somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাটাতার হয়ে বিঁধে আছে গৌতম ঘোষের -শংখচিল //

০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায় ।
হয়তো মানুষ নয় ;
হয়তো শংখচিল শালিকের বেশে ;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে ,
কুয়াশার বেশে ভেসে একদিন আসিব এই কাঁঠাল ছায়ায় ...
আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায় ।
নদী তুমি কার? হিন্দুর নাকি মুসলমানের? জন্ম জন্মান্তর থেকে এই প্রশ্ন বুকে নিয়ে ঘুরছি ?কিন্তু কোন দিন কারো কাছে এই প্রশ্ন করা হয়নি ।মানুষ পাখী নয়যে উড়ে চলে যাবে তার সীমারেখার বাইরে।মানুষকে কাটাতার পেরোনোর হিসেব দিতে হয় একদম জীবন দিয়েই , ফেলানীরা ঝুলে থাকে লাশ হয়ে।গৌতম ঘোষ বেশ শক্ত ভাবেই তুলে ধরেছেন এই ভাগাভাগির খেলা্র ইতিবৃত্ত তাঁর শংখচিল সিনেমায়।
যৌথ প্রযোজনা নিয়ে আমার নিজের মধ্যে যে একটা খুত খুঁতে ভাব ছিল না তা না।কিন্তু যে ছবি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়-সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই ,তাকে এড়িয়ে যাই কি করে।হুম,কেবল একটি বর্ডার দিয়ে ভাগ করে দেওয়া যায় না মানবীয় আবেগ,ধরে রাখা যায় না এক জনের প্রতি আর এক জনের কর্তব্য।দেশ যখন দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেল তখন একই বাড়ির রান্না ঘর গিয়ে পড়লো ভারতে ,আর শোবার ঘর বাংলাদেশে।কারো ছাগল চলে গেল ইন্ডিয়ায় ,কারো বা গরু হয়ে গেল বাংলাদেশী।আরো কষ্টের বিষয় -একটি গাছের শেকর ইন্ডিয়ান আর গাছে্র আগাটা বাংলাদেশে ।তবে কার জন্য সেই গাছের ফল?ভারত নাকি বাংলাদেশের।এমন প্রশ্নের মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলে শংখচিল।
তের বছরের রূপসা আতসি কাঁচ দিয়ে হয়তো খুঁজতে থাকে মানুষে মানুষে এই বিভেদের ইতিহাস।স্কুল মাস্টার বাদল মনে প্রাণে ভালোবাসে তার দেশ ,সন্মান করে তার ধর্মকে ।কিন্তু,সন্তান যখন জীবন মৃত্যূর মাঝে লড়ছে তখন দিশেহারা বাদল ইছামতি পাড় হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যায় ভারতের ছোট্ট একটি শহরে।তারপর চিকিতসার প্রয়োজনে তাদের চলে যেতে হয় কোলকাতা,নিজেদের পরিচয় দিতে হয় হিন্দুস্থানী বলে।দর্শক দেখতে পেরেছে -কেবল সন্তানের শেষ ইচ্ছে পূরণের জন্য কিভাবে বাবা মা মেনে নেয় এক অন্ধকার পরিণতি।
গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘শংখচিল’ ভারতের ৬৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা বাংলা ছবির পুরস্কার জিতেছে।এই জেতার পেছনে রয়েছে বলিষ্ট কাহিনী,অসাধারন ক্যামেরার কাজ আর দক্ষ অভিনয়।প্রসেনজিত যেভাবে বাদল চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছে এতে নির্দ্বিধায় বলা যায় -তিনি নিজে প্রযোজনা না করলেও এই চরিত্র এমন করে আর কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারতো কিনা আমার সন্দেহ ।
লালন চরিত্রের চাইতে শত গুণে মানিয়ে গেছে তের বছরের বালিকার বাবার এই আবেগ ঘন চরিত্র।ছবির একদম শেষে এসে তাকে মেয়ের লাশ নেবার জন্য যখন নাম লিখতে বলা হলো ,বাদলের মুখ দিয়ে উচ্চারিত প্রত্যেকটি সংলাপ হতভম্ব করেছে দর্শকদের।আর রূপসা চরিত্র যেমন ভাবিয়েছে,তেমন কাঁদিয়েছে।একটি ভিন দেশি সৈন্যের সাথে তার কাটানো মুহূর্ত গুলো দূর দেশে ফেলে আসা কোন সন্তানের জন্য বাবার আকুতির কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে।আসলে বাবা মার সাথে সন্তানের যে নিবির সম্পর্ক তার জন্য আলাদা করে কোন দেশ নেই,পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই অনুভূতিটা একি রকম।
আমি সব চেয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখেছি কুসুম সিকদারের অভিনয়।এক সময়ের সুন্দরী খ্যাত কুসুম এতো অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের ভেতর এমন পরিবর্তন নিয়ে আসবে তা ভাবনাতীত ছিল।পরিচালক চাইলে আমাদের দেশের অভিনেতাদের কাছ থেকে তার কাজ ঠিকি আদায় করতে পারেন,তার সবচাইতে বড় প্রমাণ -এই কুসুম।প্রসেনজিতের পাশে তাকে বেমানান তো লাগেইনি,উপরুন্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত মায়ের ভূমিকায় তার অনবদ্য অভিনয় দর্শকের মুগ্ধতা কেড়ে নিয়েছে।মুসলমান নারীর কপালে যখন বাধ্য হয়ে সিঁদুর ওঠে তখন তার দু চোখে যে যন্ত্রণা উপচে পড়তে পারে তা খুব ধারালো অস্ত্র হয়েই আমাদের বুক চিঁড়ে দিয়েছে।
মোট কথা,শংখচিল এমন একটি ছবি যা একটি কঠিন সত্যকে কাঁধে করে উড়ে বেড়াচ্ছে এ দেশ থেকে ওই দেশে।কিন্তু,তাকে খাঁচায় পুরে রাখে এমন সাধ্য কারো নাই।এটা কেবল ভাবায় ,আর কাঁদায়।দুই ঘন্টা বিশ বিনিট পর বুকের মাঝ বরাবর কাটাতার হয়েই বিঁধে থাকে।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১:৪৪
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×