somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যায়িতের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক লোক চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছে। ফাইলে প্রবেশপত্র, সকল পরীক্ষার সার্টিফিকেট, মার্কশীটের সত্যায়িত ফটোকপি। কিন্তু পরীক্ষকের চোখ আটকে গেলো সত্যায়িত সিলের দিকে। তিনি সত্যায়িত সিলে বেগুনি রঙে জ্বলজ্বল করতে থাকা নামটার দিকে ইঙ্গিত করে পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কি উনাকে চিনেন?" স্বভাবতই লোকটি বললো হ্যা। পরীক্ষার্থীকে ওই নামের লোকটার বর্ণনা জানতে চাইলে কিছু একটা মনগড়া বর্ণনা পওয়া গেলো। তখন পরীক্ষক বললেন যে সিলের নামটা আরো কারোর না, এটা স্বয়ং তিনিই।

পরবর্তীতে উনার চাকরিটা হয়েছিলো কিনা আমার জানা নেই তবে সত্যায়ন করার এরকম আর কোন বিরম্বনার কথা আমার জানা নেই। বিরম্বনা হবার কোন কারণও নেই। সত্যায়িতের সত্যতা কখনো যাচাই করা হয়না তো। একটা স্বীকারোক্তি করি?

আমার বিগত জীবনে যত কাগজপত্রের সত্যায়ন করার প্রয়োজন হয়েছে সেসবের বেশিরভাগ কিন্তু আমি নিজেই করেছি।

না, না। আমি কোন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা নই। নীলক্ষেত আমাকে সত্যায়ন করার অধিকার দিয়েছে।

তখন সবেমাত্র এইসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। দেশের ভালো ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি আবেদন করতে হবে। প্রায় প্রতিটা আবেদনেই সার্টিফিকেট, মার্কশীটের সত্যায়িত ফটোকপি সাথে একাধিক সত্যায়িত পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগে।

চিন্তা করেন একবার, আমি যদি কোন ব্যাস্ত সরকারী কর্মকর্তার কাছে দিয়ে ২০ থেকে ৩০ টা পাসপোর্ট সাইজ ছবি আর বিভিন্ন কাগজের ৫০ থেকে ৬০ টা কপি নিয়ে স্বাক্ষর করতে বলি, তিনি কি করবেন?

হয় তিনি ফিট খাবেন নাহয় কুত্তা খ্যাদানির লাঠি দিয়ে দৌড়ানি দিয়ে আমাকে ফিট খাওয়াবেন। তাই আর রিস্ক নিলাম না। নীলক্ষেত থেকে ৫০ টাকা দিয়ে একটা সিল আর ৪০ টাকা দিয়ে একটা কালির প্যাড কিনে আনলাম।

এখন মহানন্দে নিজেই সত্যায়িত করি। আর একলা মনে মনে হাসি। আমি মনে হয় খুব চালাকির পরিচয় দিলাম। সবাই সত্যায়িত করার জন্য ছোটাছুটি করুক আমার কোথাও যেতে হবে না।

হঠাৎ পাশের বাসার সুন্দরী মেয়েটা এসে জিজ্ঞেস করলো, "এই, তোমার কাছে কি সত্যায়িত করার সিল আছে?"

"আমি সিল কই পাবো? আমি কি বিসিএস ক্যাডার নাকি?"

"এজন্য ক্যাডার হতে হয়না। সিল সবার কাছেই থাকে। আমার কাছেও ছিলো। কিন্তু এখন খুজে পাচ্ছি না। তুমি গাঁধা বলে তোমার কাছে নেই।"

আমি তো অবাক। হায়! হায়! সবার কাছেই যদি সিল থাকে, সবাই যদি নিজে নিজে সত্যায়িত করে তাহলে সত্যায়িত করার প্রয়োজন কি?

একটু অপমানিত হলেও সুন্দরীকে তা বুঝতে দিলাম না। বত্রিশ পাটি দাত বিকশিত করে বললাম, "জ্বী না। আমি গাঁধা না। আমারো সিল আছে। নিয়ে আসো সাইন করে দেই।"

অতঃপর সুন্দরী গোটা চল্লিশেক কাগজের ফটোকপি নিয়ে এলো সাথে অনেকগুলো ছবি। দিয়েই চলে গেলো। বললো, "সাইন করে, সিল দিয়ে রেখো। আমি রাতে নিয়ে যাবো।"

তখন আমার অবস্থা হলো সেই বিসিএস ক্যাডারের মতো। ইচ্ছা করছিলো, কুত্তা খ্যাদানি লাঠি দিয়ে বান্দরীরে একটা দৌড়ানি দেই।

ভাগ্য ভালো আমাকে কেউ কখনো দৌড়ানি দেয়নি। তাই বান্দরীকে ক্ষমা করে দিলাম।

তারপর দেখি সবাই আমার মতো চালাক। সবার কাছেই সিল আছে। সবাই নিজের কাগজপত্র নিজে সত্যায়িত করে।

করবে না কেন? সত্যায়িত বা সত্যায়ন মানেটা কি?

মানে হলো, কাগজে যা লেখা তা সত্য আর ছবির পিছনে যার নাম লেখা এটা তিনিই, বলে স্বীকৃতি দেয়া। তাহলে যার পরিচিত সরকারী কর্মকর্তা আছেন তিনি হয়তো সত্যায়িত করতে পারবেন। তার কাজ হয়ে যাবে।

কিন্তু যার চৌদ্দ গুষ্ঠির মধ্যে কোন সরকারী অফিসার নেই, তিনি কি করবেন? তার কাগজের বা ছবির সত্যতা যাচাই করবেন কে? তাহলে কি তারা পাসপোর্ট করতে পারবেন না? তারা কি কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবে না? তারা কি চাকরির আবেদন করবে না?

করবে না কেন? অবশ্যই করবে। এবং হাজারে হাজারে, লাখে লাখে হচ্ছেও।

আমি আমার পাসপোর্ট করার সময় এক শিক্ষকের কাছে সত্যায়িত করতে গেলাম। আমি তখন ফার্স্ট ইয়ারে। বড় চাকরি , করেন তেমন কেউ পরিচিত নেই। যারা আছেন তারাও হাতের কাছে নেই। স্যার বললেন, "কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি না। আপনি বরং আপনার পরিচিত কারোও কাছ থেকে সত্যায়িত করুন।"

আমি বললাম, "স্যার, তাহলে যার পরিচিত বড় কোন অফিসার নেই তার কি পাসপোর্ট হবে না?"

স্যার এবার একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন। বললেন "তাহলে আমাকে পাসপোর্ট অফিস থেকে ফোন করলে কি বলবো?"

বললাম, "স্যার, এসব ব্যাপারে কখনো কাউকে ফোন করা হয়েছে বলে তো শুনিনি।"

স্যার বললেন, "আপনার কথায় অবশ্য যুক্তি আছে। ঠিক আছে নিয়ে আসুন। সিগনেচার করে দিচ্ছি।"

স্যার আমাকে চিনেন না তবু সাইন করলেন। আমার পাসপোর্ট হলো। ভিসা হলো। সবই হলো।

একবার ভেবে দেখুন। স্যার আর আমি, আমরা দুজনই কিন্তু যার যার অবস্থান থেকে সঠিক। তবুও আমাদের যুক্তি যেহেতু বিপরীত; আমার যুক্তি ঠিক হলে স্যার ভুল, স্যার ঠিক হলে আমি ভুল। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

মেইন সমস্যা আসলে সিস্টেমে। সত্যায়িত করার সিস্টেমটা শুধুই ফরমালিটি এবং ঝামেলা। বাস্তবে কোনই প্রয়োগ বা সত্যতা নেই। আসলে যার নামে সত্যায়িতকারীর নাম, সিল বা সিগনেচারেরই তো সত্যতা নেই।

কিছুদিন আগে এক বড় ভাই বিসিএস ক্যাডার হলেন। তিনি যখন ঢাকা আসলেন হলে নিজের রুমের সব ছোট ভাইকে নিজের নামের সিল দিলেন। বললেন, "সত্যায়িত করতে লাগবে। রেখে দে।"

আমরা যখন কোথাও আবেদন করি তখন বিভিন্ন ফোন পাই, "এই তোর কাছে কি সিল আছে?"

"না রে। হারিয়ে গেছে। ওমুকের কাছে আছে।"

জনাব ওমুক আবার তার মামার সিল ব্যবহার করে। তার মামা ক্যাডার কিনা। নিজেও সত্যায়িত করে, অন্যকেও করতে দেয়।

এভাবেই সবার বিসিএস হচ্ছে, সরকারী চাকরি হচ্ছে, ব্যাংকে চাকরি হচ্ছে।

"তাহলে সত্যায়িত করার দরকারটা কি?"

"কি আবার? নিয়ম!"
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৩৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×