somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এডলফ হিটলারের পতন শুরু- স্টালিনগ্রাদের ভয়াবহ যুদ্ধের বিভিষিকা

০৯ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯৪১-৪২ এর শীতে মস্কো এবং এর আশে পাশে হিটলারে বাহিনী রাশানদের হাতে যে পিটুনি খায় তার ধকল আর সামলে উঠতে পারেনি। প্রায় ১০ লাখ জার্মান সৈন্যের প্রানহানী ঘটে।

এরপর হিটলার তার সেনাবাহিনীর পুর্ণ নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে নিয়ে নেন। দৈনিক নির্দেশনাও তিনি নিজেই দেয়া শুরু করেন। আর যে সমস্ত তুখোড় জার্মান জেনারেলরা ব্লিৎসক্রীগ আবিষ্কার করেন, এক ধাক্কায় পোল্যান্ড আর ফ্রান্স দখল করেছিলেন তারা হলেন অবহেলিত।

রণকৌশলের বড় বড় সিদ্ধান্ত হিটলার নিজেই দিতে লাগলেন আর তাতে ভুলও হতে থাকল। আবার অনেক সিদ্ধান্ত নিতেন দেরী করে কারন তিনি কাজ করতেন ভোর ৪ টা পর্যন্ত আর ঘুমাতেন দুপুর পর্যন্ত ফলে অনেক সিদ্ধান্তের সময় পেরিয়ে গিয়ে একটা হযবরল অবস্হার সৃস্টি হত।
যাহোক ১৯৪২ এর বসন্তে হিটলার ঠিক করলেন তিনি মস্কো রেখে দক্ষিনে রাশিয়ার ককেশাস এলাকা আর স্টালিনগ্রাদ দখল করবেন যেগুলো ছিল তেল সমৃদ্ধ এলাকা আর গুরুত্বপুর্ণ রেল জংশন, আর এতে রাশিয়ার তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হবে।
কিন্তু এত বড় অপরেশন চালাতে যে জনবল লাগে তা হিটলারের তখন ছিলনা। জার্মানীতেই যোদ্ধা তরুনদের সংকট।

হিটলার হুকুম দিলেন বন্ধু রাস্ট্র গুলো যেমন ইতালি, স্পেন, হাঙ্গেরী, রুমানিয়া ও স্লোভাকিয়া থেকে লোক এনে আর্মী ডিভিশন তৈরী করতে। ৫২ টি আর্মী ডিভিশন তৈরী হল। তবে জার্মান জেনারেলরা দুশ্চিন্তায় পড়লেন যে এই বিদেশি সেনা যাদের প্রশিক্ষন, দক্ষতা বা আনুগত্য সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই তাদের দিয়ে একটা গ্লোবাল ওয়ার চালায় কিভাবে!
যাহোক প্রাথমিক পর্যায়ের যুদ্ধে জার্মানরা সাফল্য অর্জন করল, তারা রাশিয়ার অনেক ভিতরে ঢুকে পড়ল। কিন্তু এর ফলে লজিস্টিক লাইন বা সরবরাহ লাইন অনেক বড় হয়ে গেল, খাবার, জ্বালানী সরবরাহে প্রচন্ড সমস্যা হতে লাগল্, আর রাশিয়ানরা এটাই চাইছিল।
বসন্ত পেরিয়ে গ্রীষ্ম এল, জনবল সংকটে জার্মানী তখন দোটানায়, তেলখনির ককেশাসে যাবে না রেল জংশন স্টালিনগ্রাদে যাবে।

হিটলার ককেশাসেই যাবার সিদ্ধান্ত দিলেন কিন্তু পরে দেখেন স্টালিনগ্রাদ তো একেবারেই অরক্ষিত! হুকুম হল চল স্টালিনগ্রাদ। ৪র্থ পানযার আর্মীকে এই চক্কর খেতে হল কিন্তু ততক্ষনে রাশিয়ানরা স্টালিনগ্রাদে শক্ত অবস্হানে চলে যায়।

হিটলার তখন ককেশাস আর স্টালিনগ্রাদ দুটোই আক্রমনের সিদ্ধান্ত নিলেন যা ছিল 'মারাত্মক ভুল'।
শীর্ষ দুই জার্মান জেনারেল, জেনারেল ফ্রান্জ হালডের যিনি ছিলেন 'চীফ অফ আর্মী জেনারেল স্টাফ' আর ফিল্ড মার্শাল লীস্ট যিনি ছিলেন ককেশাস এলাকার 'আর্মী গ্রুপ এ' এর কমান্ডার --প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ আর সমালোচনা করলেন। নীচে জেনারেল ফ্রান্জ হালডের এর ছবি:



ব্যাস আর যায় কোথায়, দুজনাই বরখাস্ত।
সেখানকার আর্মির পুর্ণ নিয়ন্ত্রন হিটলার নিজেই নিলেন। সাথে রইল জেনারেল ফ্রেডরিখ পলাস আর তার সিক্সথ আর্মী, পলাসের ছবি নীচে:



স্টালিনগ্রাদে সিক্সথ আর্মীর ট্যাংকগুলি একটু মুস্কিলে পড়ে কারন শহরের ভিতরে ট্যাংক প্রায় অকার্যকর, নড়া চড়া কঠিন ছিল। এছাড়া আগেই প্রচুর আর্টিলারী শেল দিয়ে শহরটাকে একেবারে ভাংগাচোরা স্তুপ বানিয়ে ফেলেছিল জার্মানরাই ফলে হাঁটা সহজ ছিল কিন্তু ট্যাংক খুব একটা কাজে আসছিল না।।

হিটলার আর তার বাঁয়ে জেনারেল পলাস।

বিদ্ধস্ত স্টালিনগ্রাদ নীচে:




আর এই ভাংগাচোরার মধ্যে যুদ্ধ করতে রাশিয়ান পদাতিক বাহিনীর সুবিধাই হচ্ছিল। প্রচুর জার্মান সেনা মারা যাচ্ছিল। দৈনিক প্রায় ২০০০০ জার্মান সৈন্য হতাহত হচ্ছিল। ওদিকে রাশিয়ার স্টালিন প্রায় ১০ লাখ সৈন্য ঐ যুদ্ধে নিয়োজিত করেন।
যাহোক জার্মানরা দেখা গেল স্টালিনগ্রাদ প্রায় দখল করে ফেলেছে ঠিক তখনি রাশিয়ানরা প্রচন্ড শক্তিতে কাউন্টার এটাক করল। সেটা ছিল ১৯শে নভেম্বর ১৯৪২, রাশিয়ান মার্শাল জর্জি যুকভ জার্মানদের পিছনে আক্রমন করেন। আর ঐ হিটলারের সৈন্যরা ছিল নন জার্মান। প্রচন্ড মার খেয়ে জার্মান জেনারেল কুর্ট জিটযলার অহেতুক মার না খেয়ে সিক্সথ আর্মীকে নিয়ে পালাবার জন্য হিটলারের অনুমতি চাইলেন কিন্তু হিটলার তা দেননি।

মার্শাল যুকভ

খোলা জায়গাতে ট্যাংক ঠিক আছে কিন্তু শহর এলাকায় পদাতিক বাহিনী অনেক বেশি ইফেকটিভ।

অন্যদিকে বাজে আবহাওয়ার কারনে জার্মান বিমান বাহিনী প্রধান গোয়েরিং এর বিমান সাপোর্ট ঠিকমত পাওয়া যায়নি আর তীব্র শীতে, খাবারের অভাবে কাহিল জার্মানরা উইথড্রও করতে পারছিলনা, হিটলারের অর্ডার।

নীচে রাশিয়ানরা শীতবস্ত্র নিয়ে পুরো তৈরী হয়েই যুদ্ধ করছিল।



এই অবস্হায় জার্মানদের প্রতি দয়া করেই মনে হয় ৮ই জানুয়ারী ১৯৪৩ রাশিয়ানরা সারেন্ডারের জন্য আহ্বান করে প্রস্তাব দেয় কিন্তু হিটলারের নির্দেশে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
আবার ২৪ শে জানুয়ারী একই প্রস্তাব নিয়ে আসে রাশিয়া কিন্তু হিটলারের একই উত্তর, না।
কমান্ডার পলাস যাতে সারেন্ডার না করেন সে জন্য হিটলার তাকে ফিল্ড মার্শাল বানিয়ে দিলেন, উল্লেখ্য কোন জার্মান ফিল্ড মার্শাল তখনো সারেন্ডার করেননি, আত্মহত্যা করতেন। আরো কয়েক ডজন জার্মান অফিসারের প্রমোশন দেয়া হল যুদ্ধক্ষেত্রে, যাতে তাদের মনোবল উচু থাকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলনা, জার্মানরা নিঃশেষ হতে থাকল।

অবশেষে ৩ রা ফেব্রুয়ারী ১৯৪৩ ফিল্ড মার্শাল (জেনারেল) পলাস হিটলারের কথা অগ্রাহ্য করে সারেন্ডার করেন। সাথে তিনি রাশিয়ানদের সাথে মিলে একটা কমিটি করেন যাতে জার্মানরা আর যুদ্ধ না করে হিটলারের বিরুদ্ধে চলে যায়।
ঐ যুদ্ধে জার্মানদের ২৮৫০০০ সৈন্যের মধ্যে ১৬৫০০০ স্টালিনগ্রাদেই মারা যায়, ৯১০০০ বেচে ছিল যার মধ্যে ২৪ জন জেনারেল আর ২৫০০ অফিসার যুদ্ধবন্দী হিসেবে সাইবেরিয়াতে প্রচন্ড শীতে বাকী জীবন কাটায়।

আর রাশিয়ানদের মারা যায় ১০ লাখ লালফৌজ।

শীতে বিদ্ধস্ত পরাজিত জার্মান যুদ্ধবন্দী নীচে:


হিটলার:













১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×