somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অগ্নিযুগের অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১০১ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী এবং চট্টগ্রামবাসীর কিছু দাবী

০৪ ঠা মে, ২০১২ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৫মে ২০১২ ইংরেজি। ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের প্রথম নারী আত্মদানকারী বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের (৫মে ১৯১১ – ২৩সেপ্টেম্বর ১৯৩২) ১০১ তম জন্মবার্ষিকী। প্রীতিলতার নাম নতুন করে বলার কিছু না থাকলেও খুব অল্পজনই জানে তাঁর সম্পর্কে। অন্তর্মুখী, লাজুক এবং মুখচোরা স্বভাবের এই বীরকন্যার জন্ম ১৯১১ সালে ৫মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে। বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন চট্টগ্রাম পৌরসভা অফিসের প্রধান কেরানী। মাতা প্রতিভা ওয়াদ্দেদার ছিলেন গৃহিণী। আদর করে প্রীতিলতার মা প্রীতিলতাকে “রাণী” ডাকতেন। আর “ফুলতার” ছিলো তার ছদ্মনাম।

চট্টগ্রামের ডাঃ খাস্তগীর বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী ছিলেন প্রীতিলতা। ১৯১৮ সালে উক্ত বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন তিনি। খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। প্রতিটি শ্রেনীতে তিনি ১ম কিংবা ২য় ছিলেন। ১৯২৬ সালে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন বৃত্তি পেয়েছিলেন। ১৯২৮ সালে কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস সহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন তিনি। পরবর্তীতে ঢাকার ইডেন কলেজ হতে ১৯৩০ সালে আইএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সবার মধ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করা এই বীরকন্যা কলকাতার বেথুন কলেজ হতে ১৯৩২ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করে যোগ দেন চট্টগ্রামের অর্পণাচারণ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে। তিনি সুন্দর করে বাঁশিও বাজাতে জানতেন।

ঢাকায় সে সময়ে “শ্রীসংঘ” নামে একটি বিপ্লবী সংগঠন ছিল। যেটার একটা মহিলা শাখা ছিল যার নাম “দীপালী সঙ্ঘ”। সংগঠনটি নারী শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি গোপনে মেয়েদের বিপ্লবী কাজে অন্তর্ভুক্ত করার কাজও করতো। ইডেন কলেজে পড়ার সময় প্রীতিলতা সেই সংগঠনের সাথে যুক্ত হন। তখন তিনি নিজেকে মাস্টারদা সূর্যসেনের একজন উপযুক্ত কমরেড হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

১৯৩২ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ হতে বিএ পাশ করার পর মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে দেখা করার প্রত্যয় নিয়ে তিনি বাড়িতে ফিরেন কিন্তু বাড়িতে এসে দেখেন তার পিতার চাকরি নেই। সংসারের অর্থকষ্ট মেটানোর জন্য তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন এবং অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে (তৎকালীন নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষিকা পদে নিযুক্ত হন। ডাঃ খাস্তগীর বিদ্যালয়ের এক বছরের সিনিয়র কল্পনা দত্ত ছিলেন প্রীতিলতার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। সূর্যসেনের সাথে সাক্ষাতের আগ্রহের কথা তিনি কল্পনা দত্তকে জানান। যেহেতু কল্পনা দত্ত প্রীতিলতার এক বছরের সিনিয়র সেহেতু প্রীতিলতা বিএ পাশ করার এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩১ সালে কল্পনা দত্ত কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বদলী হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে বিএসসি’তে ভর্তি হন। সে কারণে প্রীতিলতার আগেই কল্পনা দত্তের সাথে মাষ্টারদার দেখা হয়। ১৯৩১ সালে কল্পনা দত্ত সহ আরও বেশ কয়েকজন বিপ্লবীর সাথে যখন মাস্টারদা সূর্যসেনের গোপন সাক্ষাৎ হয় তখন মাস্টারদা সেই সাক্ষাতে কল্পনা দত্তের কাছে প্রীতিলতার খোঁজ খবর জানতে চেয়েছিলেন।

অবশেষে ১৯৩২ সালের ১৩ জুন চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের প্রধান কেন্দ্র ধলঘাটের ঘাঁটিতে মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে দেখা করতে যান প্রীতিলতা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় প্রীতিলতা তার মাকে সীতাকুন্ডে যাওয়ার কথা বলেন। যে বাড়িতে প্রীতিলতার সাথে মাস্টারদার সাক্ষাৎ হয় সে বাড়িতে নির্মল সেনও ছিলেন। সেই বাড়িতে সূর্যসেনের অবস্থানের কথা পটিয়া পুলিশ ক্যাম্প গোপন সূত্রে জানতে পারে। এর আগে একই বছর মে মাসে ব্রিটিশ সরকার সূর্যসেন ও নির্মল সেনকে জীবিত কিংবা মৃত ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষনা করে। পটিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অফিসার-ইন-চার্জ ক্যাপ্টেন ক্যামেরন খবরটি জানার পর পুরষ্কার এবং পদোন্নতির আশায় ঐ বাড়িতে অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং রাত প্রায় ৯টায় ধলঘাটের ঐ বাড়িতে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যাপারটি নির্মল সেনকে জানিয়ে সূর্যসেন ও প্রীতিলতা বাড়ির পিছন দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও পুলিশের গুলিতে নির্মল সেন নিহত হন।

ইতিমধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে প্রীতিলতার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ। এদিকে পরিস্থিতি খুব খারাপ দেখে মাস্টারদা সূর্যসেন প্রীতিলতাকে আত্মগোপন করার নির্দেশ দেন। ৫ জুলাই ছাত্রী পড়ানোর কথা বলে প্রীতিলতা বাড়ি ত্যাগ করেন এবং বিপ্লবী মনিলাল দত্ত ও বীরেশ্বর রায়ের সাথে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে প্রীতিলতা আত্মগোপন করেন (সে দিনের পর প্রীতিলতার সাথে তাঁর বাবা-মা’র আর দেখা হয়নি)। প্রীতিলতার বাবা অনেক খোঁজাখুজির পর ব্যর্থ হয়ে মেয়ের খোঁজে থানা-পুলিশের সরনাপর্ন হলে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তখন বুঝতে পারে যে প্রীতিলতা আত্মগোপন করেছেন। প্রীতিলতা তখন চট্টগ্রামের বেশ কিছু জায়গায় আত্মগোপন করেছিলেন। ১৯৩২ সালের ১৩ জুলাই কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রীতিলতার আত্মগোপনের খবর প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশ সরকার তখন তার সন্ধানে ব্যস্ত সময় কাটায়। প্রীতিলতাকে ধরার জন্য বেঙ্গল পুলিশের সি আই ডি ছবিসহ নোটিশ প্রকাশ করে।


ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাবের সম্মুখভাগ

১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামে পাহাড়তলীস্থ ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমনের সিদ্ধান্ত হলে সূর্যসেন এই অভিযানের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন প্রীতিলতাকে। তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড়ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে ছিল প্রহরী বেষ্টিত। একমাত্র শ্বেতাঙ্গরা এবং ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া এদেশীয় কেউ ঐ ক্লাবের ধারে কাছে যেতে পারতো না। সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এই ক্লাবে এসে মদ খেয়ে নাচ, গান এবং আনন্দ উল্লাস করতো। এই ক্লাবের ফটকে লেখা ছিল “Dogs and Indians not allowed”। ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমনের আগে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ কাট্টলীতে যোগেশ মজুমদার নামের ঐ ক্লাবেরই একজন বেয়ারার বাড়িতে বিপ্লবীরা আশ্রয় পান। যোগেশ মজুমদার ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমনের ব্যাপারে বিপ্লবীদের সহায়তা করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর এ আক্রমণে প্রীতিলতার পরনে ছিল মালকোঁচা দেওয়া ধুতি আর পাঞ্জাবী, চুল ঢাকার জন্য মাথায় সাদা পাগড়ি এবং পায়ে রাবার সোলের জুতা। ইউরোপিয়ান ক্লাবের পাশেই ছিল পাঞ্জাবীদের কোয়ার্টার। এর পাশ দিয়ে যেতে হবে বিধায় প্রীতিলতাকে পাঞ্জাবী ছেলেদের মত পোষাক পড়ানো হয়েছিল। সে দিনের আক্রমনে প্রীতিলতার সাথে যারা ছিলেন তারা হলেন- কালীকিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী (এদের পরনে ছিল- ধুতি আর শার্ট), মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে এবং পান্না সেন (এদের পরনে ছিল- লুঙ্গি আর শার্ট)। বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার প্রথমে ক্লাবের ভিতর থেকে রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ এর দিকে আক্রমণের নিশানা দেখিয়ে দেন এবং এর পরেই ক্লাব আক্রমণ শুরু হয়। সেদিন ছিল শনিবার, প্রায় ৪০জন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করেন। পূর্বদিকের গেট দিয়ে ওয়েবলি রিভলবার এবং বোমা নিয়ে আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা, শান্তি চক্রবর্তী এবং কালীকিংকর দে। ওয়েবলি রিভলবার নিয়ে সুশীল দে এবং মহেন্দ্র চৌধুরী ক্লাবের দক্ষিণের দরজা দিয়ে এবং পিস্তল নিয়ে বীরেশ্বর রায়, রাইফেল আর হাতবোমা নিয়ে পান্না সেন আর প্রফুল্ল দাস ক্লাবের উত্তরের জানালা দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন। প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেবার পরেই ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ইউরোপিয়ান ক্লাব কেঁপে উঠেছিলো। ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে যাওয়ার কারনে ক্লাবে উপস্থিত থাকা সবাই অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে লাগল। ক্লাবে কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের কাছে রিভলবার থাকায় তারা পাল্টা আক্রমণ করলো। একজন আর্মি অফিসারের রিভলবারের গুলিতে প্রীতিলতার দেহের বাম পাশে গুলির আঘাত লাগে। প্রীতিলতার নির্দেশে আক্রমণ শেষ হলে বিপ্লবী দলটির সাথে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন। সেই দিনের আক্রমণে মূলত অনেক ব্রিটিশ নিহত হলেও পুলিশের রিপোর্টে মাত্র ১জন নিহত ও ১১জন আহতের খবর প্রকাশ করা হয়।

পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ শেষে পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড খান। কালীকিংকর দে’র কাছে তিনি তাঁর রিভলবারটা দিয়ে আরো পটাশিয়াম সায়ানাইড চাইলে কালীকিংকর তা প্রীতিলতার মুখের মধ্যে ঢেলে দেন। তার মৃতদেহের পোশাকে নিজ হাতে লেখা বিবৃতিতে লেখা ছিল- “আমরা দেশের মুক্তির জন্য এই সশস্ত্র যুদ্ধ করিতেছি। অদ্যকার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি অংশ। ব্রিটিশরা জোর পূর্বক আমাদের স্বাধীনতা ছিনাইয়া লইয়াছে। ……সশস্ত্র ভারতীয় নারী সমস্ত বিপদ ও বাঁধাকে চূর্ণ করিয়া এই বিদ্রোহ ও সশস্ত্র মুক্তি আন্দোলনে যোগদান করিবেন এবং তাহার জন্য নিজেকে তৈয়ার করিবেন- এই আশা লইয়া আমি আজ আত্মদানে অগ্রসর হইলাম।”


এই সেই জায়গা যেখানে প্রীতিলতা শেষ নিঃস্বাশ ত্যাগ করেন

ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে অংশ নেয়া অন্য বিপ্লবীদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রীতিলতা। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রীতিলতাকে বিপ্লবীরা শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই স্থান ত্যাগ করেন। পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে মৃতদেহ দেখে পরবর্তীতে প্রীতিলতাকে সনাক্ত করেন। ময়না তদন্তের পর জানা যায় গুলির আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড ছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ।

প্রীতিলতার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের অবস্থা নিয়ে বিপ্লবী কল্পনা দত্ত লিখেছিলেনঃ “প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন। কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে বলতেন, ‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রান দিয়েছে’। তাদের দুঃখের পরিসীমা ছিল না, তবু তিনি সে দুঃখকে দুঃখ মনে করেননি। ধাত্রীর কাজ নিয়ে তিনি (প্রীতিলতার মা) সংসার চালিয়ে নিয়েছেন। প্রীতির বাবা প্রীতির দুঃখ ভুলতে পারেননি। আমাকে দেখলেই তাঁর প্রীতির কথা মনে পড়ে যায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন”।

প্রিয় পাঠক,
একটা কথা আমার সবসময় মনে থাকে, সেটা হলো- “যে জাতি তার বীরদের প্রতি সম্মান দেখায়না সে জাতিকে কেউ সম্মান করেনা।” যে শহরে এই বীরকন্যার জন্ম, কর্ম, সংগ্রাম, আত্মদান সে শহর এই চট্টগ্রামের কোথাও তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য সামান্য পরিমাণও আয়োজন নেই। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মনে হয়না পুঁজিবাদী এই রাষ্ট্রযন্ত্রের কোন সৎ ইচ্ছা আছে। কয়জনইবা জানে এই বিপ্লবীর কথা? ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের নায়কদের বাদ দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে নামী-দামী বাহারি নায়ক-নায়িকাদের আজ আমাদের সামনে উপস্থাপন করছে! কিন্তু এদেশের সাধারণ জনতা যারা এই বিপ্লবীদের যুগ যুগ ধরে মনে ধারণ করে আসছে তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের দিকে তাকিয়ে থাকেননি। “পাহাড়তলী রেলওয়ে স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতি” নিজেদের উদ্যোগে যে জায়গায় প্রীতিলতা শেষ নিঃস্বাশ ত্যাগ করেন সে জায়গায় “প্রীতিলতা মনুমেন্ট” নামে একটা মনুমেন্ট তৈরি করে। তাছাড়া ইউরোপিয়ান ক্লাবের গায়ে একটা “স্মৃতি ফলক” আছে সেটাও “পাহাড়তলী রেলওয়ে স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতি”র কল্যাণে স্থাপিত হয়। এই “প্রীতিলতা মনুমেন্ট” ও “স্মৃতি ফলক” যদি না থাকতো তাহলে হয়তো ইউরোপিয়ান ক্লাব সম্পর্কে জানা হতোনা।


স্মৃতি ফলক


ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাব


ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বট বৃক্ষটি


লেখাটা লিখতে ইতিহাসের সন্ধানে যখন বের হলাম তখন খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম সেই ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাব। ক্লাবটির ভিতরে ঘুরে ঘুরে সবকিছু অবলোকন করলাম। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল হতে আজ অবধি ক্লাবটি রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাবের পাশেই রয়েছে পাহাড় আর সবুজ ঘেরা পরিবেশে রেলওয়ে যাদুঘর যেটি সে সময়ে একটা বাংলো হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পাশাপাশি চট্টগ্রামবাসী নিম্নে উল্লেখিত চারদফা দাবিতে গত ১ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে। দাবিগুলো হচ্ছে-

১/ বীরকন্যা প্রীতিলতার স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ করা।
২/ পাহাড়তলীস্থ ইউরোপিয়ান ক্লাবকে প্রীতিলতা স্মৃতি যাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করা।
৩/ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহকে সংরক্ষণ করা।
৪/ পাঠ্যপুস্তকে প্রীতিলতাসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদদের জীবন-গাঁথা অন্তর্ভূক্ত করা।

এই দাবিগুলোর মধ্যে ১ম টি ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে। গতবছর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রীতিলতার স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে। আগামী জুন কিংবা জুলাই মাসে এই স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শেষ হবে এবং ভাস্কর্য নির্মাণ শেষে তা পাহাড়তলীস্থ প্রীতিলতা মনুমেন্টে স্থাপন করা হবে।

পরবর্তী দাবিগুলো অর্থাৎ ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ দাবি এখনো পূরণ হয়নি। তাই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রতি সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি- ১ম দাবিটির ন্যায় ২য় এবং ৩য় দাবি যেন অতিসত্ত্বর পূরণ করা হয়। এরই সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি যেন পাঠ্যপুস্তকে প্রীতিলতাসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদদের জীবন-গাঁথা অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

আসুন আমরা সবাই এই দাবীগুলোর সাথে একাত্বতা ঘোষণা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১২ রাত ৮:৫৯
৫৮টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×