১৯৪০। বোস্টন। হঠাৎ করেই বাবার মৃত্যু। সিলভিয়ার বয়স তখন ৮। আট বছর বয়সের ছোট্ট সিলভিয়া প্লাথ লিখলেন—
Father, this thick air is murderous
I would breathe water
কী আশ্চর্য ! প্রায় একশো বছর পর। এবার জর্জিয়া। ভাইয়ের হঠাৎ মৃত্যুতে ১৩ বছরের জুলিয়া লিখছেন—
Will, you were a leaf
And you fell
I hate Fall now
আমেরিকার কবি অ্যানা মরিসন। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আলফারেত্তায় তাঁর জন্ম। জর্জিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি ভাষায় বিএ শেষ করে আইওয়া ইউনিভার্সিটিতে এমএফএ করেন। সেখান থেকেই তাঁর লিখালিখির শুরু। বর্তমানে সেখানে শিক্ষকতা করছেন। উদীয়মান তরুণ এই কবি অ্যানার কবিতা ইতিমধ্যে নজর কেড়েছে পশ্চিমা বিশ্বের সাহিত্য প্রেমীদের। ব্যক্তিগত জীবনে দু’বছর বয়সী এক ছেলের জননী অ্যানা আইওয়াতে বসবাস করছেন।
আসুন জুলিয়া অ্যানা মরিসন এর কবিতা পাঠ করি আজ।
Julia Anna Morrison
জুলিয়া অ্যানা মরিসন এর কবিতা
বাংলা বিনির্মাণ : ঋতো আহমেদ
অসীম সমুদ্র
সমুদ্র-তীরে তুষারের মধ্যে কালো কোটের ভেতর কুঁকড়ে ছিলাম
আমি, এক মা। সেই শীত কেড়ে নিয়েছে আমার
ঘুমের সাতশোটি ঘন্টা। পাইন গাছগুলোয় ঝুলেছিল জমাটবদ্ধ
স্তব্ধতা। আর আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে পড়ে যাই,
বিভক্ত হয়ে যাই দ্বৈত সত্তায়
বহুবছর অসুখ হয়নি আমার। তোমার
রোগবালাই দিয়েই শুরু,
কাগজের ওই ঝুড়িতে তোমার ঘুম
তোমার জ্বর আমাকে বিষণ্ন করে তোলে—পুরনো ধূসর
ঢেউগুলোয় ভেসে আসা রোগা-পাতলা এক ঘোড়া যেন
একদম পিচ্চি তুমি। ডুবে যেতে পারো
সামান্য ঝড়জলে, চোখের রঙে
আমার হৃদকম্পন ক্ষীণ হয়ে আসে, তোমার চেয়েও। তুষার
ছাড়া আর আমার ভাই ছাড়া সব কিছুই নিলীন হয়ে যায়।
তোমার জন্য, আমি তার নাম ধরে ডাকি
একটু ঘুমুতে পারি যেন। এক ঘন্টা এক মাসের চেয়েও ছোট সে।
মৃত্যুর সময় তাকে পরিষ্কার হাঁটতে দেখি আমি
ওই অসীম সমুদ্রের ভেতর; তোমাকে এতো ভালোবাসি, তবু শেষে তার সাথেই চলে যাই।
মাঝ বরাবর
ভোরবেলায় আমরা এই দ্বীপের প্রান্ত বরাবর হাঁটতে যাই আর তুষার পড়তে শুরু করে
মাথার ভেতর তোমার ফেলে যাওয়া কোষগুলো চাছা বরফের মতো ঝরে পড়ছে একে একে,
যেন আমার মা গাইছেন একটি গান—ছিন্ন বিচ্ছিন্ন টুকরো একেকটা
তোমাকে ছেড়ে যাবো এখনো ঠিক করিনি আমি
শীতকাল শেষ হয় না এখানে— দীর্ঘ করে তোলে অন্ধকার,
বিপরীতে এগিয়ে চলো তুমি
ঘুমের ভেতর ঝকমকিয়ে উঠেছে বরফ, ঘন ঝরনায় ডুবে যেতে যেতে আর জাগতে পারি না আমি
পরদিন দ্বীপ ছেড়ে চলে যাবার কথা আমাদের আর আমি
বরফের ভেতর সুরঙ্গ আর সুরঙ্গের ভেতর কান্না বেরিয়ে আসবার অপেক্ষায় থাকি
প্রত্যেকটি দিন সকালে এভাবেই হসপিটাল থেকে ছুটে যাই আমরা আর শুরু হয় তুষারপাত
ঠিক যেন সহস্র বছর আগের সেই বেদনার্ত শীতের তীব্র তীক্ষ্ণ তুষার
মিষ্টু
শীতের রাত, আকাশে আবারও ঠান্ডা শীতল চাঁদ উঠেছে। ভাবছি
খসাতে হবে জানালার ঝুলে থাকা সমগ্র দিনের বরফ স্তব্ধতা।
ঘর ছেড়ে বেড়ুইনি একটুও। এই বিছানাতেই
মা হবো আমি, ভেজা ব্রা পড়া এক বুভুক্ষু নরমাংস ভোজি আজ
খেয়ে নিচ্ছি নিজেরই গর্ভ যেন এক মিষ্টি সুস্বাদু কিছু।
খুব দ্রুত আমার পেটেরা তাদের সিলিংয়ের সব ঝুড়ির সমস্ত
নক্ষত্র শেষ করে ফেলবে। আর কতো ক্ষুধার্ত হবো আমি।
প্রতিটি স্পন্দনে আমার আশঙ্কা, হয়তো এই বাচ্চা
এই ফেরেস্তা আবারও ফেরেস্তা হয়েই ফিরে যায় বুঝি—যার জন্ম হয়তো
উজ্জ্বল নীল কোট পড়া বরফ-গলা সমুদ্রের ওই গভীর থেকেই হবে।
ছবি: : ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৬