somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কীজন্য আত্মহত্যা করবেন?

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর আগে আজরাঈল (আঃ) সালাম দিয়ে উনার ঘরে প্রবেশ করলেন। এসে জানালেন যে তিনি, নবীজীর জান কবজ করতে এসেছেন। আজরাঈল (আঃ) যখন নবীজীর বুকে হাত রাখলেন তখন নবীজী বললেন, "আজরাঈল, তুমি আমার বুকে উহুদ পাহাড় চাপিয়ে দিলে?"

হ্যা, নবীজীর মৃত্যু ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিময় মৃত্যু। এরপরেও উনার কাছে বুকে পাহাড় চাপিয়ে দেয়ার মতো কষ্টকর মনে হয়েছে।

পৃথিবীর সব মৃত্যুই কষ্টকর। কে চায়, ইচ্ছা করে মরে যেতে? তবু কিছু মানুষের আত্মহত্যার খবর আসে। প্রায়ই খবর শুনি, পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে এক ছাত্রীর মৃত্যু, বেকার জীবনের অভিশাপ থেকে বাঁচতে যুবকের বিষপান, মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে আত্মাহুতি দিলেন বাবা, ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা এক গৃহবধুর, সেতু থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ভেসে উঠলো সেতু থেকে ঝাপিয়ে পড়া এক ব্যাক্তির লাশ।

কেন?

মৃত্যুই কি সব সমস্যার সমাধান?

না,আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আত্মহত্যা মানে, মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে বিপদে ফেলে নিজে অতি স্বার্থপরের মতো পালিয়ে যাওয়া। কেউ যদি প্রিয়জনদের কথা একবার ভাবতো, সে কোনোদিন আত্মহত্যা করতে পারবে না।

স্বাভাবিক মৃত্যু হোক আর আত্মহত্যা; মৃত্যুর কষ্ট কিন্তু উপভোগ করতেই হবে। যে একবার বিষ খেয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে সে আর কোনোদিন আত্মহত্যার কথা মুখে আনবে না। গায়ে কেরোসিন ঢেলে শাড়িতে আগুন দেয়ার পরেই মহিলাটা টের পায়, খুব বড় ভুল হয়ে গেছে। পানিতে ঝাপিয়ে পড়ার পর যখন একফোটা অক্সিজেনের জন্য ফুসফুসটা হাসফাস করে, নাকটা খুললেই লোকটার নাক দিয়ে পানি প্রবেশ করে মস্তিষ্কে, তিনিও ভাবেন খুব বড় ভুল করে ফেলেছি। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে পায়ের ইশারাতে টুলটা যে ফেলে দেয় সেও দড়ি ধরে ঝোলার চেষ্টা করে, সাহায্যের জন্য চিৎকার করে। কিন্তু ততক্ষণে দড়ি ধরে ঝুলে থাকার শক্তি থাকে না, গলা থেকে শব্দ বের হয় না। তেমনি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লে যখন হাওয়ায় দেহটা ভাসে, প্রতি মুহূর্তে মাটির দিকে গতি বৃদ্ধি পায়, পেটের ভিতরের সবকিছু মনে হয় মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে, তিনিও ভুল বুঝতে পারেন। ট্রেনের নিচে ঝাপ দিলে হাত, পা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন কাটা মুরগীর মতো তরপাতে থাকে, তারও অনুশোচনা হয়। কিন্তু ততক্ষণে আর ভুল শোধরানোর সময় থাকে না।

যে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ একবারে খেয়ে শুয়ে পড়ে, তার কষ্টা হয়তো দৃষ্টিগোচর নয়, তবে সে তার কষ্টটা একাই ভোগ করে। বেচারা হাত নেড়ে একটু সাহায্য চাওয়ার সুযোগটাও পায়না।

আমার পরিচিত এক মহিলা স্বামীর সাথে ঝগড়া করে, রুমে ঢুকে, সিটকিনি আটকে, গায়ে কেরোসিন ঢেলে, শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো। একটু পরেই যখন বাঁচার জন্য চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন, তখন উনার স্বামীই তাকে দরজা ভেঙ্গে উদ্ধার করেছিলেন। চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে আগুন নেভানো হয়েছিলো ঠিকই, সারা গায়ের কাপড় পুড়ে গেলেও সিনথেটিক কাপড়ের ব্লাউজ না পুড়ে গলে গলে গায়ের সাথে আটকে গিয়েছিলো। আগুন নেভানোর পরও সেসব গলিত কাপড় মাংসে ক্ষত সৃষ্টি করছিলো। সেগুলো যখন টেনে তোলার চেষ্টা করা হলো, কাচা চামড়া সাথে লেগে উঠে আসছিলো। তারপর উনাকে যখন স্ট্রেচারে করে বাসা থেকে বের করে এ্যাম্বুলেন্সে উঠানো হচ্ছিলো, তখন উনার হাত পায়ের কোথাও একইঞ্চি চামড়া ছিলো না। ব্রয়লার মুরগি জবাই করার পর এর পা পোড়ালে যেরকম গন্ধ হয়, সেরকম গন্ধ হচ্ছিলো। পোড়ালে মুরগীর পা যেমন কুকড়ে যায়, হাত পায়ের আঙ্গুল তেমন কুকড়ে ছিলো। সেই চেহারা দেখলে যেকোনো মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর উনার মৃত্যু হয়েছিলো সবচেয়ে ভয়ংকরভাবে। উনি হাসপাতালের বেডেই ছিলেন। কেবিনের উপরদিকে যেখানে সিলিং ফ্যান ঝুলে, উনার ফুসফুস আতশবাজির মতো ফেটে সেখানে রক্ত লেগেছিলো।

আরেকটা মেয়ে ঘরের কোণায় রেখে দেয়া কার্বলিক এসিড খেয়ে ফেলেছিলো। খাওয়ার সাথেসাথেই তার চিৎকারে সবাই জড়ো হলো। তাকে ধরে মোটরসাইকেলে তুলে হাসপাতাল পাঠানো হলো। তাকে ধরতে গিয়ে মেয়েটার মুখ থেকে লালা ঝরে যার গায়ে পড়েছিলো, আজ পনেরো বছর পর উনার গায়ে এখনো দাগগুলো আছে। মেয়েটা কিছুক্ষণ পরেই মারা গিয়েছিলো।

আসলে আরামদায়ক কোনো মৃত্যু নেই। আর যে বেঁচে যাওয়ার লোভে আত্মহত্যা করে, সে কি সত্যিই বেঁচে যায়?

না, বাঁচবে কিভাবে? সেতো একজন মানুষ খুন করে এসেছে। কেউ অন্যকে হত্যা করে খুনী, কেউ নিজেকে হত্যা করে খুনী। একই কথা, একটা মানুষের প্রাণ নেয়া তো।

মানুষের আত্মহত্যা করার কারনগুলো খুব মামুলি থাকে। পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না করায়, স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, স্বামী বা স্ত্রীর প্রতারণা, প্রেমে ব্যার্থ হলে, চাকরি না পেলে। এসব ঘটনা ঘটলেই কি মরে যেতে হবে। এদের চেয়ে অসুখী কি কেউ নেই পৃথিবীতে। ব্যার্থ বা অত্যাচারিত হলেই যদি মরে যাওয়া সমাধান হতো, তাহলে পৃথিবীর সফল মানুষগুলো সবাই কয়েকবার করে মরতো।

আপনার যদি কখনো মরে যেতে ইচ্ছে হয়, মরার আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট একবার ঘুরে আসুন। দেখুন পৃথিবীতে কত কষ্ট পেয়েও মানুষগুলো বেঁচে যাওয়ার লড়াই করছে। কারো পুরো শরীর পুড়ে গেছে, সারা গায়ে দগদগে ঘাঁ, কারো কনুই থেকে দু হাত কেটে ফেলতে হয়েছে, তার বয়স হয়তো বিশ বা বাইশ। কথা বলতে পারে না, নড়তে পারে না, খেতে পারে না, সারা রাত তীব্র যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারে না, তবুও বেঁচে যাওয়ার লড়াই চলছে নিরন্তর।

আমি শিওর, সেখান থেকে বের হয়ে আপনি বলবেন, আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ আমাকে যথেষ্ট ভালো রেখেছেন।

আপনি একমাত্র দুঃখী না, আপনার চেয়েও অনেক দুঃখী মানুষ আছে। তারা বেঁচে থাকলে, আপনি কেনো মরে যাবেন?
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×