somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেজাল্ট [অনুগল্প]

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সাদেক সাহেবের মনটা আজ ভালো নাই।টেনশনে আছেন।তার নিজের কোনো ব্যাপার নিয়ে নয়। টেনশনটা ছেলের রেজাল্ট নিয়ে।শুভ্রর আজ এইচ এস সি রেজাল্ট দিবে।রমজান মাস।সেহরী খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে অন্যান্য দিন খনিক ঘুমিয়ে নেন তিনি। আজ ঘুমান নি।বর্তমানে ছাদের উপর পায়চারি করছেন।সকাল সাতটা বাজে।রমজান মাস বলে যান্তিক শহরটি এখনও পুরোপুরি জেগে ওঠেনি।কোলাহোল শূন্য শহরটিকে মন্দ লাগছে না আজ।নাক দিয়ে টেনে মুক্ত কিছু বাতাস ভিতরে নেন সাদেক সাহেব।বড্ড ভালো লাগে তার।নিজের মধ্যে বিরাজমান অস্থিরতাটা কিছুটা কমতে শুরূ করেছে।সাদেক সাহেব আশ্চর্য হোন।আজকাল-কার ছেলে মেয়ে গুলোর খুব রকম ছোট বয়স থেকেই এ+, এ, বি, সি, ডি ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়াটা তার খারাপ লাগে।মায়া লাগে খুব।বিদ্যার পাল্লা তোমার চেয়ে দুই ধাপ বেশি কিংবা এক ধাপ বেশি আঙ্গুল উচিঁয়ে দেখিয়ে দেয়াটা কেমন যেনো দৃষ্টিকটু লাগে তার।সাদেক সাহেব নিজেকে সামলে নেন।তার চিন্তা-ভাবনা যে অতিরিক্ত দার্শনিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারছেন।নিচে নামতে হবে।ছেলেটা ঘুম থেকে উঠেছে কিনা দেখা দরকার।

নিচে নেমে দেখেন মা-ছেলে একসাথে এখনও ঘুমাচ্ছে।শুভ্রর রুমটা আজ কিছুটা অগোছালো।মিলি নিজেও হয়তো কিছুটা চিন্তিত।সাদেক সাহেবের মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে ওঠে।মিলির বাম হাত ছেলের বুকের উপর রাখা।গভীর মমতা মাখা দৃশ্যটি থেকে সাদেক সাহেব তার চোখ দু'টিকে সরাতে পারেন না।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন।হাসির রেখাটি মুখে ঝুলিয়ে রেখেই নিজ রূমের দিকে পা বাড়ান।

ছেলের সাথে তার সর্বশেষ রেজাল্ট বিষয়ক কথা হয়েছে সেহরীর সময়।খাবার টেবিলে।
- কিরে এখনও টেনশন লাগছে।
- "কিছুটা।" খেতে খেতে প্লেটের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিয়েছিলো শুভ্র।
- "তোকে না বলছি টেনশন করতে না।" মিলি কিছুটা কৃত্তিম রাগ জড়ানো কন্ঠে বলে ওঠেছিলো।
- মা-বাবা শোন, মনে হইতাছে রেজাল্টটা আমার মাথার উপর দিয়া যাবে।
-"মানে?" সাদেক সাহেব জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
- "মানে হলো, হয়তোবা একটুর জন্য এ+ টা মিস যাবে।" কিছুটা হেসে বলেছিলো শুভ্র।তার ছেলের হাসিটা সুন্দর।খুব।
- "তুই এ+ পেলেও আমরা খুশি।না পেলেও।তোর তো মন খারাপের কোনো দরকার নাই, বাবা।ফিজিক্স আর ক্যামেস্ট্রি এক্সামের আগে জ্বর না আসলে তো এক্সাম আরো ভালো হতো।১০২ ডিগ্রি জ্বর নিয়েও যে তুমি পরীক্ষা দিছো এটাই অনেক কিছু।" তুই তুমি মিশ্রিত করে বলেছিলো মিলি।
- "অনেক কিছু না, মা।" শুকনো হাসি দিয়ে এটাই বলেছিলো ছেলেটি তার।

সাদেক সাহেবের অস্থিরতাটা আবারো ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।ছেলের রেজাল্ট কোনো ফেক্টর না।ফেক্টর হলো ছেলে।শুভ্র নামকরা অভিজাত কলেজে পড়ে।তার বন্ধুরাও এমন।ভালো স্টুডেন্ট।তারা এ+ পাবে।উল্লাস করবে।শুভ্র এ+ না পেলে তার মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক।ছেলের মন খারাপ তিনি সহ্য করতে পারেন না।তারও মন খারাপ হবে, খুব। সাথে মিলিরও।তার দু'তলা বাড়ির উপরের আকাশটুকু মেঘাচ্ছন্ন থাকবে কিছুদিন। তবে আশার কথা হলো কালকে মিলি বলেছে, তার মন বলছে শুভ্র নাকি এ+ পাবে।টেনশনের কোনো কারণ নাই।মিলির কথায় তিনি ভরসা পান।মিলির কথা সাধারণত বেঠিক হয় না।আর ছেলের প্রতি মায়ের অনুমান সঠিক হওয়ারই কথা।সাদেক সাহেব মনে মনে ঠিক করে ফেলেন রেজাল্ট যাই হোক ছেলেকে আজ তিনি জড়িয়ে ধরবেন।অনেকদিন ছেলেকে বুকে জড়ানো হয় না।বাবা-ছেলের বুক মাখামাখি হোক কিছুক্ষণ পরম মমতায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৩০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×