সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি
Wystan Hugh Auden (সংক্ষেপে W H Auden) ১৯০৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ড এর ইয়র্কে জন্ম গ্রহণ করেন। অক্সফোর্ড এ পড়াশোনার পর কিছুদিন বার্লিন স্লামে ছিলেন। ১৯৩০ এর শুরুতে তিনি হেলেনসবার্গ ও মেলভার্নে দুটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে গ্রুপ থিয়েটার, লন্ডনে নাটক লিখেছেন। ১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ড ছেড়ে আমেরিকার নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। তারপর মিশিগান ও সোয়ার্থমোরে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত তিনি শীতকাল আমেরিকা আর গ্রীষ্মকাল ইউরোপ এ কাটাতেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত প্রতি বছর কয়েক সপ্তাহ অক্সফোর্ডে খন্ডকালীন কবিতা বিষয়ক নির্বাচিত অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ এ নিউইয়র্ক ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে অক্সফোর্ডে চলে আসেন। পরের বছর ১৯৭৩ এর সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে ভিয়েনায় এই কবির মৃত্যু হয়।
তখন কবিতায় আধুনিকতা ব্যাপকতা লাভ করেছিল চারদিকে। কিন্তু তিনি তথাকথিত আধুনিক কবি ছিলেন না। তিনি অনেকটা সাবজেক্টিভ কবিতা লিখতেন। তাঁর কবিতায় ব্যক্তি-সাতন্ত্র প্রবলভাবে প্রকাশিত যে কী না বর্তমান সময়ের সাথে সম্পর্কিত কোনো প্রতিবেশী, কোনো বিশেষ কাজ অথবা সমস্যায় আলোড়িত। একই সাথে নিজস্ব জগৎ ও বহির্বিশ্বের সাথে দারুণভাবে সম্পর্কিত তাঁর কবিতা। বর্তমান সময়কে ইতিহাস চেতনা, সমাজ চেতনা ও রাজনৈতিক চেতনার ভেতর দিয়ে সুন্দর করে গেঁথে সাজিয়েছেন।
ডব্লিউ এইচ অডেন। এই কবির একটি কবিতা ভাষান্তর করার চেষ্টা করেছি। আক্ষরিকতা বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু, মনে হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে সেটা ফিরে ফিরে এসেছে। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং অবশ্যই গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। যেন অনুবাদে আমার দৃষ্টি খোলে।
ডব্লিউ এইচ অডেনের একটি কবিতা
ভাষান্তর: ঋতো আহমেদ
পাঠ
০১
স্বপ্নে প্রথম বার যখন দেখি, দেখতে পাই আমরা পালাচ্ছি,
দৌড়ে দৌড়ে হয়রান হয়ে যাচ্ছি; চোর বাটপার আর
কিছু আহত ভালুকের এই উপত্যকায় তখন সিভিল ওয়ার।
পেছনে, খামার গুলো পুড়ে গেছে; যেতে যেতে আমরা ডানে মোড় নিয়েছি,
হঠাৎ লম্বা এক বাড়ির সামনে এলাম, খুব চওড়া এবং খোলা এর দরজা
যেন অপেক্ষায় আছে, অনেক আগের হারিয়ে যাওয়া এর মালিকের উত্তরাধিকারীর।
সেখানে, শোবার ঘরের সিঁড়িতে বুড়ো মতো এক কেরানী বসেছিলেন,
কী যেন লিখছিলেন; সন্তর্পণে পেরিয়ে যেতে চাইলাম আর
সে মাথা তুলে চেঁচিয়ে উঠে বলল “ভাগ, ভাগ এখান থেকে”
আমরা থাকতে চেয়ে মিনতি করলাম:
তিনি তাঁর চশমাটা খুলে একটু তাকালেন, ইতস্তত করলেন, তারপর
বললেন, না, তাঁর কোনো ক্ষমতা নেই আমাদের বাঁচানোর
আমাদের জীবন সুশৃঙ্খল নয়, আমাদেরকে অবশ্যই যেতে হবে।
০২
আমার দ্বিতীয় স্বপ্নের শুরু হলো মে’র অরন্যের ভেতর; তখন
হাসি-আনন্দেই ছিলাম আমরা; করুণ নীলাভ চোখে তুমি তাকাচ্ছিলে,
আর আমি ছিলাম ভ্রুকুটিহীন তোমার দারুণ নাগ্নিক সৌন্দর্যে বিভোর।
যা কিছু মঙ্গলময় শাশ্বত, ঠোঁটে ঠোঁট রেখে আমরা তা চাইছিলাম;
কিন্তু এর ফলশ্রুতিতে আকস্মিক বাতাস আর অগ্নি-শিখা হঠাৎ
ছিনিয়ে নিলো তোমায় দূরে—দুরত্বে, আর আমি আবারো নিঃস্ব হলাম
একটি খোলা ও রুক্ষ প্রান্তরে আমার দৃষ্টিকে আকর্ষণ করা হলো,
যেখানে মৃত্যু সমাহিত, মৃত্যু নীরব নিথর আর যেন শুকনো হাড়গোড়,—
যেখানে কোনো কষ্ট নেই, পাপ নেই, অথবা নেই কোনো প্রাণ-স্পন্দন।
আমি একটি উঁচু চেয়ারে বসে, একা
যেন এক বাচ্চা ছেলে, প্রশ্ন করছিলাম
কেন এই হিম এই পাথরের মতো শক্ত শীত—শীতলতা আমার হাতে
এ-তো মানুষের হাত,— মানুষের মতো দেখতে তোমারই কোনো এক হাত।
০৩
আর আমার শেষ স্বপ্নটি ছিল এ-রকম: একটি বিজয় উৎসব
আর ভোজ সভায় যাওয়ার কথা আমাদের—যা কী না অনুষ্ঠিত হয়
কিছু প্রতিযোগিতা কিংবা বলা যায় ভয়ংকর কিছু পরীক্ষার পর।
কেবল মাত্র আমাদের সিটেই ছিল ভেলভেট কুশন, তাই
ভাবছিলাম আমরা নিশ্চয় জয়ী; যদিও সবার জন্যই মুকুট ছিল সেখানে,
আমাদেরটা ছিল সোনার, বাকিদেরগুলো কাগজের।
বিখ্যাত প্রত্যেকজন অতিথিকে মনে হচ্ছিলো বেচারা অথবা মজার করুনার যেন।
ভালোবাসা সেইসব মূল্যহীন সাহসিকতায় হেসেছিল তখন যেখানে গ্লাস—রকেট—
শত শত মৃত্যু দেখিয়ে দিচ্ছে আমাদের অর্জিত অসতর্কতাকেই। আর
একসময় সমগ্র সবুজে—ঘাসে, সবাই দলবেঁধে নেমে গেল, যেন
কাগজের মুকুটের এক মহাসমুদ্র প্রস্ফুটিত হয়েছে নাচবে বলে:
কিন্তু আমাদের মুকুট খুব ভারী থাকায় আমরা নাচিনি।
০৪
অতপর আমি জেগে উঠলাম। দেখলাম তুমি সেখানে নেই। আমার দুশ্চিন্তা
লজ্জায় পরিণত হলো, স্বপ্ন তিনটির কথা মনে করে
প্রচন্ড গালাগাল দিতে ইচ্ছে করলো। এক একটা এক এক ভাবে
তাদের নিজস্ব ভঙ্গিতে আমাকে শেখাতে চেয়েছিল
তোমাকে ভালবাসার আমার এই যে ইচ্ছা— এটা সেরকম কখনও হবে না,
যেমনটি আমি ভাবি, যতোই কাকতালীয়তা চাই না কেন
কাকে কীইবা দেয়া হয়েছে, যদি তারা চায়ও?
(অক্টোবর, ১৯৪২)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫৮