''আজ অনেক দিন হলো আমি ফিরব না বলে কাটিয়ে দিলাম ----আদৌ কখনো ফিরতে পারব কি সেটা আমি এখনো জানি না । আমার সামনে কি একটা পথ আছে যেটা আমি অনেক সময়-ই অগ্রাহ্য করতে পারি আবার অনেক সময়ই অগ্রাহ্য করতে পারি না । এটা কেন হয় আমি ঠিক জানি না –আমি বলতে পারি না আমি এটা কেন করছি কিংবা কেন-ই বা করছি না। মা রোজ বলেন বাবু তোমাকে অনেক বড় হতে হবে কিন্তু আমি কিভাবে বড় হব আমি যে এখনো অনেক ছোট''--------------------ভাবনার দোলাচলে এভাবেই হাতড়ায় অনার্স শেষ সেমিস্টারের দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী ছাত্র কল্লোল আর কেটে যায় কল্লোলের দিনগুলো । পৃথিবীর সব স্বপ্নগুলো যেন হারিয়ে যায় কল্লোলদের কাছ থেকে, আবার ঐ সীমানার সৈকতে আছড়ে পড়ে স্বপ্নগুলো, সীমানা থেকেই শুরু হয় আবার কল্লোলদের পথচলা ।।
আজ কল্লোলের শেষ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা । একটু পড়েই কল্লোলের শ্রুতি-লেখক সীমানার আসবার কথা , ব্রেইল বইয়ের পাতাগুলো তাই সমানে উলটে দেখবার পাশাপাশি টকিং ওয়াচ-এর বাটনে বারবার প্রেস করে যাচ্ছিলো কল্লোল।
নয়টা-পঞ্চাশ……-পঞ্চান্ন……দশটা , দশটা পাঁচ বাজবার সাথে সাথে হাত থেমে যায় কল্লোলের–সীমানার ফোনে কল করে কল্লোল, কলার টিউন বেজে যাচ্ছে আপন মনে, কিন্তু ফোনটা তুলছে না কেউ ওপাশে । বাকরুদ্ধ হয়ে যায় কল্লোল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শান্ত হয়ে যায় কল্লোল আর কল্লোলের মুঠোফোন—চুপচাপ আই.ই.আর- এর মঞ্চে বসে থাকে---তারপর, তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই পা বাড়ায়। পেছন থেকে হঠাৎ একটা ডাক পড়ে, একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর !
---‘কল্লোল ভাই, কোথায় যান, আপনার আজ পরীক্ষা নাই ?’
এটা সৈকত ,ডিপার্টমেন্টের ইমিডিয়েট জুনিয়র ছোট ভাই।
---‘আমার রাইটার আসে নাই সৈকত , তোদের আজ পরীক্ষা নাই?’
---‘না, ভাই আমাদের তো কাল-ই পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, চলুন আপনার পরীক্ষা আমি দিয়ে দিচ্ছি’।
না পাওয়ার সীমান্তে যেন দিগন্তের সৈকত দেখতে পায় কল্লোল সৈকতকে পেয়ে, চোখে-মুখে ফিরে আসে সেই দীপ্তি।।
---‘হ্যাঁ ভাই চল--- আজ তোকে না পেলে তো পরীক্ষাই দেওয়া হতো না’
---‘কী বলেন ভাই, আপনি আমাকে একটা ফোন দিবেন না?’
---‘তোর নাম্বারটা কেন যেন খুঁজে পাচ্ছিলাম না-রে’
---‘ঠিক আছে ,চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে’
---‘হ্যাঁ ভাই, চল’ ।