somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যোৎস্না খেকো ছেলেটি [ছোট গল্প ]

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গভীর রাত। ছেলেটি ছাদের উপর একা। আকাশে ইয়া বড় একটা চাঁদ। চাঁদ মামার নরম আলো সমগ্র শহরের ন্যায় এই এক টুকরো ছাদটিকেও আলোকিত করে আছে। ছেলেটি ছাদের এক কোনে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। জ্যোৎস্না আলোয় ভিজে যাচ্ছে তার পুরো শরীর। ছেলেটির মনটা আজ খারাপ। ভীষন। বিক্ষিপ্ত মনটাকে সে স্থির করতে চাচ্ছে প্রবল ভাবে। কিন্তু পারছে না। মানুষ নামক এই অদ্ভুত জীবগুলোর অনেক কিছু করারই ক্ষমতা আছে তবে এই এক ক্ষেত্রে তারা দুর্বল। অসহায়। মাঝারি টাইপ আরামদায়ক বাতাসে কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো উড়ছে ছেলে্টির। অন্য সময় হলে ব্যাপারটি উপভোব করতো সে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিটি ভিন্ন। খুবই ভিন্ন। হঠাৎ প্যান্টের ডান পকেটে অবস্থানরত মুঠোফোনটির ভাইব্রেসন অনুভব করে ছেলেটি। পকেট থেকে মুঠোফোনটি বের করে স্কীনের দিকে তাকায় সে। পরিচিত নাম, পরিচিত নাম্বার। যন্ত্রটা হাতে নিয়ে এক দৃষ্টিতে স্কীনের নীলাভ আলোয় ভেসে ওঠা দু' অক্ষরের নামটির দিকে তাকিয়েই থাকে ছেলেটি। কলটা রিসিভ করে না সে। পরক্ষণেই ডান পাশের লাল রঙের বাটনটি কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রেখে মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেয় ছেলেটি। চোখ দু'টো ছলছল করে ওঠে তার। মুঠোফোনটি পকেটে যথাস্থানে রেখে রেলিং ধরে খানিকটা নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে ছেলেটি। জ্যোৎস্নায় ভরে যাওয়া ছয় তলা বিশিষ্ট এই ছাদ থেকে নিচের পৃথিবীটাকে খুব ভালো লাগে তার। নিশ্চুপ পিচ ঢালা রাস্তা। পরিপূর্ণ ভাবে নিরবতা পালন করছে যেনো আজ। রাস্তার পাশের সোডিয়াম লাইটের আলো ও জ্যোৎস্না আলো মিশে রাস্তাটিকে অন্যরকম লাগছে খুব। ছেলেটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায়। চাঁদের আলোয় ছেলেটির মুখখানা প্রবল মায়াময় মনে হয়।দূর আকাশে বিদ্যমান চাঁদটিও মন খারাপ টাইপ সমবেদনা
মিশানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

- কিরে, লাফ দিবি না'কি?
আচমকা কারো কন্ঠস্বরে ঘাড় ঘুরিয়ে কন্ঠস্বরের মালিকের দিকে তাকায় ছেলেটি। আরেকটি ছেলে। ধীর পায়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। মৃদু ধরনের শুকনো, মলিন হাসি ফুটে ওঠে ছেলেটির মুখে।

- কই ছিলি এতক্ষণ?
- "আর বলিস না, বদমাইশ গুলো ফোন করছিলো একের পর এক। কথা শুনলে পিত্তি জ্ব্ইলা যায়। আরে বেটা, জিতছোছ তো কি হইছে? আমরা জিতি না। রেফারির বদৌলতে চুরি কইরা জিইত্যা মনে হয় লা-লিগাই জিইত্যা ফেলাইছোছ। আরে বাপ, কাপ তো আমরাই পামু। পেনাল্টি দুইটা দিলে তো কম্বলের নিছে যাইয়া মুখ লুকাইতি। তখন তো খুঁইজাও পাইতাম না তোদের। " কথা গুলো দ্রুত একসাথে বলে কিছুটা হাঁপিয়ে ওঠে দ্বিতীয় ছেলেটি।
প্রত্যুত্তরে আবারো মৃদু একটা হাসি উপহার দিয়ে দ্বিতীয় ছেলেটির পিঠটা খানিক চাঁপড়ে দেয় ছেলেটি।
- “আংকেল ফোন করছিলো।তুই নাকি দু’টা নাম্বারই off রাখছোছ। একটাতে নাকি একবার ঢুকছিলো।কিন্তু তুই রিসিভ করস নাই।পরে সেইটাও off । ফোন বন্ধ রাখছোছ ক্যান? ফোন খোল”।কিছুটা রাগ মিশ্রিত কন্ঠেই তাগাদা দেয় দ্বিতীয় ছেলেটি।
শুকনো হাসির রেশটি মুখে ঝুলিয়ে রেখেই পকেটে হাত দিয়ে মুঠোফোনটি বের করে ছেলেটি।ডান পাশের লাল বাটনটি চাপ দিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রেখে মুঠোফোনটি open করে সে। open হয়েই ভাইব্রেসনের মাধ্যমে মেসেজ আসার জানান দেয় যন্ত্রটি। বাবা নামক পরিচিত নামে সেফ করা পরিচিত এক নাম্বার থেকে এসেছে মেসেজটি। ছেলেটি স্কীনের আলোয় মেসেজটি পড়তে শুরু করে।গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তার সাথে যোগ দেয় দ্বিতীয় ছেলেটি।

“ কিরে বাছা, বলছিলাম না আমরাই জিতমু। হারলি তো। হে হে হে। একা একা খেলা দেখতে ভালো লাগে নাই রে।যদিও তোর মা বই পড়ার নাম করে অন্যান্য দিনের মত জেগেই ছিলো।আর তুই তো বন্ধুদের সাথে খেলা দেখবি বলে চলে গেলি। বাদ দে। মন খারাপের কিছু নাই। কাপ তো তোরাই পাবি। হে হে হে।
শোন, রাত জাগার কারণ নাই। তোর মা কঠোর ভাবে বলছে রাত না জাগতে। ঘুমিয়ে পড়।কালকে ক্লাস আছে না। শুভ রাত্রি আমার পুত্র”।

-“দেখলি আংকেল স্বীকার করছে কাপ আমরাই পামু”।দ্বিতীয় ছেলেটি চোখ টিপি মেরে বলে ওঠে।
অনেক্ষণ পর পরিপূর্ণ সুন্দর একটি হাসি প্রত্যুত্তরে উপহার দেয় ছেলেটি।
-“বাকি দুইটা কই”? জিজ্ঞাসা করে ছেলেটি।
-কই আবার, রুমে।বদমাইশ গুলোর সাথে ফোনে ঝগড়া করছে নিশ্চয়ই।
হাত ঘড়ির দিকে তাকায় ছেলেটি। দুইটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট।
-“চল, দেরি হয়ে গেছে।ঘুমামু”। ছেলেটি দ্বিতীয় ছেলেটিকে খানিকটা জোর গলায় বলে।
-“চল”। মুচকি হেসে দ্বিতীয় ছেলেটি সম্মতি জানায়।

দুই বন্ধুই হাঁটতে থাকে ছাদে উঠার দরজার অবস্থান লক্ষ্য করে। তাদের পিছনে পড়ে থাকে এক টুকরো জ্যোৎস্না ভরা ছাদ, রাতের আকাশ আর আকাশে থাকা বিশাল আকারের চাঁদটি। তিন লক্ষ চুরাশি হাজার চারশত তিন কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত চাঁদ নামক উপগ্রহটি ভুঁরু কুঁচকে কিছুটা ক্রোধ মেশানো দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ছেলে দুটির চলে যাওয়ার দিকে।


উৎসর্গঃ
১। দহন আহমেদ [ ইদানিং উনারে খুঁইজা পাওয়া যাইতাছে না, দহন ভাই আপনে কই? ]
২। এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা
৩।কান্ডারী অথর্ব

[ আমার ব্লগ লাইফের শুরুতে আমার পোস্ট গুলোতে কয়েকজন ব্লগারের কমেন্ট ছিলো নিয়মিত। তাদের মধ্য হতে স্বল্প কয়েকজনকে গল্পটি উৎসর্গ করলাম কৃতজ্ঞতা স্বরূপ। শুভ নববর্ষ সবাইকে। ]

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৫
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×