ঘুঙুরের শব্দ হচ্ছে। কেউ একজন ঘুঙুর পরে হাঁটছে। হাঁটার ধরন অদ্ভুত। প্রতি ছয় কদম পরপর ছোট্ট করে একটা লাফ দিচ্ছে। ঘুঙুরের শব্দ বারবার পাল্টাচ্ছে। কিন্তু কথা সেটা না। আমার রুমে ঘুঙুর পড়বে কে?
প্রচণ্ড মাথা ব্যথা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সন্ধ্যায়। হঠাৎ ঘুঙুরের শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে। চোখ মেলতে ইচ্ছে করছে না। শব্দটা থেমে গেছে। উঠে বসলাম। ঘর অন্ধকার।মনে হচ্ছে রুমে কেউ নেই। হাতড়ে হাতড়ে লাইট ধরালাম। দশটা সতেরো। কারো কোন সাড়া নেই। রুমও ফাঁকা। শব্দ হলো কিসের বুঝতে পারছি না। অবচেতন মনের খেয়াল কিনা। নাহ তাহলে ঘুম ভেঙে শব্দ পেতাম না।
হঠাৎ করে আবার শুরু হলো ঘুঙুরের শব্দ। এবার শব্দের উৎস দেখতে পেলাম। কেউ তার ফোন চার্জে দিয়ে গেছে। রিংটোন বাজছে ঘুঙুরের শব্দ।
ঘড়িতে দশটা একুশ বাজে। প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে। হলের ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গেছে। খেতে হলে বাইরে যেতে হবে। বাইরে যেতে কোন ইচ্ছে করছে না।
আবারো মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। সারাদিন অনেক হেঁটেছি। হাঁটাহাটি প্রতিদিনই করি। কিন্তু আজ পরিশ্রম বেশি হয়ে গেছে। গতরাতে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পা মচকে গেছে। সারাদিন ব্যথা ছিল। এখন নেই তবে কেমন ফুলে আছে জায়গাটা।
দরজায় টোকা পড়ল। দরজা খুলে দিলাম । ক্যান্টিন বয় জলিল ভাত নিয়ে এসেছে। কেউ একজন নাকি আমার হয়ে অর্ডার দিয়ে এসেছিল।
খেতে বসে মনে হলো এক্যুরিয়ামের মাছগুলোকে খাবার দিইনি। খাবার রেখে আগে মাছকে খাবার দিতে গেলাম। গত কদিনে বেশ কয়েকটা মাছ মরে গেছে। বাকি আছে তিনটা।দেখা গেল দুইটা আসছে খাবার খেতে। ছোটটা আসেনি। অন্যান্য দিন খাবার নিয়ে ওই কাড়াকাড়ি করে। কালো লেজটা যখন নাড়ায় দারুণ লাগে দেখতে। একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম। নিচে পড়ে আছে। ওর নাম ছিল লিচু। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। খেতে বসলাম। গলা দিয়ে ভাত নামছেনা ।মাছের প্রতি মায়া থেকে কিনা কে জানে। আবারো মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে । প্রচণ্ড। উঠে দাঁড়ালাম। টলতে টলতে পড়ে যাচ্ছি আমি। ঘুঙুরের শব্দ হচ্ছে আবার। মনে হচ্ছে আমার মাথার ভেতর থেকে শব্দটা আসছে। জ্ঞান হারানোর আগে দপ জাতীয় একটা শব্দ শুনলাম। তখনো ঘুঙুর বেজেই যাচ্ছিল....
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:৩৭