somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিত্রা

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিত্রার সাথে হঠাৎ মার্কেটে দেখা। চিত্রা আমার পরিচিত। আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এক বন্ধুর ক্লাসমেট, সেই সূত্রেই পরিচয়। ক্যাম্পাসে দেখা হলে, এরকম অনেক হয়েছে যে না দেখার ভান করে যার যার মতো চলে গেছি। কিন্তু, মানুষের খুব কমন একটা বৈশিষ্ট্য খেয়াল করলাম। আমরা পাশের বাসার লোকটার খোজখবর নেই না, দেখা হলেও যার যার মতো চলে যাই, কিন্তু এলাকা থেকে একটু দূরে কোথাও দেখা হলে ডেকে তো কথা বলিই, টং দোকানে চা খাওয়াই আবার বাসায় আসার দাওয়াত দিয়ে দেই। আমিও ব্যাতিক্রম নই। আমি আমার কাজ শেষে মার্কেট থেকে বের হচ্ছিলাম। আর চিত্রা শপিং করতে মার্কেটে ঢুকছিলো। আমিই প্রথম দেখে ডাক দিলাম,

- এই চিত্রা।
- তুমি? শপিং করলা নাকি?
- এই আরকি। তুমি কি শপিং করবা?
- হুম।
- একা একাই এসেছো?
- হুম। ফ্রেন্ডরা সবাই বিজি। তাই একাই। তোমার কাজ না থাকলে আমার সাথে চলো। পরে একসাথে ফিরবো?
- ঠিক আছে চলো।

পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ সুন্দরী মেয়েদের নিমন্ত্রণ এড়ানো। আমিও পারলাম না। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে চিত্রা একজন। খুব সাধারণ সালোয়ার-কামিজ, চোখে হালকা কাজল, আর ছোট্ট একটা টিপে একজন মানুষের চেহারা যে এতোটা মায়াবী হতে পারে চিত্রাকে দেখার আগে আমি বিশ্বাস করতাম না। সুন্দরী মেয়েরা অহংকারী হয়, এই কথাটা চিত্রার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণই মিথ্যা। মাত্র কয়েকদিনেই আমাদের মধ্যে চমৎকার একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো।

চিত্রার সাথে সেদিন ঘন্টা দুয়েক মার্কেটে ঘুরলাম। সে এসেছে শাড়ি কিনতে। একটা দোকানে ঢুকে দুয়েকটা শাড়ি দেখেই একটা পছন্দ করে ফেললো। বললো, "দেখোতো, এই শাড়িটা কেমন?" জিজ্ঞেস যখন করেই ফেলেছে, তখন পছন্দ করার ক্ষুদ্র একটা অধিকার তো আমারও জন্মেছে। শাড়িটা আমার তেমন পছন্দ হয়নি। আমি বললাম, "এই কালার তোমাকে মানাবে না। অন্য কালার দেখো।" আর দুয়েকটা দোকান ঘুরতেই আবিষ্কার করলাম, চিত্রা খুব কনফিউজড্। কোনকিছুই খুব একটা পছন্দ করছে না কিন্তু কিনতে হবে বলে একটা কিনলেই হলো, এরকম একটা ভাব। তাই নিজেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে আরোও দশটা দোকান ঘুরে একটা শাড়ি পছন্দ করলাম। শাড়িটা আমাদের দুজনেরই পছন্দ হলো। শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে কিছু গহনাও কিনে দিলাম।

তারপর শপিং শেষে যা করতে হয় আরকি? একটা ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকলাম। চিত্রাই খাওয়াবে। খাবার অর্ডার দিয়ে বললো,

- বাব্বাহ। তোমার তো অনেক ধৈর্য!
- কেমন?
- এই যে এতক্ষন ঘুরে ঘুরে শপিং করলে। তাও আমার জন্য।
- তোমার জন্য করি, আর যার জন্যই করি, আমাকে যেহেতু জিজ্ঞেস করেছো নিজের পছন্দ না হলে হ্যা বলি কি করে? পরে বান্ধবীদের দেখিয়ে বলবা রিয়াদ পছন্দ করে দিয়েছে, আর তখন সবাই বলবে, ছি! রিয়াদের পছন্দ এতো বাজে!
- তারমানে বলতে চাচ্ছো, আমি যেসব পছন্দ করেছিলাম সেসব বাজে?
- হ্যা বললে কি তোমার মন খারাপ হবে?
- হবে না। বলো।
- হুম।
- তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না? আমার পছন্দকে বাজেও বলে দিলা!
- সত্য কথা আটকায় না। সত্য তিতা হলেও সত্য।
- তুমি মিথ্যা বল না?
- বিশ্বাস করবে?
- হুম করবো।
- আমি কখনোই মিথ্যা বলিনা।
- বিশ্বাস করলাম। আমার মনে থাকবে।

তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা রিকসায় করে ফিরে এলাম। যে যে যার যার গন্তব্যে চলে গেলাম। দুদিন চিত্রার কথা মনেও হলোনা। হঠাৎ ফেসবুকের ম্যাসেজে আবার মনে হলো। সে লিখেছে,

- রিয়াদ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।
- ওয়েলকাম, ওয়েলকাম, ওয়েলকাম। কিন্তু কেন?
- সবাই শাড়িটা খুব পছন্দ করেছে। তোমার পছন্দের তারিফ করেছে খুব।
- তারিফকারীদের মধ্যে সিঙ্গেল কয়জন?
- আমি সহ নাকি আমি বাদে?
- তোমাকে বাদ দিয়েই বলো।
- বাকি সবাই মিঙ্গেল।
- ধুর!
- আচ্ছা, বাই।
- এই শোন, শাড়ি পরলে একদিন আমাকে দেখিয়ো।
- আচ্ছা দেখাবো, বাই।

সেই থেকে চিত্রার সব শপিং এর একমাত্র সঙ্গী আমি। কোন এক অজানা কারনে আমিও কখনোই মানা করিনি। ক্লাস, পরীক্ষা, আড্ডা, ঘুম, ফেসবুকে চ্যাটিং কখনোই আমাকে আটকাতে পারেনি। শত ব্যাস্ততার মাঝেও ঠিকই ওর জন্য সময় বের করে ফেলেছি। সে থ্রি-পিছ কিনবে আমার যেতে হবে, শাড়ি কিনবে আমার যেতে হবে, তার আব্বুর জন্য পাঞ্জাবি, আম্মুর শাড়ি, ভাইয়ের শার্ট সব আমাকেই পছন্দ করে কিনে দিতে হবে। এমনকি কানের দুল, গলার মালা, চুলের পাঞ্চক্লিপ, টিপের পাতা, রেশমি চুড়ি, পার্স কেনা হতে থাকলো আমার পছন্দে। কসমেটিক্স জাতীয় যেসব জিনিসে আমি পছন্দ করতে পারতাম না, কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতাম না, অন্ততপক্ষে পাশে দাড়িয়ে সম্মতি দিতেই হতো।

শেষ পর্যন্ত ব্যাপারগুলো এমন হলো যে, আমি পছন্দ করে কিছু না কিনে দিলে তার মন খারাপ হতো খুব। বিশেষ দিনের শাড়িটা, বিশেষ দিনের চুড়িটা সে আমার পছন্দে, আমাকে জিজ্ঞেস করেই পরবে। অন্য কারোও পছন্দ যতই ভালো হোক, তার মন ভরতো না।

শুধু তার শপিং নয়, আমার ক্ষেত্রেও অবিচ্ছেদ্য অংশ সে হয়ে গেলো দুজনের গোপনেই। আমি টি-শার্ট কিনলে, জিন্স কিনলে, কনভার্স কিনলে হাসি হাসি মুখ করে তার পাশে দাড়িয়ে থাকা চাইই। সেও আগ্রহভরে আমার জন্য পিঙ্ক কালার সাজেস্ট করা শুরু করলো। পিঙ্ক কালারে আমার এ্যালার্জি আছে। আমি সেসব না কিনলেও যেটা কিনতাম, সেটা তার সম্মতিতেই।

চিত্রাকে আমি যা পছন্দ করে কিনে দিতাম পরদিনই সে সেটা পরে আমাকে দেখাতো। আমিও কি বলবো সেটা নিয়েই ভাবনা শুরু করতাম। যেদিন সে শাড়ি পরতো, একটু সাজুগুজু করতো সেদিন বুঝতাম সে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে চায়। শাড়ি পরা, চোখে কাজল দেয়া, টিপ পরা মেয়েদের আবদার না শোনাটা ভয়ঙ্কর রকমের অন্যায়। এতবড় অন্যায় আমার দ্বারা সম্ভব না। কখনো লালবাগ কেল্লা, কখনো হাতিরঝিল, আহসান মঞ্জিল, কিংবা ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে যেতাম। একসাথে ঘুরতাম, গল্প করতাম, খাওয়া-দাওয়া করতাম।

বাইরে খেতে গেলেই আমার সাথী চিত্রা। ক্যাম্পাসে খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছি, নীলক্ষেত বা চানখারপুল খেতে যাবো। কার সাথে? চিত্রার সাথে। অনেকদিন বিসমিল্লাহ কাবাব খাইনা, কলকাতা কাচ্চি, নান্নার কাচ্চি বা স্টার কাবাবের খাশীর লেগরান খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিংবা আপন কফিশপ বা বিএফসির চিকেন ফ্রাই যাই খাই, পাশে একজনই। চিত্রা। ধানমন্ডিতে নতুন ভালো কোন রেস্টুরেন্ট হয়েছে চিত্রা আর আমার দুজনেরই খাওয়া দরকার। একজন বলামাত্রই অন্যজন ছুট।

আমাদের পারস্পরিক নির্ভরতা বাড়তেই থাকলো। সেটা শপিং এর সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়া ছাড়িয়ে কাঁচাবাজার পর্যন্ত ঠেকলো। আমরা দুজন পলাশী থেকে তেল, ডিম, ঢেড়স, করলা কিনতাম। চিত্রা রান্না করে টিফিন বক্সে করে নিয়ে আসতো। আমরা লাইব্রেরির সামনে, কখনো মিলন চত্ত্বরে, কখনো টিএসসিতে বসে খেতাম। মাঝেমাঝে সে শুধু আমার জন্য বক্সে করে খাবার দিয়ে দিতো, আমি হলে এসে চুপিচুপি খেতাম। সেসব মাছের তরকারি, ডিম আলুর ভর্তা বা বেগুনভাজা কখনো ঝাল বেশি হতো, কখনো লবন কম হতো। কিন্তু যেই আমি খাবার নিয়ে মা-বাবাকেও খুব জ্বালাতাম, সেই আমিই গোগ্রাসে সবটা খেতাম। যখন বন্ধুদের সামনে ধরা পরতাম, ওদেরকেও ভাগ দিতাম।

বন্ধুরা আমাদের নিয়ে মজার মজার গল্প আটলো। সুন্দর ঘটনাটাই রস মিশিয়ে রোমান্টিক ভাবে উপস্থাপন করতো। মুখে একটু আধটু প্রতিবাদ করলেও, মন থেকে কখনোই করিনি। কেন যেন, সেসব গল্প শুনতে ভালোই লাগতো। গল্পের ফাকে কল্পনায় চিত্রার হাত ধরে ফুলার রোডে হাটতাম, তার আচড়ানো চুল এলোমেলো করে দিতাম, কপালের কালো টিপটা ঠিক করে দিতাম। কল্পনায় যে তার গাড় লাল লিপস্টিক কখনো সাদা টিস্যু পেপারে মুছে দেয়নি, বুকে হাত দিয়ে সেকথা বলার দুঃসাহস আমার নেই।

কল্পনা আর বাস্তবে প্রত্যাশাগুলো দায়িত্বে রূপ নিচ্ছিলো। আমরা দুজনই যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে লাগলাম। ছুটিতে সে বাসায় যাবে, আমি টিকেট কেটে তাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসতাম। সে যেদিন আসবে, আমি বাসস্ট্যান্ডে আগে থেকেই দাড়িয়ে থাকতাম। সে হাজারবার যেতে নিষেধ করতো, তবুও যেতাম। তাকে একঘন্টা আগে দেখার লোভ কোনভাবেই সামলাতে পারতাম না।

আমি বাসায় গেলে অবশ্য তার টিকেট কাটা লাগতো না কিন্তু তিনঘন্টার জার্নিতে দশ-বারো বার তাকে ফোন করাই লাগতো। বাসায় পৌছে কখনো তাকে ফোন করতে ভুলে গেলেই, সে অভিমান ঝারতো সারারাত। আমিও অভিমান ভাঙ্গাতাম।

মাঝেমাঝে সে আমার সাথে রাগ করতো। তখন কেমন যেন তাকে গিন্নি গিন্নি লাগতো। একদিন আমি একাই কাঁচাবাজার করে আনলাম তার জন্য। কিছু সবজি হয়তো পচাঁ ছিলো। সে "এসব কেউ কিনে? সব নষ্ট জিনিস কিনে আনছো।" বলে মুখটা এমন ভার করলো যে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, চিত্রার সংসারের বাজার করার দায়িত্ব যদি আমি পাই, সারাজীবন এমন পচাঁ সবজি, পচাঁ মাছ কিনে আনবো। রাগলে তাকে চমৎকার লাগতো।

তাকে আরেকটা সময় খুব সুন্দর লাগতো, সেটা ওর যখন ঝাল লাগতো তখন। সে যখন ঝাল ঝাল করে ফুচকা খেতো, ঝালের চোটে চোখমুখ, গাল সব লাল হয়ে যেতো। সিনেমার নায়িকাদের মতো পানি পানি বলে চিৎকার করে ঢং করতো না তবে মাঝেমাঝে চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরতো। আমি আমার দুহাতের উপর থুতনি রেখে ওর অগোচরে ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম।

শুধু দায়িত্ব নয়, আমাদের পারস্পারিক অধিকারও কম ছিলোনা। একদিন আমি আমার অন্য এক বান্ধবীর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সে দেখে খুব মন খারাপ করলো। বসতে বললাম, কাজ আছে বলে চলে গেলো। পরে রাতে আমাকে ফোন করে সে কি জ্ঞান!

- ওই মেয়ের সাথে এতো কিসের কথা বলো? জানো না, ও কি রকম?
- কি রকম?
- খুব শয়তান। সব ছেলেদের পেছনে পেছনে ঘোরায়।
- ঘোরাক। তাতে আমার কি? আমি তো আর ঘুরছি না।
- ঘুরতে হবে না। একদিন ফেসে গেলেই বুঝবা।
- আচ্ছা। এতো বেশি মিশবো না।
- কম বেশির কিছু নাই। রাস্তায় দেখা হলে ভদ্রভাবে হাই-হ্যালোর বেশি যেন না হয়। প্রয়োজন ছাড়া ফোনকল, ফেসবুক চ্যাটিং সব বন্ধ। মনে থাকবে?
- আমি এসব করিও না।
- মনে থাকে যেন।

সে আমাকে যা বোঝাতে চেয়েছে বা বলেছে, সেটা আমার মনে রাখার প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু নিজের অজান্তেই যা বুঝিয়েছে, তার কথার সুরে যা ফুটে উঠেছে, চেহারায় যার স্পষ্ট আভাস আমি পেয়েছি, সেটা ভুলে যাবার ক্ষমতা আমার ছিলো না।

আমারও ওর ফ্রেন্ডদের প্রতি হিংসা লাগাটা শুরু হলো। এই হিংসাটা যে অবিশ্বাস না বরং ভালোবাসার অন্য একরূপ তা উপলব্ধি করলাম ভালোভাবেই। আমাকে ছেড়ে অন্য কারোও সাথে বেশি কথা বললে আমার কেমন কেমন লাগতো। ওর গায়ে অন্য কোন ছেলের অনিচ্ছাবশত ধাক্কা লাগলেও আমার রাগ হতো। চিত্রার ফেসবুক স্ট্যাটাস বা ছবিতে অন্য ছেলেরা লাভ ইমো দিলে আমার অভিমান হতে শুরু করলো। মনে হতো এ অধিকারটা শুধু আমারই। বান্ধবীকে বিশ্বাস করতে পারতাম, কিন্তু বান্ধবীর বন্ধুদের নয়।

সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ সে ফোন করা কমিয়ে দিলো, চা খাওয়ার জন্যও আর আগের মতো ডাকে না। তাতে কি? আমি ঠিকই ফোন করতাম। চা খেতে ডাকতাম। কিন্তু আগের সেই আন্তরিকতাটা আর পেতাম না। ফোন করলে পড়ার কথা বলে রেখে দিতো। তিনদিন ডাকলে একদিন দেখা করতো। কত কথাই মনের আনাচে-কানাচে উকিঝুকি দিতে শুরু করলো। সেসব পাশ কাটিয়ে ভাবলাম হয়তো, পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত।

প্রতিদিন অসংখ্য ফোন আসে, রিং বাজে কিন্তু তার নাম্বারে কাস্টমাইজ করা সেই রোমান্টিক টোনটা আর বাজে না। ম্যাসেজটোন পেলেই লাফিয়ে উঠি। এয়ারটেল থেকে ম্যাসেজ আসে, ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে আসে তার নাম ম্যাসেজ লিস্টের নিচে থেকে ক্রমেই নিচে চলে যেতে থাকলো। ফেসবুকে অসংখ্য বন্ধু অনলাইনে, কিন্তু তার নামের পাশে সবুজ চিহ্নটা আর পাইনা।

এভাবে এক সপ্তাহ, পনেরোদিন, এক মাস। সময় তো আর যায় না।

একদিন হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম। এতোদিন বলি বলি করে যে কথাটা সাহসের অভাবে বা লজ্জায় বলা হয়ে উঠেনি সেটা বলবোই। চিত্রাকে ডাকলাম। টিএসসির এক কোণায় দুজন বসলাম। সকল ভয়, লজ্জা দূরে ঠেলে ভালোবাসার কথাটা বলেই ফেললাম। চিত্রা হয়তো এরকম একটা মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত ছিলো। বললো,

- আমি একটু কথা বলি। মন দিয়ে শোন। আর যা জিজ্ঞেস করবো, উত্তর দাও।
- বলো।
- তোমার কাছে কে আগে, তোমার ফ্যামিলি নাকি আমি?
- ফ্যামিলি।
- আমার ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই। আমার ফ্যামিলিকে তো আমিই সবচেয়ে ভালো চিনি, তারা কোনদিনই তোমার আমার রিলেশন মেনে নিবেন না। শুধু তোমার সাথে না; অন্য কারোর সাথেই রিলেশন জিনিসটা মানবে না। যদি মেনে নিতো আমি তোমাকে হয়তো প্রপোজ করতাম না, তবে এমন পরিস্থতি সৃষ্টি করতাম যে তুমিই আমাকে প্রপোজ করো।
- তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো। তাহলে নিজেও তো কষ্ট পাচ্ছো।
- সেটার উত্তর তোমাকে দিবো না।
- তারমানে তো কষ্ট পাচ্ছো। দুজন দু জায়গা থেকে কষ্ট পাচ্ছি। আমরা একটু চেষ্টা করে দেখি। তোমার ফ্যামিলিকে নাহয় একটু বোঝাও।
- বোঝাতে চেষ্টা করে, বোঝাতে না পারলে হয়তো আরোও কষ্ট পাবে, আমিও পাবো।
- তবু একটু চেষ্টা করতে দোষ কি?
- যেই চেষ্টার রেজাল্ট জানা, সেটা চেষ্টা না করাই তো ভালো।
- তাহলে হঠাৎ করে আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কেন? যেমন চলছিলো, চলতো। খারাপ তো চলছিলো না।
- যখন থেকে বুঝলাম আমরা একে অন্যের উপর দূর্বল হয়ে যাচ্ছি তখন মনে হলো, এখন একটু কষ্ট করে আলাদা হয়ে যাই নাহলে যতই সময় নেবো কষ্টের পরিমানটা ততই বাড়বে।
- কিছুই কি করার নেই?
- যেই সম্পর্কের কোন সংজ্ঞা নেই, যেই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যত নেই, সেটা টেনে নেয়ার কোন প্রয়োজনও নেই। যতই বাড়াবে, কষ্টটাও ততই বাড়বে। ভয়ঙ্করভাবে বাড়বে।

আমি আর কিছু বলতে পারিনি। চিত্রার এতো গোছানো কথার পর আর কিছু বলার থাকে না। তবে কষ্টটা ভয়ঙ্করভাবে তখন থেকেই বাড়তে শুরু করলো। পৃথিবীটা শূণ্য, শূণ্য মনে হচ্ছিলো। গলাটা ধরে আসছিলো, কথা আটকে আসছিলো। চোখ ফেটে কান্নাটা বের হতে চাচ্ছিলো। চিত্রার সামনে কান্না করা যাবে না। চলে এসেছিলাম চিত্রাকে একা ফেলেই।

রাতে চিত্রার রুমমেট ফোন করে জিজ্ঞেস করলো, চিত্রার কি হয়েছে, আমি কিছু জানি কিনা। সে নাকি কাঁদছিলো।

জীবনে প্রথমবার মিথ্যা করে বললাম যে আমি কিছু জানি না।

পরের কয়েক মাস চিত্রা এক রাস্তা দিয়ে গেলে আমি অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। চিত্রার খবর যতটা সম্ভব না শুনে থাকার চেষ্টা করেছি। বন্ধুদের সাথে চিত্রা প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছি। নিজের অজান্তেই ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে চিত্রার নাম খুজে বের করেছি। ফোন দিয়েও কেটে দিয়েছি। ফেসবুকে বা ফোনে ম্যাসেজ টাইপ করে ব্যাকস্পেস চেপে সব ডিলিট করে দিয়েছি। দূর থেকে ওকে কখনো দেখে "এই ...." বলে ডেকে থেমে গেছি, ওর নামটা আর উচ্চারণ করিনি। শুধুমাত্র সবার সামনে দেখা হয়ে গেলে বা চোখাচোখি বা মুখোমুখি হলে ভদ্রতাবশত কুশল বিনিময় করেছি।

আস্তে আস্তে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে এলো। কিন্তু আজ হঠাৎ চিত্রার একটা ফোন পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আজ নাকি তার মন খারাপ। আজ সে যে শাড়িটা পরেছে এটা আমার পছন্দে কেনা নয় বলে। অন্য কেউ পছন্দ করে কিনেছে। হয়তো তার বর।
আজ চিত্রার বিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×