পরনে লাল সালু। মাথায় বাঁধা আরেক টুকরো লাল কাপড়। কাঁধে ঝোলা। এক হাতে ত্রিশূল অন্য হাতে মন্দিরা। কালো কালো আঙুলগুলোতে নানারঙের পাথর বসানো ভারি ভারি ধাতুর আংটি। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ান তিনি। গেরস্থের বাড়ির উঠানে ত্রিশূল গেঁথে মন্দিরা বাজিয়ে তিনি গান ধরেন। গাজি কালু আর চম্পাবতির কিসসা। একসময় গান থামে। গেরস্থ গিন্নি একটি নারকেলের মালায় করে চাল এনে সামনে রাখেন। তার হাতে চাল দেয়ার নিয়ম নেই। সামনে মাটিতেই রাখতে হবে। তিনি পরম যতনে চালগুলো ঝোলার মধ্যে ঢেলে নেন। এ যে তার গানের প্রতি ভালবাসা। অর্জন। তিনি গাজি কালু নামেই পরিচিত। মূলত গাজি কালু পীরের কিসসা গেয়ে বেড়ান বলেই তার এই নাম। তিনি হাঁটেন মেঠোপথ, কাদাপথ। পাড় হয়ে আসেন খাল, নদী। তার কোন ক্লান্তি নেই। যেখানেই যান স্থানীয় একপাল ছেলেমেয়ে তাকে ঘিরে আগ্রহ বাড়ায়। তার পিছন পিছন আসে। তার আনন্দ হয়। কেমন একটা তৃপ্তিতে ভরে ওঠে মন। দূরে ঢোলের শব্দ আসছে।
এখন বর্ষাকাল। এই সময়টাতে হাওর অঞ্চলে বিয়ে শাদির ধুম পড়ে যায়। তিনি হাঁটছেন নদীর পাড় ঘেঁষে। দূরে একটি ট্রলার দেখা যায়। বিয়ের ট্রলার। কলাগাছ দিয়ে ট্রলারের সামনে গেট বানানো। রঙিন কাগজ কেটে নিশান বানিয়ে সুতলিতে আঁঠা দিয়ে লাগিয়ে লম্বা একটা বাঁশের মাথায় বেঁধে দেয়া হয়েছে। বাতাসে সুন্দর কাঁপছে কাগজগুলো। দুজন লাঠিয়াল উঠে দাঁড়ালো ট্রলারের ছাদে। তারা এখন লাঠি খেলা দেখাবে। ঢোলের তালে তালে নেচে এত চমৎকার করে খেলা দেখায় মানুষজন নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে যায়। তার বাবা একজন বিখ্যাত লাঠি খেলোয়াড় ছিলেন। বাবার কাছ থেকে কিছুটা বিদ্যা আয়ত্ব করেছিলেন। খুব একটা প্রয়োগ করেননি কোথাও। লাঠি খেলা থেকে গানই বেশি টানত তাকে। তাই গানটাকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন। তবে লাঠি খেলাও তিনি দেখিয়েছেন বেশ কয়েকবার। প্রথম যখন বিয়ে করেছিলেন। তাগড়া জোয়ান ছিলেন। বাপের কথা রাখতে গিয়ে নিজের বিয়েতে নিজেই লাঠিখেলা দেখিয়েছিলেন। সবকিছু কেমন স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগলো তার চোখের সামনে। তার বিয়েতে কম আনন্দ হয়নি। আহ সেইসব সময়! আর ফিরবার নয়...
'গাতক' এর শুরুটা... আসছে শীঘ্রই...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১২