সুমনের জ্বর বাড়ছে। জ্বর বাড়লে সুমনের একটা নতুন খেলার জগত তৈরি হয়। সাদা কালো বড় বড় ব্লক নিয়ে খেলার জগত। সুমন সবগুলো সাদা- কালো আলাদা করে ফেলবে, ঠিক তখন মায়ের কন্ঠ শুনে সব এলোমেলো হয়ে যায়। বাবা বাসায় ফিরেছেন। আজও সে ভেবেছে, সুমন সুস্থ হয়ে গেছে। তাই কোন ঔষুদ ছাড়াই বাড়ি ফিরেছে। সুমন চার দিন ভাত খায়নি তাই কিছু ফল অানতে বলেছিলেন, তাও আনেনি। মা চিৎকার করে কাঁদছে আর বকছে বাবাকে। বাবা চুপ। জন্মের পর থেকে অসুস্থ সুমনের প্রতি বাবা ক্লান্ত। এই ছেলের পেছনে আর সে অর্থ ব্যয় করতে সামর্থ নাই। তাকে তিন ভাই চার বোনের পরিবার দেখতে হয়। নিজের ছেলে অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছে, দেখলে নিজেকে অপরাধী মনে হয়, তাই বাবা গোসল করে খেয়ে, টিভি দেখতে বসে গেলেন। মা সুমনের কপালে ভেজা কাপড়ের স্পর্শ দিয়ে তাপ টেনে নিচ্ছেন। সুমনের বেশ ওম ওম অনুভব হয়। একবার সে সবগুলো ব্লক মিলিয়ে ফেলবে, মা জানে না। জানলে নিশ্চিত ডাক দিবে। আর মাত্র দু'বার ব্লক মিলাতে পারলেই আর কোনদিন বাবার কাছে ব্লক চাইতে হবে না। খেলার শখ মিটে যাবে। মা বুঝে গেছে, সুমনের সারা শরীর শীতল জল দিয়ে ধুইয়ে দিচ্ছি, শীত করছে সুমনের কিন্তু ভিতরে ব্লক মিলানোর তৃষ্ণা উত্তাপ বাড়িয়ে চলছে। সুমন ২য় বারও ব্লক মিলিয়ে ফেলে। এবার মা চিৎকার করে উঠে, আমার সুমন কথা বলে না কেন?
মা সুমন নিয়ে খালি পায়ে হাসপাতালে ছুটছে, পেছনে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্লান্ত পিতা। সুমন শেষবার ব্লক মিলাতে পারলেই খেলা শেষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৩৭