মেঘের বাটি উপুড়। আকন্ঠজল দুঃখ নামে আকাশ থেকে। বৃষ্টিজলে ভালোবাসা মিশে থাকে। অন্তর্বর্তী দূরত্ব মুছে যায়। যে সম্পর্কগুলো ‘আপনি’ ‘তুই’ থেকে ‘তুমি’ হতে হতে জীবনের স্লেট থেকে মুছে গেছে, জল পড়তেই অদৃশ্য কালিতে ফুটে ওঠে। ভিজে শহরে রিক্সার রঙ্গীন প্লাস্টিকে মুড়ে থাকে উষ্ণ ভালোবাসা।
’বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এলো বান…” দুপুরবেলায় ঝুম বৃষ্টি...শিল পড়ছে...টুপটাপ!! এদিক ওদিক তাকিয়ে বেণী দোলানো ছোট্ট মেয়েটা খপ করে মুখে পুরে দেয় আকাশের আইসক্রীম..মিষ্টি নয়, আবার মিষ্টিও!! রূপোর মল টুংটাং...ঘাসের ওপরে ভেজা পায়ে কিশোরীবেলা ফিরে আসে। জলের ঐন্দ্রজালিক নক্সা সত্য-মিথ্যে, অতীত-বর্তমান একই সুতোয় বুনে চলে।
বৃষ্টি নামলে পথে নেমো মেয়ে!! ইট-কাঠ-কংক্রিটে নয়, মনের নিঝুমপুরে বৃষ্টি নামিও। কখনো কখনো মিথ্যে মায়াজালকে প্রশ্রয় দিয়ে দেখো…নিরাশ্রয় হবে না…বৃষ্টির হয়ে কথা দিচ্ছি!!
© শিখা (২৮শে এপ্রিল, ২০১৮)
বারান্দাটা নিজের বাড়িতেই একঘরে। মিশতে চায় না, নাকি মিশতে পারে না কে জানে!!
ব্যস্ত শহরে তবুও এই বারান্দা টুকুই নিজস্ব রয়ে গেছে। ভেঙ্গে দেয়া কোন কোন ছাদ বারান্দা হয়ে বেঁচে আছে। গরাদের ফাঁক ফোকরে সে আকাশ দেখে আর হারিয়ে যাওয়া চিলেকোঠা খুঁজে বেড়ায়।
বারান্দা সব দেখে। দেখে কারো বদলে যাওয়া...হুডতোলা রিক্সায় অন্য কারো সুঠাম কোমরে কারো হাত, অন্য কারো ঠোঁটে ঠোঁট রাখা। রাত জেগে দেখে মোবাইলে কথা বলায় মগ্ন কাউকে, দেখে চোখে চোখে পড়লে এড়িয়ে যাওয়া!!
কাঁচের চুড়িপরা রিনিক ঝিনিক হাতের আঙ্গুল শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বারান্দার খাঁচা। আঙ্গুলেরা লোহার গরাদ নয়, আঁকড়ে ধরে হৃৎপিণ্ড। কালসিটে পড়া হৃদয় ফিসফিসিয়ে বলে “এভাবেই কি চলে যেতে হয়? মুছে ফেলে সব নির্জনতা আর দুপুরের গল্প...এইভাবেই কি ভুলে যেতে হয় পুরোনো ঠিকানা? এভাবেই? এতো সহজেই?”
বারান্দা জানে অর্থহীন অকারণ অপেক্ষা...জমিয়ে রাখে সেই গল্পগুলো যা আর কখনোই বলা হবে না। একদিন অজান্তেই না বলা গল্পেরা খুঁজে নেবে নতুন মোড়, পেছনে পড়ে থাকবে সেই পুরনো হাসি কান্নারা...
না বলা গল্পেরা হারিয়ে যাবে...আর বারান্দা পড়ে থাকবে একা এবং একা...একঘরে!!
© শিখা (২৯শে নভেম্বর, ২০১৭)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩