আমার বাবা যেদিন মারা গেলো পরদিন রাতে পরিচিত এক মেয়ে আমাকে ফোন করলো। কুশল বিনিময়ের পর বললো,
- আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই। আপনার একটু সময় হবে?
- হুম হবে। বলো
- আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই। আপনার মতামত কি?
- এখন কি এসব কথা বলার সময়?
- না, এক্ষুনি বলতে হবে।
- আমি চাইনা।
- কেন?
- আমি কোন কারণ ব্যাক্ষা করতে চাচ্ছিনা।
- না, বলতে হবে।
- তাহলে বলো, আমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার কারণ কি।
- আপনার মা নেই, বাবাও নেই। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। আপনার ঈদ করতে যাবারও কেউ নেই। তাই চাচ্ছি আপনার পাশে থাকতে। ঈদের সময় আপনাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবো। আম্মুকে আপনার কথা বলেছি।
- আসলে এসব বিষয়ে হুট করে কোন কথা বলা ঠিক না। তুমি ভেবে দেখো, এটা আমার প্রতি তোমার সহানুভূতি, এটা ভালোবাসা না। কিছুদিন পর আমিও একটু ধাতস্থ হয়ে উঠবো, তোমার সহানুভূতিও কমে আসবে। তখন তোমার মনে হবে, আবেগের বশে কি বলে ফেললাম।
- আমার আবেগ ক্ষণিকের না। আর সত্য কথা হলো, এতিম ছেলে আমার খুব ভালো লাগে।
- এতিম ছেলে ভালো লাগে! কেন?
- কারণ ওদের যাওয়ার কোন জায়গা থাকে না। আমাকে ফেলে কখনো চলে যাবে না।
- এরকম মেন্টালিটি থাকা ঠিক না। তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বলছি, আমার সাথে এরকম কথা বলেছো, ঠিক আছে। কিন্তু, ভবিষ্যতে ভুলেও এরকম কথা আর কাউকে বলবে না। অন্যরা তোমাকে খুব খারাপ আর স্বার্থপর ভাববে। আড়ালে বা সামনেই গালি দিবে।
- আপনিও কি আমাকে তাই ভাবছেন?
- সেটা তোমার জানার প্রয়োজন নেই।
- তাহলে, আপনার উত্তর কি "না"?
- হুম, না।
- আপনি কি একটু ভেবে দেখবেন? আমি কছুদিন পর আবার ফোন করি?
- এ বিষয়ে আর ফোন না করাই ভালো। আর কয়েকদিন পর ফোন করলেও আমি একই কথা বলবো।
- আচ্ছা। পরে আমি বিয়ে করে ফেললে, আপনার কষ্ট হবে নাতো?
- না, বিয়ে করো। তবে আমার সাথে রাগ করে হুট করে বিয়ে করে ফেলোনা।
- সেটা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।
- আচ্ছা, ভাববো না। আল্লাহ্ হাফেজ।
খট্ করে লাইনটা কেটে গেলো। মানুষের মানুষিকতা দেখে আমি অবাক হই। আর আমার মানুষিকতা দেখে ইনারা অবাক হয়। তারা ভাবে, মানুষ এতো খারাপ হয় কিভাবে। আমিই মনে হয় খারাপ।
(সম্পূর্ণটাই সত্য ঘটনা। শুধু অগোছালো কথাগুলো একটু গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি।)