somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শিখা রহমান
কবিতা প্রেমী; একটু এলোমেলো; উড়নচণ্ডী; আর বই ভালবাসি। শব্দ নিয়ে খেলা আমার বড্ড প্রিয়। গল্প-কবিতা-মুক্ত গদ্য সব লিখতেই ভালো লাগে। "কেননা লেখার চেয়ে ভালো ফক্কিকারি কিছু জানা নেই আর।"

কেন লিখি? (অনুকথন)

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাত জাগার মজাই আলাদা; অনেকটা নেশার মতো। ভিনদেশী প্রতিবেশী, সহকর্মীরা আতঁকে ওঠে “কি জানি বাবা...কি ভাবে পারো? আটটা নয়টা বাজতেইতো আমরা ঘুমের রাজ্যে!!” দিগন্তের ওপারে পড়ন্ত দুপুরে ফোন বাজতেই মায়ের উদ্বিগ্ন গলা “ইশশ!! আজও রাত জেগে বসে আছিস?” পাশে শুয়ে থাকা আমার মানুষটা হঠাত জেগে ঘুম ঘুম চোখে বলে “রাত জেগে এতো কি ভাবো?”

রাত নামলেই সারাদিনের হিসেবনিকেশ মিলাই; অপূর্ণ ক্ষতগুলোয় মলম লাগাই। তারপরে রোজ রাতে আমি টহলে বেরোই; মনের খিড়কি দরজা খুলে নিঝুমপুরে পাড়ি দেই।

জনমানবহীন নিঝুমপুর, বড় সাদামাটা বিশেষত্বহীন!! কোন কোন রাতে নিঝুমপুর ষ্টেশনে রেলগাড়ি থামে। নিভু নিভু আলোয় ঘুমন্ত আবছা কুয়াশার আলোয়ান জড়ানো একচিলতে একটা প্ল্যাটফর্ম। ট্রেনে চেপে বসি। এই রেলগাড়ির কোন গন্তব্য নেই...কোন উদ্দেশ্য নেই...অন্তহীন অন্তর্যাত্রা!!

রেললাইনের পাশে সারি সারি নিমন্ত্রনহীন বাড়ি। ট্রেনের জানালা দিয়ে দূরে কোন বাড়ির দিকে তাকিয়ে মনটা কখনো খেয়ালে থমকে যায়...আচ্ছা!! ঐ ছাদের তলায় থাকা মানুষগুলো কেমন? কেমন তাদের সাজানো সংসার? বারান্দায় উদাস বসে থাকা কাউকে দেখে জানতে ইচ্ছে করে কি ভাবছে ওই মানুষটা। হারিয়ে যাওয়া সময়, বদলে যাওয়া প্রিয় মানুষ, নাকি ভালোবাসার সুখী স্পর্শ? জানালার গরাদে দুঃখী কোন ভঙ্গী, চোখের জলের টুপটাপ ঝরে পড়া!! কেমন ওই কষ্ট? কখনো উচ্ছসিত হাসি; হাসির আড়ালে কি লুকিয়ে আছে বেদনা? ওই যে যুগল হাত ধরাধরি করে রেললাইনের সমান্তরালে সুখী ভঙ্গীতে হাঁটছে...শীতের রাতে তারা কি একসঙ্গে লেপ মুড়ি দিয়ে গল্প করে? কেমন তাদের সেই গল্প?

কোন কোন দিন ট্রেন থামিয়ে নেমে যাই...চুপচাপ মনের ডানা মেলে দিয়ে বসি কোন এক বাড়ীর বারান্দায়, বা অন্দরমহলে। কোন কোন দিন আমি পারি, জানতে পারি তাদের গল্প। মানুষগুলোর মনের অন্দরে উঁকিঝুঁকি দিয়ে ফিরে আসি...গল্প লিখি। কোন গল্পই আমার গল্প নয়...গল্পরা ওই মানুষগুলোর! সেই হাজার বছরের পুরোনো গল্প...অতিচেনা সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, ভালোবাসা, ঘৃণা আর কষ্টের রংধনু কাহন!!

মাঝে মাঝে মানুষের কাছে যেতে ইচ্ছে করে না। আজ্ঞাবহ ট্রেনের ছাদ খুলে দেই; আকাশকে বলি নেমে আসতে। আকাশখাতার পাতা উল্টোই...মেঘ, বৃষ্টি, রোদ!! চুপচাপ শুনি বৃষ্টির অবারিত পতন...কে জানে হয়তো রিমঝিম নতুন কোনও ভাষা রপ্ত করে ফেলেছে ইতিমধ্যে!!

কখনো রোদেলা দিনে ট্রেন থামিয়ে নামি। ঘাসের গালিচায় আলতা রাঙ্গা পা, রূপালী নূপুরের টুং টাং!! অথবা জোছনা রাতে ঘাসে পিঠ পেতে আকাশের ঝলমলে চাঁদোয়ায় চোখ রেখে কোন নক্ষত্রের পতনের অপেক্ষায় থাকি। ইচ্ছে করে মাঝরাতে কোন অজানা দরজায় কড়া নেড়ে বলি “ভালোবাসা বাড়ি আছো?” “আসলে যেখানে তুমি আছ,/ সেখানে দেয়াল বা দরজা কিছুই নেই।/ অথচ মানুষ, এই আমি/ শুধু কড়া নাড়তে জানি!”

ক্লান্ত লাগে কোন দিন। চুপচাপ ঘাসে শুয়ে আকাশের সাথে কথা বলি। এখানে ফুল ফোটেনিতো আজ। ফুলেদের বুঝি আজ অন্য পাড়ায় নিমন্ত্রণ!! চন্দনের বন বেড়িয়ে আসা সুগন্ধী বাতাসে প্রজাপতির ঝাঁক খেলে বেড়ায়। আচমকা প্রজাপতি এসে বসে ঘাসে ছড়ানো চুলে!! ঠিক তখনই কবিতারা ধরা দেয়...মুহূর্তের জন্য মাত্র!! শব্দদের কিছুটা পোষ মানাতে পারলেও কবিদের মতো আঙ্গুলে পোষা ছন্দেরা ঘুর ঘুর করে না। আমার কবিতারা তাই বড় ছেলেমানুষ...প্রজাপতিদের এলোমেলো উড়ে বেড়ানোর মতোই!!

তারপরেও লিখি...অন্যদের জীবনের গল্প...এলোমেলো প্রজাপতি কাব্য!! খুব সাধারণ মানুষ আমি। পৌনঃপুনিক এই জীবনে কোন কোন দিন পদ্য-গদ্যের চন্দনগন্ধ ছাড়িয়ে যাক না হয় রান্নাঘরের মুসুরির ডালে কালোজিরে শুকনো লঙ্কা ফোড়নের ঝাঁঝকে!!

শিখা (১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭) (ছবি আমার তৈরী)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×