ বলে উঠলো,
- এই তুমি কি সত্যিই ছেলে?
- হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন? কোন সন্দেহ আছে?
- সন্দেহ নাই। কিন্তু ছেলেরা তো অনেক কেয়ারিং হয়। তুমি মোটেও কেয়ারিং না।
- তোমার আবার কি কেয়ারের অভাব পরলো?
- দেখছো না কত ঠান্ডা? হুডটা উঠায়া দিলেই পারো।
- তুমি তো আমাকে হুড উঠাতে নিষেধ করেছিলা! শর্তের কথা মনে নাই?
- মনে আছে। কিন্তু সব কথা কি শুনতে হবে? কিছু কিছু শর্ত তো না শুনলেও পারো।
ছেলেটি রিকসার হুড উঠাতে উঠাতে বললো, "শর্ত ভাঙ্গলে তুমি কি আমাকে আস্তো রাখতা? ঝগড়া করে করে আমাকে শেষ করে দিতা।"
- সব কথা শুনলেও তো ঝগড়া করি। এইযে এখন যেমন করছি।
- এতো দেখি উভয় সঙ্কট। কথা শুনলেও ঝামেলা; না শুনলেও ঝামেলা।
- আচ্ছা, এখন থেকে সব কথা শুনতে হবে না। কিছু কিছু কথা না শুনলেও হবে। এখন টিস্যু পেপার দাও তো।
- টিস্যু দিয়ে কি করবা?
- লিপস্টিক মুছবো।
- কেন? কি দরকার? সুন্দর লাগছে তো।
- তাহলে কিন্তু তোমার গালে লাল লিপস্টিক লেগে যাবে।
ছেলেটা এই দজ্জাল মেয়েটাকে আর কিচ্ছু বলার সাহস পেলোনা। তবে জীবনে এই প্রথম বার মেয়েটার সাথে আলগা পিরিতি দেখালো। টিস্যু বের করে নিজ হাতে ঠোঁটের লাল লিপস্টিক মুছে দিলো। সাদা টিস্যু পেপারে মেয়াটার টকটকে লাল ঠোঁটের ছাপ বসে যাচ্ছে। এই টিস্যু পেপারটা ফেলে দেয়া যাবে না। যত্ন করে বুক পকেটে রেখে দিতে হবে।
...................................................
একটা ছেলের ফেসবুক স্ট্যাটাস এরকমই ছিলো। তবে স্ট্যাটাসের প্রথম অংশটুকু তার নিজের জীবনের সাথে মিল থাকলেও পরের অংশটুকু শুধুই কল্পনা।
সেদিন সন্ধ্যায় সেই ছেলেটিও তার জুটিসহ রিকসায় করে ঘুরছিলো। মেয়েটি হঠাৎ বললো,
- তুমি ওরকম স্ট্যাটাস যে দিলে, সবাই তো মনে করবে এটা আমাদের ঘটনা!
- প্রথম অংশটুকু তো আমাদের ঘটনাই।
- কি! তার মানে তুমি আমাকে দজ্জাল বলেছো?
- তুমি তো দজ্জালই। সমস্যা নেই দজ্জাল মেয়েই আমার পছন্দ। আর কেউ কি জানে যে তোমাকে কল্পনা করে লিখেছি?
- জানুক আর না জানুক লিখেছো তো। তুমি এক্ষুনি এই স্ট্যাটাস ডিলিট করবে।
- আচ্ছা, আচ্ছা। করছি।
- থাক, হয়েছে। ডিলিট করতে হবে না। সবাই যা বোঝার বুঝে গেছে। আচ্ছা, তুমি কি সত্যিই ছেলে? আমি বলা মাত্রই তুমি ডিলিট করতে গেলা কেন? আমার সব কথাই কি তোমার শুনতে হবে? মাঝেমাঝে কোন কথা না শুনে ঝগড়া করতে পারো না?
- কি ব্যাপার? আমার গল্পটা কি মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে নাকি?
- কেন? নায়িকা হিসেবে কি আমি পারফেক্ট না?
- পারফেক্ট। কিন্তু আমার কাছে কিন্তু টিস্যু পেপার নাই।
- জানতাম তোমার কাছে থাকবে না। সমস্যা নাই। আমার অনেকদিনের শখ তোমার গালে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে দেই। সবাই আমার সীলমোহরযুক্ত তোমাকে দেখবে আর হাসবে। কোন মেয়ে আর কখনো তোমার দিকে তাকাবে না। সবাই জানবে এই সীলমারা ছেলেটা শুধুই আমার।
অতঃপর ছেলেটি নিজের লেখা গল্পে, নিজেই নায়ক হয়ে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:০১