মৃত্যুর মাতম থেমে যায় কয়েকটি দিন অতিবাহিত হলেই । মৃত্যুর পরে চল্লিশ দিনও যেতে পারে না, নতুন জীবনের খুঁজে নেমে যেতে দেখা যায়। অথচ একটি কুকুর, তার পালকের মৃত্যুর পরেও দীর্ঘ নয় বছর অপেক্ষা করেছিল তার প্রত্যাবর্তনের।
১৯২৩ সালের ১০ নভেম্বর জন্ম হাচিকো নামের কুকুরটির । জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর হিদেসাবুরো উনো জাপানের শিবুয়া স্টেশনে ছোট্ট কুকুর ছানাটি কে কুড়িয়ে পায় । রেলস্টেশন থেকে কুড়িয়ে নিয়ে আসা কুকুর টিকে প্রফেসর পালতে থাকে । প্রফেসর কুকুরটির নাম রাখেন “হাচিকো”...জাপানিজ ভাষায় “হাচি” অর্থ আট এবং “কো” অর্থ রাজপুত্র।
প্রতিদিন সকালে পালক প্রফেসরকে বিদায় জানাত হাচিকো। দিন শেষের নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশনের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসে থাকত পালকের প্রত্যাবর্তনের পথ চেয়ে। স্টেশনের সবাই অল্প কিছুদিনেই চিনে ফেলেছিল প্রফেসরের এই ছোট্ট বন্ধুটিকে। তাদের এই সখ্যতা ১৯২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত চলে। তারপর একদিন প্রফেসর সেই যে গিয়েছিলেন আর ফিরে আসেননি। সেরিব্রাল হ্যামারেজ অর্থাৎ হঠাৎ মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান তিনি।
প্রফেসরকে কেড়ে নিয়ে গেলেও হাচিকোর বিশ্বস্থতা বেঁচেছিল তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। সে প্রতিদিন বসে থাকত প্রফেসরের জন্য। দিন চলে গিয়ে সপ্তাহ হয়েছে, সপ্তাহ মাসের হিসেব চুকিয়ে বছর হয়েছে। কত ঋতু এসেছে, কত চলে গেছে। কিন্তু বিরাম হয়নি হাচিকোর পথ চেয়ে থাকা। তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সে পালিয়ে আসত সেই সময় হলেই।
প্রফেসরের মৃত্যুর ৭ বছর পর তাঁর এক ছাত্র জানতে পারে প্রফেসরের এই কুকুরটির এখনো অপেক্ষা করে থাকার কথা। সে শিবুয়া স্টেশনে কুকুরটিকে দেখতে আসে ও আশপাশের লোকজন ও প্রফেসরের বাগানের পুরোনো মালীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে “Tokyo Asahi Shimbun” নামক পত্রিকায় প্রকাশ করে। এর পরপরেই হাচিকোর কাহিনী জাতীয়ভাবে সবার নজরে আসে। এবং সে হয়ে ওঠে বিশ্বস্ততার এক জাতীয় প্রতীকে। হাচিকো হয়ে পড়ে জাপানের ন্যাশনাল সিম্বল অব লোয়ালিটি। আট মার্চ ১৯৩৫ হাচিকোও চলে যায় না ফেরার দেশে। পিছে রেখে যায় তার কীর্তি, মানুষের চেয়েও শ্রেষ্ঠত্বের।
এপ্রিল ১৯৩৪, শিবুয়া স্টেশনে হাচিকোর আদলে একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি স্থাপন করা হয় হাচিকোর সম্মানে। এ মূর্তির উদ্বোধনে হাচিকো নিজেও উপস্থিত ছিল। পরবর্তিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মূর্তিটি রিসাইকল্ড হয়। ১৯৪৮ সালে মূল শিল্পীর ছেলের উপর আবার দায়িত্ব দেওয়া হয় হাচিকোর মূর্তি নির্মানের। একই বছরের আগস্ট মাসে মূর্তিটির উদ্বোধন করা হয়, যা আজও বর্তমান। জাপানের ব্যস্ততম এই স্টেশনে হাচিকোর মূর্তির কাছাকাছি অংশের নাম "Hachikō-guchi" বা "The Hachikō Entrance/Exit"। এই অংশটি সবার কাছে বিখ্যাত এক মিলন-স্থান। হাচিকোর জন্মশহরের ২০০৪ সালে হাচিকোর মূর্তি স্থাপন করা হয়।
হাচিকোর দেহাবশেষ জাপানের ন্যাশনাল সাইন্স মিউজিয়ামে সরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত Hachiko- A Dog’s Story ।
গুগুলে সার্চ করে ঘুরে আসতে পারেন সেই Shibuya Station 35°39′32.6″N 139°42′2.1″E ।
*** ব্যক্তিগত জীবনে কুকুর জাতীয় প্রানী তেমন একটা পছন্দ না করলেও এমন একটা ঘটনা জানার পর বিভিন্ন সাইট ঘেটে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে উপরোক্ত লেখাটি *****
ফেসবুক এ যেকেউ যুক্ত হতে পারেন
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:০০