"আমারে আসিবার কথা কইয়া/ মান করে রাই রইয়াছ ঘুমাইয়া
আমার কথা নাই তোর মনে/ প্রেম করতেছ আয়ানের সনে/ সুইয়া আছো নিজ পতি লইয়া"
শ্রী রাধারমণ দত্ত রচিত এই গান টা হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন। গানটি মূলত শ্রীকৃষ্ণ আর রাঁধা রানীর প্রেমের প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত। কৃষ্ণ আর রাধার প্রেম লীলা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সকলেই জানি। বলতে গেলে শ্রীকৃষ্ণ আর রাঁধার প্রেমপবিত্র হলেও তা ছিল অসামাজিক বলে স্বীকৃত। কারণ হিসেবে যুক্তি উত্থাপন করতে গেলে দুজনার প্রেমপূর্ব পারস্পারিক সম্পর্ক নিয়ে শক্তপোক্ত বিরোধ গড়ে দেওয়া যায়। রাঁধা ছিল শ্রীকৃষ্ণের দূর সম্পর্কের মামী। আর আয়ান রাঁধার স্বামী।
যাইহোক সবকিছু মিলিয়ে রাঁধা কৃষ্ণের প্রেম লীলা সমাজের চোখে ছিল পরকীয়া। কিন্তু প্রেম তো প্রেমই হয়। নানাভাবে ঘাঁত প্রতিঘাত আসলেও কৃষ্ণ আর রাঁধার প্রেম আলাদা হয়নি। কারণ সে প্রেমে ছিল বিশ্বাস, ছিল অন্তরের সীমাহীন আবেগ আর তীব্র অনুভূতি। কলঙ্কিনী বেশেও রাঁধা কৃষ্ণ কে আপন করে নিয়েছিল।
ঘটনা সত্য হোক আর পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে হোক আজো আমাদের হিন্দু ধর্ম প্রথায় শ্রী কৃষ্ণ মহাদেবকে ভগবান বলে স্বীকার করা হয়। এবং এখনকার সময়ে রাঁধা কৃষ্ণের প্রেম মানে পূজনীয় আর ধর্মীয় কাহিনীর অভ্যন্তরে বিশেষ ধর্মীয় প্রেম কাহিনী হিসেবে স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
এবার একটু আসি অন্য প্রসঙ্গে। তৎকালীন সময়ের নিন্দনীয় প্রেমকাহিনী যদি বর্তমান যুগের ধর্মীয় কাহিনীর অংশবিশেষ হতে পারে আর তা পূজনীয় হয় তাহলে এখনকার সময়ে প্রেম বা বিবাহ কেন ধর্ম, জাতি, কূল, বর্ণ দেখে হবে? আমরা মানবজাতি এটা কি আমাদের বড় পরিচয় নয়। আজকের প্রেমিক সমাজ প্রেমলীলা করতে লোকলজ্জা আর সমাজের ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে। এমনকি আমি দেখেছি আমাদের বর্তমান হিন্দু সমাজে বর্ণপ্রথার অযৌক্তিক কারনে এক বর্ণের মানুষ অন্য বর্ণের মানুষকে ভালবাসতে পারেনা বা বিয়ে করতে পারেনা।
তথাকথিত এই সমাজব্যাবস্থা মানুষেরই সৃষ্টি। আমার ধারনামতে সমাজ ব্যাবস্থা নামক ঘুন সৃষ্টি করেছে তারাই যারা সমাজের উঁচুশ্রেণী আর স্বার্থান্বেষী। আর এই উচ্চশ্রেণী তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য নিয়ম বিধান তৈরি করে গেছে আর তা ধারাক্রমে চলে আসছে যুগের পর যুগ থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী। আজো আমাদের মতো শিক্ষিত সমাজও সেই ঘুন নিজেদের মানুসিকতায় ধুকিয়ে নিয়েছি।
আজ যদি পরস্পর ২ ধর্মের বা ২ বর্ণের ২ টি ছেলে মেয়ে প্রেম ভালোবাসা করে অতঃপর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তারা সেটা করতে পারেনা। আর যদি সবকিছু উপেক্ষা করে একসাথে থাকার প্রয়াস করে তাহলে সমাজ নামক বিষাক্ত সাপ তাদের দংশন করে। একঘুরে হতে হবে নইলে পরিবার থেকে বিচ্ছেদ হতে হবে।
ওরে আমার সমাজ রে!!!! মানব কল্যাণে বা মানুষের সুখের জন্য যে সমাজ মানুষ গড়ে তুলেছে সেই সমাজই মানুষকে সীমাহীন দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত করার প্রয়াস করে। রাঁধা কৃষ্ণ করলে লীলা হয় এবং তাতে পূর্ণ আছে আর বর্তমান সমাজের কেউ করলে তার কপালে নরক। হাহাহাহাহাহাহা।
পৃথিবীর সব মানুষ এই ঘুনে ধরা সমাজের সাথে একমত হয়ে চলতে পারে কিন্তু আমি কখনই সমাজের এহেন স্বার্থান্বেষী নিওমের পক্ষে নই। তাই বলে আমি অসামাজিক জীব না। সমাজের যা কিছু মানবের তোরে কল্যান বয়ে আনে এবং প্রত্যেক মানুষকে স্বাধীনতা দেয় আমি সেই বিধিকে আঁকড়ে ধরতে চাই। পক্ষান্তরে এইসমস্ত তথাকথিত নিওমের বেড়াজাল ভাঙ্গতে সকলকে আওভান জানাবো।