somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা শিরোনামহীন সস্তা প্রেমের গল্প.....

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাঝে-মাঝে অন্যের কাছে নিজেকে হিমু হিসাবে উপস্থাপন করতে আমার বেশ ভালই লাগে! যদিও সেটা ঐ মাঝে-মাঝের মধ্যেই সীমাবদ্ধ! কারণ প্রাক্টিক্যালি এখনও পর্যন্ত নিজেকে কারো কাছে হিমু হিসাবে উপস্থাপন করতে পারি নাই। সাধারণত হিমুরা হবে একদম রাগ শূণ্য একটা কাঁদা-মাটির তৈরি মানুষ। তাদের চরিত্রের অন্যতম গুণ হল, সব সমস্যার মধ্যেই তারা থাকবে; কিন্তু কোন সমস্যাই তাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না। অনেকটা ঐ 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' টাইপের! তবে সমস্যাটা হল, আমার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনেকটাই তার ব্যতিক্রম! মানে চাইলেও এখানে কেউ হিমু হতে পারে না, কিংবা হিমুর রুপ ধারণ করতে পারবে না!

তাছাড়া আরো একটা সমস্যা আছে! হলুদ রং-টা আসলে আমার প্রিয় রঙের মধ্যে পড়ে না! হলুদ হল বৈরাগ্যের রং! আর জীবনে বৈরাগ্য ধারণ করার মত কোন ইচ্ছা বা আকাংখা আমার মধ্যে নেই, কিংবা আদৌও সেরকম মন বাসনা কখনোই মনের মধ্যে উদয় হয়নি। স্কুল লাইফে পড়ার সময় রুনা নামের এক জুনিয়র মেয়ে প্রায় প্রতিদিনই স্কুলে হলুদ ড্রেস পরে আসতো বলে তার কাছাকাছি থেকে মাঝে-মাঝে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে গুন-গুনিয়ে গেয়ে উঠতাম- "হলুদিয়া পাখি, সোনারই বরণ! পাখিটি ছাড়িলো কে.....?"

একদিন দেখি মেয়েটা আমাদের স্কুলের ধর্ম শিক্ষকের কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ দিয়েছে! সাধারণ হিসাবে ধর্ম শিক্ষকরা হবে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকদের থেকে একটু নরম-সরম টাইপের। কেননা এটাই হল প্রকৃতির নিয়ম। তবে এক্ষেত্রে যে প্রকৃতি একটু উল্টো গান গেয়েছিল, সেটা বেশ ভাল ভাবেই বুঝতে পারতাম। যার ফলশ্রুতিতে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই স্কুলের মধ্যে সব থেকে বদরাগী স্যারের তকমাটা তিনি অনায়াসে হাতিয়ে নিয়ে বসলেন! স্কুলে খুব একটা যে ভাল ছাত্র ছিলাম তা বলবো না। তবে পাঁজি ছাত্র হিসাবে অল্প দিনেই বেশ নাম-ডাক করে ফেলেছিলাম। এমনকি আমার সেই পাঁজিয়ানির হাত থেকে স্যারদের মধ্যেও কেউ কেউ ধরা খেয়ে যেতেন।

এই ধর্ম শিক্ষকটার কথাই ধরুন না। উনার নাম ছিল মোঃ কাওছার হাওলাদার। তো তিনি যখন ক্লাসে এসে এক এক করে ছাত্রদের নাম কল করতেন, এবং আমার উপস্থিতি দেওয়ার সময় যখন সামনে এসে যেত; তখন আমি বেশ আদবের সহিত উঠে দাঁড়িয়ে মুখে একটা ফিচলে হাসি দিয়ে বলতাম- 'কও স্যার!'

আমার এই উপস্থাপনা শুনে যে তিনি মনে-মনে তেলে বেগুণে জ্বলে পুড়ে ছাই হতেন, সেটা বেশ ভাল ভাবেই বুঝতে পারতাম। আর সেই আগুণে ঘি ঢালতো ক্লাসের বদমায়েশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীর চাপা হাসি। তবে মুখে কিছু বলতে পারতেন না। কারণ, পিচ্চি পোলাপান প্রেজেন্টেশনের সময় স্যারকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই তার উপস্থিতি জানান দিতে পারবে; এটা ছিল স্কুল কমিটির চুড়ান্ত নির্দেশ। সুতরাং এখানে রাগ করলেও যা, না করলেও তাই।

যদিও তিনি মাঝে-মাঝে বলতেন- 'এই তুই ইয়েস স্যার বা উপস্থিত স্যার বলতে পারিস না। তোর কি প্রতিদিনই কও স্যার বলতে হবে? কেন, স্যারদেরকে একটু সম্মান-টম্মান দিলে কি এমন মহা-ভারত অসুদ্ধ হয়ে যায় শুনি?'

আমি অবশ্য তখন ভয়ে ভয়ে বলতাম- 'স্যার আমার কি কোন ভুল হয়েছে? আচ্ছা ঠিক আছে স্যার, কাল থেকে আর ভুল হবে না!'

কিন্তু ঐ বলা পর্যন্তই সার। কাল নাম ডাকার সময় আবারও সেই কও স্যার! আমার এমন অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে স্যার তো মাঝে-মাঝে নাম কল না করে সবাইকে প্রায় অটো প্রেজেন্ট দিয়ে দিতেন। তবে একবার তিনি হেড স্যারের কাছে ধরা খাওয়ায় ঝাঁড়ি-টাড়ি খেয়ে তারপর থেকে আর কক্ষনো এই ভুলটা করতেন না। কিন্তু উনার সেই রাগ গিয়ে পড়তো, বইয়ের পড়ার উপর। আর সে কারণেই ক্লাসের অন্যান্য সাবজেক্টের পড়া করি আর না করি, ধর্ম বইয়ের পড়া করা আমার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল।

তো মেয়েটার নালিশ দেওয়ার প্রায় সাথে সাথেই অফিস রুমে আমার তলব পড়লো! মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে অফিস রুমে ঢুকে স্যারের অগ্নি মূর্তি দেখেই তো আমার তখন কাপড়ে-চোপড়ে হওয়ার দশা! ভাগ্যিস ছোট থাকতে নানী-দাদীরা পেটে ভাল ভাবে ছ্যাঁক-ট্যাক দিয়ে দিয়েছিলেন! তা না হলে হয়তো সেদিনই আমার ইজ্জতের হালুয়া টাইট হয়ে যেত। মনে মনে ভাবলাম, আজ আমার নিস্তার নেই। একে তো ক্লাসে উনাকে সারাক্ষণ জ্বালিয়ে মারি, দ্বিতীয়তো জুনিয়র মেয়েকে ডিস্টার্ব করেছি। পৃথিবীতে এমন কে মহা-ক্ষমাশীল দয়ালু ব্যক্তি আছে যে এমন একটা সুযোগকে হাতছাড়া করবে? সুতরাং আমার দোয়া দরুদ পাঠের কার্যক্রম দ্রত থেকে আরো দ্রুততর হয়ে গেল। আর সেই সাথে তাল দিয়ে ঠোঁট এবং হাঁটুও সমান তালে নড়তে লাগলো। আমাকে অমন বিড় বিড় করতে দেখে স্যার চোখ পাঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- 'ঐ কি বলছিস?'

আমি একটু ঢোক গিলে বললাম- 'স্যার কিছু বলছি না, দরুদ পড়ছি!'

সম্ভাবত আমার কথা শুনে স্যার মনে-মনে একটু খুশিই হলেন। ধর্ম শিক্ষক যদি জানতে পারেন, তার ক্লাসের সব থেকে অভদ্র ছাত্রটাও সময় অসময়ে মনে মনে দরুদ পাঠ করে, তাহলে তার মধ্যে একটা খুশি খুশি ভাব চলে আসাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই খুশির মধ্যেও কেন জানি না তার কুঞ্চিত ভ্রু যুগল দেখে আমার প্যাল-পিটিশনটা আবারও বেড়ে গেল। মনে মনে আন্দাজ করে নিলাম, সম্ভাবত স্যার আমাকে অবিশ্বাস করছেন। হয়তো তিনি ভাবছেন, বিড়বিড় করে আমি তাকে গালাগাল করছি। ঘটলোও ঠিক তাই। কিছুক্ষন তিনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বেশ গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন- 'হুম, তো কেমন দরুদ পড়ছিস একটু পরীক্ষা করে দেখি তো! আচ্ছা চার কলেমার শেষেরটা বল দেখি?'

এবার আমার থরে কম্প হওয়ার দশা! টেনশনে নিজের নামটাই যেখানে ভুলে গেছি সেখানে চার কলেমার শেষেরটা ক্যামনে বলবো সেইটাই তো বুঝতে পারছি না। চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম, চার কলেমার শেষেরটা আসলে কি? তারপর হঠাৎ চোখ খুলে সোল্লাসে বলে উঠলাম- 'স্যার, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনা-জ্জলেমিন!'

স্যার ছুটে এসে আমার কান ধরে জোরে একটা টান দিয়ে বললেন- 'ব্যাটা পাঁজির পা'ঝাড়া, দোয়া ইউনুস কখনো কলেমা হয়? ওটা তো মানুষ মসিবতের সময় পড়ে!'

আমি একটু নিচু কণ্ঠে বললাম- 'আমার থেকে বড় মসিবতে এখন আর কেউ পড়ে আছে নাকি? আমিই তো এখন সব থেকে বড় মসিবতের মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি।'

স্যার আমার কথা শুনতে পেলেন বলে মনে হল না। সেটা অবশ্য একদিক থেকে আমার জন্য মঙ্গলজনকই বটে। তবে হঠাৎ তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বেশ উচ্চ কণ্ঠে হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেন- 'তো শুনলাম ইদানিং নাকি তোর সঙ্গীত চর্চাটা বেশ ভালই এগুচ্ছে? তা সাংস্কৃতিক ক্লাসে সঙ্গীত গেয়েও কি পোষায় না নাকি? যদি না পোষায় তাহলে কোন যাত্রা দলে নাম লিখাইলে তো হয়?'

আমি কোন কথা বললাম না! মাথা নিচু করে এক নাগাড়ে স্যারের সুতিব্রো বাক্যবান শ্রবণ করতে লাগলাম! ওদিকে টানের চোটে কান গরম হয়ে এখন সেটার মধ্যে কেমন জানি পটপট করে শব্দ হচ্ছে। ভয় পেলাম, যদি নতুন করে কিছু বলি তাহলে হয়তো টান আরো একটা খেতে হবে। আর এবার যদি টান খাই, তাহলে নিঃসন্দেহে কান ব্যাটা তার হাল ছেড়ে দিয়ে মাথার থেকে উঠে চলে আসবে। কান হীন মানুষ হিসাবে হয়তো খুব শীঘ্রোই স্কুলে আমার নাম 'কান কাটা মফিজ' হিসাবে ঘোষিত হয়ে যাবে। বদ পোলাপান আর কিছু পারুক আর না পারুক, মানুষের নামের শেষে বিশেষণটা খুব ভাল ভাবেই লাগাতে পারে। সুতরাং কোন কথা না বলে আপাতত চুপচাপ স্যারের কথা শুনে যাওয়াটাকেই যক্তি সঙ্গত বলে মনে হল। কিছুক্ষন থেমে স্যার আবারও শুরু করলেন- 'তো তুই রুনাকে দেখে সব সময় গান গাস কেন শুনি?'

কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না! তবে কিছু না বলে এবার যদি চুপ থাকি, তাহলে এই চুপ করে থাকার জন্যই হয়তো পূনরায় কান টানার শিকার হতে হবে। ঠিক তখনই হঠাৎ মাথার মধ্যে একটা বুদ্ধি চলে আসলো! আমি খুব ভাল ভাবেই লক্ষ করেছি, যখনই কোন বড়-সড় রকমের গাড্ডায় পড়ে যাই; ঠিক তখনই কেন জানি না হুট করে মাথাটা বেশ ভাল ভাবেই খুলে যায়! বললাম- 'স্যার ক্ষমা করবেন! আমি আসলে গত কয়েকদিন ধরে একটা গানের প্রাক্টিস করছিলাম, আগামী অনুষ্টানে গাইবো বলে! এটা জাহিদ স্যারের নির্দেশ (জাহিদ স্যারের নাম বলছিলাম, কারণ কাওসার স্যারের সাথে জাহিদ স্যারের আবার চুলোচুলি সম্পর্ক। সুতরাং আমি সত্য বলছি না মিথ্যা বলছি সেটা যাতে তিনি পরীক্ষা না করতে পারেন, সেজন্যই মধ্যিখান থেকে জাহিদ স্যারের এন্ট্রি)! কিন্তু সেটা যদি ও শুনে ফেলে এবং ভেবে নেয় যে সেটা আমি ওকেই উদ্দেশ্য করে গাচ্ছি; তাহলে তো আমার কিছু করার থাকে না!'

অকাট্য যুক্তি! এটাকে ডিনাই করে কোন কিছু বলা স্যারের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে বলে আমার মনে হল না! এবং ঘটলোও ঠিক তাই! তবে স্যার যখন ডেকে পাঠিয়েছেন, তখন পানিশমেন্ট তো আমাকে পেতেই হবে! তা না হলে তিনি আবার কিসের বিচারক? তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে তার পূর্বের রাগ তো আছেই। সুতরাং পানিশমেন্ট ঠিক হল, প্রতিদিন টিফিন টাইমে স্কুলের কল চেপে স্যারের জন্য আমাকে অজুর পানি যোগান দিতে হবে! আর আমার উঠানো পানিতে অজু করেই তিনি জোহরের নামাজ কায়েম করবেন!

কি আর করা, বাধ্য হয়েই আমাকে স্যারের আদেশ মেনে নিতে হল! অবশ্য একদিক থেকে সেটা ভালই হল! শুনেছি গুরুজনদের সেবা করা মহৎ কর্ম। আর কারো অজুর পানি তুলে দেওয়া; সেটাতো আরো ভাল কাজ! আমি 'আচ্ছা ঠিক আছে স্যার' বলে রুনার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ মেরে অফিস রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম!

তারপর থেকে চলতে থাকলো আমার এই আনলিমিটেড বেতন বহিঃর্ভূত চাকরি! আর সেই চাকরির আড়ালে চলতে থাকলো রুনা নামের মেয়েটাকে আরো বেশি বেশি করে জ্বালাতন করা! এখন পথে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে যেখানেই রুনার সাথে আমার দেখা হয়, সেখানেই 'হলুদিয়া পাখি' গানে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রকৃতির চারদিক। এরপরে অবশ্য আরো বেশ কয়েকবার স্যারের কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ গিয়েছে, তবে স্যার নিজে সেটাকে ততটা আমল দেননি! বরং তিনি ভাবেন, আমি হয়তো নতুন কোন সঙ্গীত চর্চায় নিবিষ্ট আছি!

তখন অবশ্য 'ইভটিজিং' নামক শব্দটা ডিকশোনারীতে সংযুক্ত হয় নাই! হইলে হয়তো অনায়াসেই আমার নামের শেষে 'ইভটিজার' নামক খুবই সুন্দর একটা ট্যাগ জুঠে যেত! তবে এখন অনেকটা ভদ্র হয়ে গেছি! কারণে অকারণে আর কাউকে টিজ করি না! বরং চলতি পথে যদি কাউকে ভাল লেগে যায়, তাহলে তাকে সরাসরি বলে দিই- 'ওয়াও! ইউ আর লুকিং ভেরি গর্জিয়াস! বাট আনফরচুনেটলি নাকটা একটু বাঁকা (ইয়ে, নাক বাঁকার ইংরেজিটা জানি কি?)!'

কেউ কেউ আমার কথা শুনে ইম্প্রেস্ড হয়ে খুব সুন্দর একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে! অনেকে ধন্যবাদও জানায়! এক্ষেত্রে নাক বাঁকা কথাটা হয়তো তারা বেমালুম ভুলে যায়! কিংবা গর্জিয়াস শব্দটার সাথে হয়তো 'নাক বাঁকা' শব্দটা এতই গৌণ যে, কেউ সেটা খেয়ালই করে না। আবার কেউ কেউ হয়তো আমার কথার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য নিজের ভাল নাকটাকে সামান্য বাঁকা করে সেটাকে যতটা সম্ভব কুৎসিত কায়দায় এনে সামনে থেকে হনহনিয়ে চলে যায়! সম্ভাবত এই শ্রেণীরা গর্জিয়াস শব্দটার থেকে 'নাক বাঁকা' শব্দটাকেই সব থেকে বেশি প্রধান্য দেয়! তাদের ধারনা, সুন্দর তো সুন্দরই; তাতে আবার খুঁত কি? তবে আমার কথা শুনে যারা মিষ্টি হাসি দেয়, তাদের প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই! কিন্তু যারা নাক বাঁকা করে চলে যায়, কেন জানি না তাদের উপরে আমি একধরনের অকৃত্রিম আকর্ষণ অনুভব করি!

সুন্দরী মেয়েরা একটু-আধটু অহংকারী হবে, এটা হল নিপাতনে সিদ্ধ! যে মেয়ে অহংকারী না, সে আসলে সুন্দরীই না! যদি কোন মেয়ে বলে, 'আমি সুন্দরী তবে অহংকারী নই;' তাহলে নিঃসন্দেহে তাকে মিথ্যাবাদী হিসাবে সাব্যস্ত করে নিতে পারেন। কারণ, সুন্দর আর অহংকার, এই দুইটা শব্দ একে অপরের সাথে একদম ওৎপ্রত ভাবে জড়িত এবং অনেকটাই প্রকৃতি প্রদত্ত। সুতরাং এদিক থেকে বিবেচনা করলে দোষ যতটা না মেয়েদের তার থেকে বেশি প্রকৃতির। যদিও ব্যাপারটা সবার ক্ষেত্রেই যে প্রযোজ্য হবে এমন নয়। তবে অধিকাংশের ক্ষেত্রেই আপনি নির্দ্বিধায় এটাকে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া আরও আছে। প্রকৃতি মেয়েদের জন্য কিছু স্পেশাল গুণাবলি রেখে দিয়েছে। এই যেমন রঙের ব্যাপারটাই ধরুন না। আপনি সামান্যতম বুঝদার কোন মেয়েকে যে কোন একটা রং দেখিয়ে তার কাছে সেটার নাম জানতে চান। দেখবেন আপনাকে অবাক করে দিয়ে খুব সহজেই সেই রঙের নামটা সে বলে দিতে পারবে। তাই আপনার কাছে সেই রংটা যত অপরিচিতই হোক না কেন!

গত কয়েকমাস আগে পত্রিকায় মেয়েদের নিয়ে একটা কলাম পড়ছিলাম। কোন দেশের বিজ্ঞানীরা জানি মেয়েদের সাইক্লোজিক্যাল টেস্ট করিয়ে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে, পৃথিবীর মধ্যে অধিকাংশ নারীই নাকি গোলাপী রংকে সব থেকে বেশি পছন্দ করে। গোলাপী আমারও ভাল লাগে! তবে আমার সব থেকে ফেভারিট কালার হল নীল! শুধু নীল না, নীলের আশে-পাশে আর যত রকমের রং-ই আছে; এই যেমন কমলা, বেগুণী, আসমানী ইত্যাদী সব গুলোই আমার প্রিয়! তবে আমার অন্যদের জন্য চয়েজেবল কালার হল ঐ গোলাপী-ই! অন্যদের শব্দটাকে আরো একটু স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, মেয়েদের ব্যাপারে আমার চয়েজেবল কালার হল গোলাপী!

এমন কি আমার সামনে যদি আফ্রিকান কোন কুৎসিত মেয়ে গোলাপী স্যালোয়ার কামিজের উপরে আকাশী রঙয়ের ওড়না পরে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে কোন কিছু না ভেবেই অনায়াসে আমি তাকে বিউটিফুল বলে দিতে পারি! সেজন্য তাকে বিউটিফুল হওয়াটা জরুরী নয়, বরং কালারটা গোলাপী হইলেই যথেষ্ট!

গত কয়েকদিন আগে জ্বালাময়ী শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেশ পুঁরু দেখে একটা ঊলের জ্যাকেট কিনলাম। তবে এক্ষেত্রে আমার পছন্দটা কেন জানি না একটু ভিন্ন রকম হয়ে গেল। এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরি, আমার পছন্দের রং নীল হলেও আমি পোশাক পরিচ্ছদ পরা অথবা কেনার সময় কখনোই সেই রংটাকে প্রধান্য দেই না। বরং যে পোশাকটা যে রঙের সাথে ঠিক-ঠাক মানাবে, ঠিক সেই পোশাকটা সেই রঙেরই কিনে থাকি। যেমন, শীতের গরম পোশাক হিসাবে আমার কাছে গাঢ় সবুজ এবং ছাই রংটাকেই সব থেকে বেশি পারফেক্ট বলে মনে হয়। তবে এক্ষেত্রে পছন্দটা ভিন্ন রকম হয়ে গেছে বলার কারণটা হল, গত কয়েকদিন আগে শীতের জন্য যে জ্যাকেটটা কিনেছি; সেটার রং ছাই বা সবুজ না হয়ে বরং হলুদ রঙয়ের হয়ে গেছে। একবারে যে হলুদ তা বলা যাবে না। অনেকটা গোধূলী লগ্নে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে প্রকৃতির বুকে যে একটা রক্তিম আভা বিরাজ করে (?) ঠিক সেই রকম।

আজ প্রথমবারের মত সেই জ্যাকেটটা গায়ে দিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করতে যাচ্ছি মোহিনীর সাথে! মোহিনী আমার গফ। না জানা মানুষের জন্য হয়তো গফের ব্যাপারটা মাথার উপরে দিয়ে যাবে। সে যাইতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে দোষটা অবশ্য একচেটিয়া ভাবে না জানা মানুষদের উপরে চাপানো যাবে না। গত কয়েকদিন আগে থাকতেও ঐ শব্দটা আমারও মাথার উপ্রে দিয়া যাইতো। তবে এখন আর যায় না, কারণ এখন আমি গফ শব্দের ফুল মিনিংটা জানি। ইংরেজি গার্লফ্রেন্ড শব্দটার আধুনিক সংক্ষিপ্ত ভার্সন হল এই গফ। ভাবতে পারেন, দেশ কত দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে হয়ে যাচ্ছে? বেচারির সাথে গত প্রায় পাঁচ-ছয়দিনের মত কোন কথা হয় না! হয়তো অনেক রেগে আছে! সুতরাং প্রথম স্বাক্ষাতেই একটা রাম ঝাঁড়ি খাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে তার সামনে হাজির হয়ে আমার সেই বিখ্যাত রমণী মোহন হাসিটা হেসে বললাম- 'কেমন আছো মোহিনী?'

কিন্তু মোহিনী আমার প্রশ্নের প্রতি বিন্দু মাত্র আগ্রহ দেখালো বলে মনে হল না। ভাবলাম রাগের মাত্রা হয়তো ফারেনহাইট ছাড়িয়ে এখন অন্যকিছুতে গিয়ে ঠেকেছে। এমনিতে সে যে একটু এই রকম টাইপের, সেটা অবশ্য আগে থাকতেই জানতাম। যদিও প্রফেশনালী সে একজন সদ্য পাশ করা ডাক্তার। তবে স্বভাব-চরিত্র একদমই ডাক্তারের সাথে যায় না। বরং ঠিক তার উল্টো। গত কয়েকদিন আগে বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে আঘাত পেয়ে তার কাছে গেলে, সে ব্যান্ডেজ করে দিলেও প্রথমে এমন একটা ভাব করছিল যেন; গোটা বাংলাদেশে সেই একমাত্র আর্থ্রপেডিক্স ডাক্তার। ভাব-সাব দেখলে মাঝে-মাঝে আমারই ভীষণ বিরক্ত লাগে, তবে মুখ বুজে ব্যাথা খাওয়া ছাড়া বাড়তি কোন উচ্চবাচ্য করা যায় না। ব্যাপার অনেকটা সেই বিখ্যাত বাংলা প্যারোডি গানটা দিয়ে বিশ্লেষণ করা যায়- 'আমার ঘরে আমি মেম্বর, পরের মাইয়া চেয়ারম্যান......বিয়া করলাম ক্যানরে দাদা......!'

অবশ্য আমাদের এখনো বিয়ে হয় নাই। তবে হইতে কতক্ষণ? শুনেছি এখনকার সময়ে বিয়ে শাদী করা কোন ব্যাপারই না। পথে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, যেখানে-সেখানে কাজি অফিস। গেলাম, কবুল বললাম; ব্যস বিয়ে হয়ে গেল! তাছাড়া আজকালকার দিনে কাজি অফিসে কত্ত রকমের সুযোগ সুবিধা! এক সময় তো প্রেমিক-প্রেমিকাদের চুরি করে বিয়ে করতে গিয়ে যতটা না বেগ পেতে হতো, তার থেকে বেশি বেগ পেতে হতো; বিয়ের স্বাক্ষী খুঁজতে গিয়ে। অথচ বর্তমান সময়ে সেটা নিয়েও আপনার কোন টেনশন করা লাগবে না। কাজি অফিসেই এমন কিছু লোক নিয়োগ দেওয়া আছে, যারা কেবল আপনার বিয়ের স্বাক্ষী হওয়ার জন্যই মুখিয়ে আছে। মানে এদের ভাব-সাব দেখলে হয়তো আপনার মনে হতে পারে, এই সমস্থ লোক গুলোকে বোধহয় সৃষ্টিকর্তা কেবল মাত্র অন্যের বিয়ের স্বাক্ষী করার জন্যই এই পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এখানে আপনার দ্বায়িত্ব হল, শুধুমাত্র কবুল বলা। আর বাদ বাকি কাজ আপনি কোন ধরনের সন্দেহ ছাড়াই ঐসমস্থ লোকদের উপর ছেড়ে দিতে পারেন। আমার মনে হয়, কবুলের সাথে যদি বউ কার হবে (?) এই ধরনের কোন ব্যাপার জড়িত না থাকতো; তাহলে সেটাও বোধহয় এরা বলে দিতো!

আমার সৌজন্যবোধক প্রশ্ন শুনে মোহিনী কোন ধরনের সামাজিকতার ধার না ধেরে বরং সরাসরি জিজ্ঞাসা করলো- 'মহাশয়ের হঠাৎ তার ফেভারিট কালার ছেড়ে দিয়ে হলুদ পোশাক পরার হেতুটা কি একটু জানতে পারি? নাকি হঠাৎ করে মাথায় সাধু-সন্ন্যাসী সাজার ভুত চাপছে?'

চট করে মনটা ভাল হয়ে গেল। তার প্রশ্নের মধ্যে একদমই রাগের কোন চিহ্ন নেই। বরং তার পরিবর্তে আছে, হালকা খোঁচা মারার প্রবণতা আর মুখ ভর্তি বাঁকা হাসি। তবে আমিও কম যাই নাকি? কপট রাগ দেখানোর ভান করে মুখে একটা গাম্ভীর্যপূর্ণ ভাব এনে বললাম- 'দেখ মোহিনী, আমার দ্বারা যে সাধু-সন্ন্যাসী হওয়াটা একদমই অসম্ভব, সেইটা তুমিও যেমন জানো; তেমনি আমিও জানি! সুতরাং ঐধরনের ফালতু কথা বার্তা বলে শুধু শুধু আমার মেজাজ হট কইরা দিবা না!'

বলা বাহুল্য আমার কথা শুনে মোহিনী বেশ হকচকিয়ে গেল! জানতাম এমনটা হওয়ারই কথা! কারণ সাইক্লোজিক্যাল হিসাব অনুযায়ী আজ আমার উপরে তার রাগ দেখানোর কথা, অথচ আমাকেই কিনা রাগতে দেখে সে আসলে কি বলবে সেটা হয়তো বুঝে উঠতে পারছিল না! তবে আমি তাকে পাল্টা বাড়তি কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বরং স্কুলে পড়ার সময়ের সেই ঘটনাটা তার কাছে স্ব-বিস্তার বর্ননা করলাম! এবং এই হলুদ পোশাকটা বাছাই করে নেওয়ার মূলেও যে রুনা নামের সেই মেয়েটার কিঞ্চিৎ প্রভাব আছে, সেটাও নির্দ্বিধায় বলে গেলাম!

আমার কথা-টথা শেষ হলে মোহিনী বেশ গম্ভির কণ্ঠে বলল- 'হুম, বুঝলাম! পুরান পিরিত উথলাইয়া উঠতাছে! সেও ভাল। তবে আফসোস, এমন একজন মানুষকে জীবনে ভালোবাসলাম; যার কাছে আমাকে নিয়ে ভাববার মত কোন টাইমই নেই! বরং সে পড়ে আছে তার এক্স গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে!'

বুঝতে পারলাম মনে মনে মোহিনী বেশ কষ্ট পেয়েছে! সে একটু পাক! আমাকে ভালবাসবে, আর কষ্ট পাবে না; তা কখনো হয় নাকি? তবে বর্তমানে আমি তার একমাত্র বফ (বয়ফ্রেন্ড, আগে জানতাম না! এই কয়েকদিন আগেই জানলাম বয়ফ্রেন্ডের সংক্ষিপ্ত ভার্সন বফ! আফসোসটা কি আমারও কম নাকি?) হয়ে এই মূহুর্ত্বে তার অভিমানটা যদি না ভাঙাই, তাহলে সেটা হয়তো ভালবাসার প্রতি একটা চরম অন্যায় করা হয়ে যাবে! সুতরাং বত্রিশ দন্ত বিকশিত করে একটা খ্যাকখ্যাক মার্কা হাসি দিয়ে বললাম- 'মোহিনী, তুমি মনে হয় ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে নিচ্ছো? এখন তাকে মনে করার কোন কারণই ঘটেনি! তাছাড়া সে এখন বিবাহিত, সুতরাং বুঝতেই পারছো.....'

আমার কথা শেষ হল না! তার আগেই মোহিনী একটা চাপা ঝাঁড়ি দিয়ে বলে উঠলো- 'বাদ দেও তো ওসব কথা! তুমি যে কত্তবড় খেলোয়াড় সেইটা জানতে আমার আর বাকি নেই! রাস্তায় ঘুরতে বের হলেই সেটা খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পারি। বাইক চালানোর সময় তো দেখি, কতজন উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে হাউস করে জিজ্ঞাসা করে; ভাইয়া কেমন আছেন? অথচ তাদের একজনকেও আমার সাত জন্মে তোমার ধারে কাছে দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না। আর সে আবার আসছে আমার কাছে নিজের সার্টিফিকেট দাখিল করতে, হুঁহ!'

খাইছে আমারে! উঠতে উঠতে মাইয়া দেখি এখন এক্কেবারে মাথার উপ্রে চড়ে বসবার চায়! আমার এতদিনের জমিয়ে রাখা বিশুদ্ধ সার্ফ-এক্সেল মার্কা চরিত্রে এমন পঁচা কাঁদার ছিটা একদমই সহ্য হল না! বানিয়ে বানিয়ে হলেও এখন নিজের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য কিছু একটা তো আমাকে বলতেই হবে। সুতরাং আমিও তার মত করে একটা ফিচলে হাসি দিয়ে বললাম- 'হুম, সেইটা তো আমরাও টুকটাক জানি! তুমিও বা কম কিসে একটু শুনি? ফেসবুকে ছবি আপলোড করে 'ওহঃ আজ একটা অসাম দিন যাপন করলাম' টাইপের ক্যাপশন ঝেড়ে যখন পোস্ট পাবলিশ কর, তখন সেইখানে কোন ধরনের কমেন্ট গুলোর উত্তর প্রদান করো; সেইটা আমরা জানি না বুঝি? আরও আছে তো। ক্যান্টিনের মন্তেজ কাকাও দেখি মাঝে-মাঝে ফুচকার বিল ফ্রিতে দিয়া দেয়! বলে আফামনি থাক, আজ বিল দেওয়া লাগবে না! কেন শুনি? মন্তেজরে আমরা সবাই কাকা ডাকি, অথচ সে তোমারে মামনী না ডেকে আফামনি ডাকে ক্যান একটু শুনি? মন্তেজ কাকা তোমার কোন জন্মের আত্মীয় লাগে যে সে আর কাউকে না, কেবল তোমাকেই ফ্রিতে খাওয়ায়?'

আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ে প্রথমে কিছুটা কনফিউশনে ছিলাম। তবে সেইটা যে এভাবে লেগে যাবে তা একদমই ভাবিনি। দেখলাম মোহিনী একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। হয়তো ভাবে নাই, হুট করে আমি তাকে এমন কিছু বলবো! হঠাৎ করে আমার এমন তির্যক আক্রমনে সে কোনঠাসা হয়ে প্রায় সাথে-সাথে প্রসঙ্গ পাল্টে বলল- 'আমি মোঘলাই আর আইসক্রিম খাবো! তুমি কি খাবা অর্ডার করো!'

তার কথা শুনে এবার আমারই মন খারাপ হয়ে গেল। কথা গুলো স্রেফ মজা করার জন্যই বলেছিলাম। তবে মোহিনী যে সেটাকে এতটা সিরিয়াসলি ধরে নেবে, তা কে জানতো! বুঝলাম আমার আন্দাজে বলা কথা গুলো সত্যি হলে হয়তো সে এতটা কষ্ট পেত না, তবে যেহেতু সত্য না বরং সম্পূর্ণ গাঁজাখুরি; সেহেতু তার মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। হয়তো সেজন্যই সে বিষয়টাকে এভোয়েড করার চেষ্টা করছে! ভাবলাম সে যখন বিষয়টা এভোয়েড করছে, তখন আমারও উচিৎ এটাকে সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যাওয়া! কি জানি বেশি রেগে গেলে হয়তো সে কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বের করে ফেলবে। আর তাই যদি হয় তাহলে গ্যাঁড়াকলে তার থেকে আমিই বেশি পড়বো! সুতরাং আমিও এবার সেদিকে না গিয়ে বরং তার মন ভাল করার জন্য বললাম- 'সমস্যা নেই, আজকের বিল আমার; অনায়াসেই তুমি দামী কিছু অর্ডার করতে পারো!'

আমার কথা শুনে সে একটু মুচকি হাসলো! আহঃ কি সেই হাসি! যেন বাঁধিয়ে রাখার মত! আজ পর্যন্ত এই মেয়েটার হাসি আমি যতবার দেখেছি, ততবারই যেন তার মধ্যে একটা নতুনত্ব খুঁজে পেয়েছি। কবির ভাষায়, পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের হাসিতে নাকি মুক্ত ঝরে। তবে আমার মনে হয় মহিনী হাসলে তার হাসিতে ঠিক মুক্ত নয়, যেন জ্যোৎস্না ঝরে পড়ে। গোলাপী স্যালোয়ার কামিজের উপরে নীল ওড়নায় সামান্য এই হাসিটাতেও যেন তাকে স্বর্গের অপ্সরীর মত লাগছিল। মোহিনী যেদিন গোলাপী ড্রেস পরে আমার সামনে আসে, সেদিন তাকে দেখলে আমার কেন জানি না মনে হয়, গোলাপী ড্রেসে একমাত্র মহিনীকে যতটা ভাল লাগে; ততটা ভাল বোধহয় এই পৃথিবীতে আর অন্য কোন মেয়েকে লাগে না! সম্ভাবত সৃষ্টিকর্তা এই রংটাকে কেবল মাত্র মোহিনীর জন্যই তৈরি করেছিলেন!

আমার কথা শুনে সে বলল- 'নাহঃ থাক! আজ এমনিতেই কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না!'

বুঝলাম আমার পূর্বের কথাটা মোহিনীকে এখনো পর্যন্ত কষ্ট দিচ্ছে। নিজের উপরেই ভীষণ রাগ হল। ইচ্ছা করছিল নিজেই নিজেকে আঘাত করি। কিন্তু সেইটা তো আর সম্ভব না! আস্তে করে বললাম- 'স্যরি, মোহিনী! আমি আসলেই বুঝতে পারিনি আমার কথাটাকে তুমি এতটা সিরিয়াসলি নিয়ে নিবে! আমি সত্যিই স্যরি!'

আমার কথা শুনে মোহিনী আবারও তার সেই সুন্দর হাসিটা দিল। তারপর হাসতে হাসতে হাত বাড়িয়ে আমার নাক টেনে ধরে বলল- 'ওরে বুদ্ধু, আমি তোমার উপরে একদমই রাগ করিনি। তুমিই শুধু শুধু সেইটা নিয়ে টেনশন করছো। আমি তো জানি তুমি কেমন প্রকৃতির। সুতরাং তোমার উপরে রাগ করাও যা, না করাও তাই।'

যাক, অনেকক্ষন পর মনে একটু শান্তি পাইলাম! লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সামান্য গলা পরিষ্কার করে হাক ছাড়লাম- 'ওয়েটার! এক কাপ কফি, একটা আইসক্রিম আর একটা মোঘলাই প্লিজ!'

কিছুক্ষণের মধ্যে হোটেল বয় হুকুম মোতাবেক জিনিস নিয়ে হাজির হল। আমি ট্রে থেকে কফির মগটা উঠিয়ে নিয়ে বাকি দুইটা মোহিনীর দিকে এগিয়ে দিলাম। তারপর ধিরে সুস্থে খাওয়া-দাওয়া করে রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে যখন বাইরে বের হলাম, তখন গধূলী লগ্ন সমাগত! সূর্য রক্তিম আভা ধারণ করে এখন সেটা পশ্চিম গগনে ঢলে পড়েছে! আমি আর মোহিনী ফিরে চলেছি বাসার দিকে। মোহিনী আমার বাইকের পিছনে বসে আলতো করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। ছুটে চলা বাইকের হাওয়া লেগে তার অবাধ্য চুল গুলো বারবার মুখের উপরে এসে পড়ছে। লুকিং গ্লাসে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, মাঝে-মাঝে হাতের আঙ্গুল দিয়ে সে চুল গুলোকে ঠিক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু অবাধ্যতার এমনই ক্ষমতা, কিছুক্ষনের মধ্যেই আবারও সেগুলো পূর্বের ন্যায় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

এতক্ষণে সূর্যিমামা অনেকটা নিচে নেমে এসেছে। সম্ভাবত এখন তার বিশ্রামের সময়। কিন্তু বিদায় বেলায় সমস্থ প্রকৃতিকে সে এমন একটা স্বর্গীয় আলোয় ভরিয়ে তুলেছে যে, দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রকৃতির বুকে এখন রঙের খেলা চলছে। যার কিছুটা আলো বড় বড় গাছের সারি ভেদ করে বাইকে বসা মোহিনীর মুখে এসে পড়ছে! অবাধ্য চুলের লুটোপুটি খেলা, একটা মিষ্টি মুখের মন পাগল করা হাসি আর সূর্যের রক্তিম আভা মিলিয়ে এখন মোহিনীর চেহারাটা দেখলে মনে হচ্ছে যেন সেটা কোন মানুষ্য মূর্তি নয়; বরং স্বাক্ষাত পরীর দেশের কোন অপ্সরী হবে। খুব ইচ্ছা করছিল, এখানে রবি বাবুর সেই বিখ্যাত ডায়ালোগটা বলি- 'আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম!'

তবে সেইটা সম্ভব হল না। কারণ আমার কথা শুনতে পেলেই মোহিনী জিজ্ঞাসা করবে- 'কি পাইলে?' তখন তার প্রশ্নকে এভোয়েড করার জন্য নির্ঘাৎ আমাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। আর সেটা হলে একদিনে আমার অনেকগুলো মিথ্যা কথা বলা হয়ে যাবে! একজন মানুষের জীবনে একদিনে অতিরিক্ত মিথ্যার আশ্রয় নেওয়াটা কি ঠিক হবে? তবে সত্যি কথা বললেও সমস্যা। নিশ্চিত একটা পেল্লাই সাইজের কিল এসে পড়বে আমার টান পিঠের উপর! আর বাইক চালানো অবস্থায় যদি সেরকম কিছু ঘটে, তাহলে এক্সিডেন্ট করাটা হয়তো তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে! সুতরাং সেদিকে না গিয়ে ব্যাপারটা মাঝা-মাঝি রেখে আপাতত গুণ গুণ করে গেয়ে উঠলাম- 'বধু কোন আলো লাগলো চোখে......'

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- এই গল্পের বিষয়বস্তু সহ যাবতিয় চরিত্র সম্পূর্ন কাল্পনিক। যদি কারো ব্যক্তিগত জীবনের সাথে মিলে যায়, তাহলে সেটা নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার। সেজন্য লেখক কোন অংশেই দ্বায়ী থাকবে না। তাছাড়া টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২০
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×