সেই ভোর বেলায় আযান দেওয়া শুরু হওয়ার ও আগে মা ঘুম থেকে ডেকে দিতো উঠে পড়তে বয় ।অত সকালে লেপের নিচ থেকে উঠতে ইচ্ছা করত না তার পর মায়ের হাজার বকুনি শুনে উঠে পড়তে হতো । সকাল টা শুরু হতো বকুনি খেয়ে । আর রাতে ঘুমতে যেতাম ও বকুনি খেয়ে এতো সকাল সকাল ঘুমাস কেন । এখন রাতে ঘুম আসেনা ২-৩ টা বা তারও পরে গুমাতে যায় সকালে উঠি ১০ টা ১১ তায় বাধা কেউ দেয় না ।আগে রাতে পরার সময় হ্যারিকেন বা লাম্প এর আলোয় পড়তে বসতাম কখনো লাম্প এর কালি এসে মুখে লেগে যেত ।এর পর এল বিদ্যুৎ প্রথম কি আনন্দ আকাশে বাতাসে । বিদুতের লাল আলোয় গ্রেমের টিনের বাড়িটা উপর পরত মুহুরতে আনন্দে ভরে উঠত মন আর হ্যারিকেন লাগবেনা কিন্তু বিদ্যুৎ চলে গেলে ঠিকই লাগত । ৮ টা বাজলে আমারা বসে যেতাম সাদাকালো বিটিভির পর্দায় আলিফ লায়লা , সিন্দাবাদ বা হাতেম তাই দেখতে তার পর সারা সপ্তাহে ওই দিনটার জন্য দিন গুনতাম । শুক্রবার হইলেই যেন বাড়িতে শুরু হয়ে যেত মিনি সিনেমা হল । সবাই মিলে কখনো রাজ্জাক শাবানা বা জসিম আলংগীর এর ছবি দেখতাম । আর ভাগ্য ভাল হলে মাঝে মাঝে ইলেস কাঞ্চন বা ওমর সানির ছবি হতো ।আর ইদ এর সময় ছবির কথা কি বলবো সবাই মিলে আমাদের বাড়ির ওই ভাঙ্গাচোরা সাদাকালো টি ভিটা দেখতে চলে আসত ।
তখন শীত বর্ষা বা শরত কালের মধ্যে ও অনেক পার্থক্য বুঝতাম । শীত এলেই ভোর বেলায় উঠে দেখতাম অনেকে খর কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়েছে । আগুনের ছয়ায় হাত তাকে গরম করতাম । আবার গ্লাস নিয়ে বসে থাকতাম খজুরের রস খাওয়ার জন্য ।
স্কুল থেকে ফিরে মাকে জ্বালাতন করতাম পিঠা বানানোর জন্য । কখনো তেল থাকতো না কখনো বা গুড় চিনি । এতেই অনেক মজা ছিল । বর্ষা কাল এলেই বেধে যেত জ্বালা গ্রামের কাচা রাস্থা গুলো কাদা কাদা হয়ে যেত । জুতো খুলে আমরা স্কুলে যেতাম কেউবা পানির উপর দিয়ে চাইকেল টা উচু করে নিয়ে যেত । কখনো বশি দিয়ে পুতি মাছ ধরতে যেতাম পাইতাম কিনা মনে নেই । তবে যেতাম । বৃষ্টি এলেই খাল বিল পানিতে ভরে যেত । কলার ভেলা নিয়ে পানির মধ্য দিয়ে যাওয়ার মজাই ছিল আলাদা ।
যখন বাড়ি ফিরতাম সারা গায়ে কাদা লাগানো থাকতো মা বকলে বাবা কিছু বলতনা । যখন বেশি বকত চুপটি করে দাদীর আচলের নিচে মুখ লুকাতাম । এতো কিছুর পরেও মনটা আনন্দে ভরে যেত যখন টিনের চালে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ত । বৃষ্টি ভেজা রাতে মাকে লুকিয়ে কখনো চিঠি লিখতাম আর বসে থাকতাম কখন উত্তর আসে । একটা উত্তর পেলে ওই চিঠিটা অন্তত ২০ বার পরতাম ।কখনো মায়ের কাছে ধরা খেয়ে বকুনি । কখনো ডাক পিয়ন এর চাচাকে ম্যানেজ করতাম চিঠিটা কার ও কাছে না দেওয়ার জন্য ।
মনে পরে কলেজ জীবনের কথা সেই বাজে ছেলে আলামিনের কথা যার হাত ধরে শুরু করেছিলাম সিনেমা দেখা ।ও খুলনার পিকচার প্লায়েস এর মোড়ে এক চাচার কাছ থেকে পেপার ও ছোট বই( নাম বলবো না ) কিনে আনত । চাচা এই ১০ বছর পর ও ওকে খোঁজে ওর কাছের পাওনা ১০ টাকার জন্য । বাকিতে বই কিনে পড়তো ও আমাকে পড়াত । প্রেমের ব্যাপারে ওর একটু এলারজি ছিল কেন তা এখানে বলা ঠিক হবে না । বাড়ি এলেই মিথুন লোহিত দের সাথে ক্রিকেট খেলা , আর একজন ছিল পালাশ দা কোন খেলায় সে না করতো না আমাদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ কিন্তু পারফর্মেন্সে ছিল .................. বলবো না । এখন সে অনেক ব্যাস্ত । আগের সেই দিন গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেল ।
এখন এসি ছাড়া ভাল লাগে না কিন্তু মায়ের হাতের তাল পাতার পাখার বাতাসের আনন্দ এসির বাতাসকেও হার মানায় ।সে ছিল এক অন্যরকম অনুভুতি । কখনো ও অন্নের গাছ থেকে আম চুরি বা নারকেল চুরি করে খেতাম । গ্রামের বুড়িগুলো কে তো তাল পারতে দিতাম না সেই অনিচ্ছে বুড়ি যে আমাকে সারাক্ষণ লাঠি নিয়ে তারিয়ে বেড়াতো । বুড়িটা এখন মরে বেঁচেছে আমার হাত থেকে ।
শরৎকাল এলেই বোঝা যেত দুর্গা পূজায় মন্দির থেকে ঢাকের শব্দ এসে ঘুম ভেঙ্গে যেত । কখনো মেয়েদের উলু দেওয়ার শব্দ খুবই ভাল লাগত বন্ধু দের সাথে যেতাম পুজা দেখতে ।পুজার প্রসাদ লাড্ডু খাওয়া । আর মেলেয় ঘুরতে যাওয়া । সরস্বতী পূজাতেও হতো অন্য রকম অনুভূতি । আর ঈদ এর মধ্যে রোজার ঈদ টা ভাল লাগতো । মায়ের হাতের ইফতারি আজও মিস করি । এইত কয় বছর আগে নেলসন এর সাথে বড় দিনে ঘুরেছিলাম । কিছুই ভুলিনি । দিন যায় দিন আসে সৃতি টুকু থেকে যায় ।
হিসাব করে বলতে পারব না এখন এই যুগে এসে আমরা কতোটা পেয়েছি আর কতোটা হারিয়েছি । তবে একথা সত্য এমন বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই নি আমরা চেয়েছি রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা নজরুলে বিদ্রোহী বাংলা জীবনানদের রুপসী বাংলা দেখতে বা বঙ্গবন্ধুর সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে । যেখানে ধর্ম যার যার বাংলাদেশ হোক সবার । জয় হোক মানবতার জয় হোক মনুসত্তের বিলুপ্ত্ হোক সাম্প্রদায়িকতা । বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে অসাম্প্রদায়িকটার পথ ধরে । এই আশা নিয়ে থাকলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭