somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেকিমপাড়া

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মহল্লাটির নাম হেকিমপাড়া। শহরের একদম প্রান্ত দেশে তার অবস্থান। অবস্থান শহরের শেষ প্রান্তে হলেও এই মহল্লার পরিচিত শহরের আনাচে কানাচে সর্বত্র। তরুণ যুবকরা এ মহল্লা দেখলে তাদের চোখদুটি বন বিড়ালীর মতো ঝকঝক করে উঠে। ঝমর ঝমর নাচে স্পন্দিত হয় তাদের অন্তর বাহির। যদিও মহল্লাটি অনেক অভিপাশে অভিশপ্ত। কারণ অনেক যুবতীর নারীর সদ্য গড়া সংসার সে ভেঙেছে। অনেক সুখের সংসারে কেরোসিন ঢেলে তাতে একটা জলন্ত দেশলাই ছুঁড়ে অট্টহাস্যে মাতোয়ারা হয়েছে। অনেক যুবককে বাধ্য করেছে তার কষ্টে অর্জন করা টাকা অকাতরে ঢেলে দিতে । ফলশ্রুতিতে পরিবারে এক রাশ যাতনা ছাড়া যুককটির আর কিছুই দেয়ার মতো থাকে না। প্রতিদিন অসংখ্য যুবকের এরকম মাথা বিগড়ানো কর্মে নিজেকে নিযুক্ত রেখে হেকিমপাড়া নিজেকে ধন্য মনে করে।
নাজরিন আজ একটু তাড়াতাড়িই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো। তার মেয়েটি এখনো ঘুমুচ্ছে। আজ বন্ধের দিন বলে নাজরিন মেয়েটিকে আর ডাকতে গেলো না। অনেক রাত অবধি পড়েছে। আসছে ডিসেম্বরে তার ফাইনাল পরীক্ষা। তাই পড়াশুনার চাপ এখন একটু বেশিই। চোখের ঘুমকে এক পাশে ফেলে গভীর মনোযোগের সাথে পড়াশুনা করে মেয়েটি। যাবার সময় মেয়ের অগোছালো চুলগুলো ঠিক করে তার পাশে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা বইগুলো টেবিলে রেখে দিলো নাজরিন। রান্না ঘরের দিকে তাকাতেই নাজরিন একটা আতঙ্কের শিরশিরানি অনুভব করলো। রান্না ঘরে এক কলসি পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। চুলোর চারপাশে দু চারটি তেলাপোকা স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করছে। বেশ কিছু পিঁপড়ে রান্না ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে সারিবদ্ধভাবে হাঁটছে। বড্ড নিরাশ্রয়ের মতো মনে হচ্ছে নিজেকে। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এতটি বছর ধরে নিজ হাতে সংসারের হাল ধরে রেখেছে নাজরিন। পরিবারের সদস্য বলতে এখন একমাত্র মেয়ে শীলা।
হেকিম পাড়া ঢুকেই সবাই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অবস্থান নিতে চায়। যাতে ভালো খদ্দেরের নজরে পড়া যায়। একটু দেরি হলে সে জায়গাগুলোতে অন্যরা এসে বসে পড়ে। তখন এ আবার এক মহা সমস্যা। নাজরিন যথারীতি গিয়ে বশিরের দোকানের সামনে বসে পড়লো। ভালো খদ্দের ধরার জন্য জায়গাটা ভালোই।
“কী রে নাজরিন? আজ এত সক্কাল সক্কাল?”
বশিরের দোকানের সামনে বসতেই বশিরের পান চিবানো মুখ থেকে প্রশ্নটি আসে।
নাজরিন উত্তর দেয়, “তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া লাগবে বশির ভাই। মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে পড়বে। রান্নাবান্না করা লাগবে। ঘরে কিছু নাই।”
বশির একটু থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলো, “তোর মেয়েটা জানি কি করে?”
“ক্লাস নাইনে উঠে পড়বে এবার।”
“মেয়েটারে দিয়া কি শুধু লেখাপড়াই করাবি?”
বশিরের কোঁচকানো নাক আর মুখের ভঙ্গিটা দেখে নাজরিন বেশ শক্ত গলায় জবাব দিলো- “হ্যাঁ, লেখাপড়াই করবো সে।”
বশিরের সাথে গল্প করার থেকে অদূর রাস্তায় মনোযোগ বেশি নাজরিনের। নতুন কোনো পুরুষের টিকি পেলেই সে তার ভাব ভঙ্গি পরিবর্তন করা শুরু করে। শরীরের কাপড় বুক থেকে সরিয়ে রাখে। তার পেটের চর্বিযুক্ত ভাঁজগুলোকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান করার চেষ্টা করে। ব্লাউজের উপরের হুকটি খুলে স্তনের খাঁজ উন্মুক্ত করে রাখে। মনের শত বিষণœতার মাঝেও মুখ দিয়ে ফুটাতে হয় অদ্ভুত কামুক হাসি। ভাব ভঙ্গিতে বুঝাতে হয় তীব্র যৌন আবেগ। চোখ, ভুরু, ঠোঁটের রেখা, থুতনি সবকিছুতে ফুটিয়ে তুলতে হয় এক ধরনের কমনীয়তা।
এরকম করেই ঘন্টার উপরে পার হয়ে গেলো। নাজরিন যথারীতি অবস্থান নিয়ে আছে। কিন্তু এখনো সুবিধে করে উঠতে পারে নি। ভালো জায়গায় দাঁড়ানো সত্ত্বেও কোনো খদ্দের তাকে পছন্দ করলো না। তার দিকে এক পলক তাকিয়েই পরের পলকগুলো চলে যায় তৃষ্ঞা, নীলা, রীণা কিংবা জেসমিনের দিকে। নাজরিনের কামুক হাসি কিংবা দেহের ভাবভঙ্গি কাউকেই আর আকর্ষণ করতে পারছে না। নাজরিন টেনশনে পড়ে যায়। তার দুর্বল মনটি কম্পিত হওয়া শুরু করে। তার মুখটি ম্লান হত শুরু করলো ধীরে ধীরে। পুবের ঈষৎ লালচে আকাশের দিকে নাজরিন নিঝুম হয়ে তাকিয়ে আছে। কী করবে এবার?
এমন সময় টিঙটিঙে জীর্ণ চেহারার একটা লোক নাজরিনের নাকের ডগায় পঞ্চাশ টাকার একটা ছেঁড়া নোট ঝুলিয়ে নাড়াতে লাগলো। নাজরিন টেরচা চোখে লোকটাকে দেখলো। জীর্ণ শীর্ণ চেহারা, লোকটার ঢুলুঢুলু চোখের মধ্যে সদ্য গাঁজার আসর থেকে উঠে আসার লক্ষণ স্পষ্ট। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরিচ্ছদ। মাথার চুলগুলো এদিক সেদিক বিশৃঙ্খলভাবে ছড়ানো।
“কী? হবে নাকি? এক ঘন্টা? অল্প স্বল্প দুষ্টুমি?” হলদেটে কোদালের মত দাঁতগুলো বেঁকিয়ে পাগলের মতো হাসতে থাকলো লোকটি।
নাজরিনের ইচ্ছে হলো টাকাটা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে লোকটার মুখে থু থু সহকারে ছিঁটিয়ে দিবে। কিন্তু সে তো বেশ্যা! এসব ভদ্র সমাজের অভিমান কি তার দ্বারা মানায়? কোনো মতে নাজরিন নিজেকে সংযত করলো।
“হবে না! আমি এত সস্তা না।”
অনেক কষ্টে খিটখিটে মেজাজে জবাব দেয়ার চেষ্টার করলো নাজরিন।
লোকটা বাচ্চাদের মতো হি হি শব্দে একটুক্ষণ হাসলো।
“মাগীর আবার ভাব! আর কত রঙ্গ যে দেখিব!”
লোকটা তার ঢুলুঢুলু চোখের চাহনি আর হাতের পঞ্চাশ টাকার নোটটি নিয়ে টলতে টলতে চলে গেলো। লোকটার স্পর্ধা দেখে নাজরিনের বুকটা ফেটে যাবার উপক্রম হলো। পুরো একটা ঘন্টা তার শরীরটা চিবিয়ে খাবে। বিনিময়ে সে পাবে পঞ্চাশ টাকার একটা ছেঁড়া নোট! মুদ্রাস্ফীতির এই অর্থনীতিতে সে কী করবে এই নোটটি নিয়ে? বাসা পর্যন্ত পৌঁছাতেই তো নোটটা অর্ধেক হয়ে যাবে। অল্প কিছু কিনে যে তার চুলোয় আগুন ধরাবে সে ব্যবস্থাটি তো আর রইলো না। আজ পুরোটা দিন কি তবে উপোস করে কাটাতে হবে নাজরিনকে? সে না হয় হলো। তাই বলে তার মেয়েটাও! না না , এটা নাজরিন কোনো ভাবেই মানতে পারছে না। যেভাবেই হোক নাজরিনকে কিছু টাকা আয় করতেই হবে আজকে।
মহল্লার এ অংশে ও অংশে একটুক্ষণ পর পর দাঁড়াচ্ছে নাজরিন। কখনো তার মতো আরো তিন চার জনের সাথে। কখনো বা একা। কখনো বসছে সালামের দোকানে কখনো বা মুুর্শেদের। হেকিমপাড়ার কোনো জায়গাই নাজরিন বাকি রাখছে না। সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছে উন্মাদের মতো। তার এই উন্মাদনা দেখে অনেক খদ্দের তার গাল টিপে দেয়, অনেকে ঠোনা মারে, অনেকে কানটা আলতো করে মুলে দেয়। কিন্তু কেউ তাকে ভোগ করতে চায় না। নাজরিনের এ দেহ কি তবে একেবারেই মূল্যহীন?
আজকের আবহাওয়া যে একেবারে খারাপ তা কিন্তু নয়। বেশ চনমনে রোদ উঠেছে। রোদের তেজ নেই কিন্তু অদ্ভুত রকমের মিষ্টতা আছে। ঝড় বাদলের দিন হলে খদ্দেরের সংখ্যা কমে যায় সত্য। কিন্তু আজ নাজরিনের কপালে এই দুর্ভাগ্য ভর করলো কেন?
হ্যাঁ, তার শরীর আগের থেকে অনেক ভেঙে গেছে এটা সত্য। কিন্তু গতকালও তো এ অবস্থা ছিলো না। নাজরিনের জীবিকা উপায়ের রাস্তা কি তবে বন্ধ হতে চললো? কাচের বাসন ভাঙার মতো বিকট শব্দ অনুভব করলো নাজরিন। সেই শব্দে তার কর্ণপটহ ছিঁড়ে যাবার উপক্রম হলো।
না, নাজরিন আর পারছে না। সকাল পেরিয়ে দুপুর হতে চললো। ক্লান্ত হয়ে পড়লো নাজরিন। শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়তে শুরু করেছে অবিরল ধারায়। বশিরের দোকানের সামনে রাখা ব্রেঞ্চিতে আবারো বসলো নাজরিন। ঢকঢক করে দু গ্লাস পানি গিললো। আঁচল দিয়ে ঘাড়ে জমে থাকা ঘামের স্রোত মুছে নিলো।
বশির নাজরিনকে কিছুক্ষণ আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, “কী রে নাজরিন? একটাও জুটে নি?”
বশিরের এরকম আঁতে ঘা লাগানো কথায় নাজরিনের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, “তোর এত চিন্তা কিসের শুনি। তুই আমার সংসার চালাস? সবকিছুতে নাক গলাতে আসবি না বলে দিচ্ছি।”
“ইস, তুই এত ক্ষেপে যাচ্ছিস কেন? আমি ভুল কিছু বলেছি? মার্কেটে যে কম্পিটিশন তাতে তোর খদ্দের তো না পাওয়াই স্বাভাবিক। চামেলীকে দেখেছিস? আজই ঢুকেছে মহল্লায়। এক্কেবারে নতুন। ঢুকেই মার্কেট কাঁপিয়ে দিলো। আজকের সব থেকে বড় কোপটা তো সেই মেরেছে।”
“এই কেচ্ছা তুই চামেলীর কাছে কর গে। আমার কানে ঘ্যানর ঘ্যানর করছিস কেন! ”
নাজরিন উঠে পড়ে। বশিরের দোকানে সে যতই বসবে কথা ততই গড়াবে। এসব কথা আজ অসহ্য লাগছে তার কাছে।
হেকিমপাড়ায় পুরনো দিনগুলোর কথা হঠাৎ করে একের পর এক ভাসতে থাকলো নাজরিনের চোখের সামনে। চামেলীর মতো সেও প্রতিদিনের বড় কোপটাই এখানে মারতো। নাজরিনের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিতও ছিলো অনেকে। অথচ আজ নাজরিনের দিন গুজরানের উপায় পর্যন্ত নেই। কচুরি পানার মতো ভেসে চলছে মহল্লার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। প্রতিটি মুহূর্ত আজ বিমর্ষ করে তুলছে নাজরিনকে।
নাজরিন বুঝেছে তার মেয়াদ আর নেই। হেকিমপাড়ায় তার মেয়াদ ফুরিয়েছে। পুরুষের উন্মাদ কামের দৃষ্টি ছিঁড়তে ছিঁড়তে তাকে শেষ করে দিয়েছে। সে এখন অন্ত:সারশূণ্য। পুরুষকে বশ করার যে অস্ত্র এতদিন তার কাছে ছিলো সে অস্ত্র এখন ভোঁতা। নাজরিন পদার্পণ করলো এক নিষ্করুণ সময়ে।
নাজরিন উঠে পড়ছে এমন সময় বশির বললো, “তোরে একটা ভালো বুদ্ধি দেই নাজরিন। জানি না বিষয়টা তুই কিভাবে নিবি। তোর মেয়েটাকেও ব্যবসায় নামাতে পারিস। তোর চুলোয় আগুন না জ্বললে সেটা তো আর কেউ দেখবে না, তোকেই দেখতে হবে।”
কথাটা একদম সহ্য করতে পারলো না নাজরিন। ঝড়ের গর্জনে সে বশিরের কলার চেপে ধরলো।
“এই! এত্ত বড় সাহস শালা আমার মেয়েকে নিয়ে কথা বলিস! আমার মেয়েকে নিয়ে তুই আর একটি কথাও বলবি না। নাজরিনের মেয়ে আর যাই করুক বেশ্যা বৃত্তি করাবো না।”
নাজরিনের এরকম আকষ্মিক আচরণে বশির থতমত খেয়ে গেলো। কোনো মতে নাজরিনের হাত দুটি সরিয়ে শান্তিতে কয়েক সেকেন্ড নিঃশ্বাস নিলো।
তারপর বশিরও একটু ক্ষেপে গিয়ে বললো, “দেখবো নে শালী এ দেমাক তোর কয়দিন থাকে। কত বেশ্যাই তো দেখলাম। আরে বেশ্যার মেয়ে বেশ্যা হবে না তো শিক্ষিত ভদ্দরলোক হবে নাকি? কয়দিন না খেয়ে থাকবি শালী!”
নাজরিন হেকিমপাড়ায় আর কোনো সম্ভাবনা পাচ্ছে না। এখানে সময় কাটানো রীতিমতো অর্থহীন। কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা বাসার দিকে রওয়ানা দিলো নাজরিন। এই প্রথম একেবারে খালি হাতে বাসায় ফিরছে নাজরিন। সে কী জবাব দিবে তার মেয়ে শীলাকে? নাজরিন হাঁটছে বড় রাস্তার পাশ ঘেঁষে। গাড়ি দিয়ে যাওয়ার টাকাটিও নেই তার কাছে।
নাজরিনের চোখের সামনে একটু সময় পর পর ভেসে উঠছে তার একমাত্র মেয়ে শীলার ক্ষুধার্ত মলিন মুখখানি। মেয়েটিকে নিয়ে নাজরিনের অনেক স্বপ্ন। শীলাকে শিক্ষিত করে নাজরিন এই পেশা থেকে মুক্তি পেতে চায়। এ স্বপ্ন তার অনেক দিনের। সে রাস্তা কি তবে বন্ধ হতে চললো? নাজরিন হাঁটছে আর শিউড়ে উঠছে তার সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে। দেহটি ছাড়া বিক্রি করার মতো আর কী আছে নাজরিনের? চাকরির জন্য এ ঘর ও ঘর ঘুরতে ঘুরতে সে হয়রান হয়ে যাবে। কেউ চাকরি দিবে না। শহরের বাড়িগুলোতে কাজের বুয়াদের বেতনও রীতিমতো হাস্যকর। সে চাকরি দিয়ে একটি সংসার চালানো অসম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এতদিন হেকিম পাড়ায় যে পরিচিতি নাজরিন অর্জন করেছে সেই পরিচিতির ভিত্তিতে এই ভদ্রতার মুখোশ পড়া সমাজ নাজরিনকে স্থান দিবে?
ভালো বলতে যা বোঝায় সেই মাপকাটিতে এই সমাজের একটি মানুষও ভালো নয়। সবার ভালো মানুষীর অন্তরালে সুস্পষ্ট লুকিয়ে রয়েছে এক একটি যৌন অপরাধ, এক একটি অব্যক্ত অপকর্ম কিংবা খুন খারাপির মতো ঘটনা। নাজরিনদের অন্তরালে লুকিয়ে রাখার মতো কোনো বসন নেই। তাই সমাজ তা জানতে পারে। এজন্যই নাজরিনরা অপরাধী, অনেক বড় অপরাধী, সমাজের সবচেয়ে বড় অপরাধী।

ঘরের নিকট পৌঁছতেই নাজরিন কাঠ পুরানোর শব্দ শুনতে পেলো। শব্দটা বেশ পরিষ্কার। পাশের বাজারে কেজি ধরে বিক্রি করা পাহাড়ি কাঠ। নাজরিনের কপালে সাথে সাথেই একটা কুঞ্চন রেখা ফুটে উঠলো। নাজরিন ঘরে প্রবেশ করে নিঃশব্দে তার রান্না ঘরের দিকে উঁকি দেয়ার চেষ্টা করলো। একটু সবল, ছিপছিপে দেহের, ফর্সা বর্ণের একটি মেয়ে চুলোয় আগুন ধরাচ্ছে। পরনে তার নতুন পোশাক। তার আশে পাশে নানা ধরনের সবজি রাখা। বড় একটি তেলের বোতলও দেখা যাচ্ছে। মসলার তাকটিও নানা ধরনের মসলায় পরিপূর্ণ।
শীলা বেশ যত্ন সহকারে রান্না বসাচ্ছে। আজকের রান্নাটা বেশ ভালোই হবে মনে হচ্ছে। নাজরিন ক্লান্ত দেহ নিয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। মেঝেতে আঁচল ছড়িয়ে সে বসলো। নাজরিনের চোখ অশ্রুসজলা। সে থুম হয়ে বসে শীলার নুপুরের ঝনঝনানি শুনছে আর রান্না দেখছে। শীলাকে আদর জড়ানো কণ্ঠে ডাকবে সে শক্তিটুকুও পাচ্ছে না নাজরিন। এতটা পথ হেঁটে সে খুবই ক্লান্ত।
যে কলঙ্ক থেকে নাজরিন মেয়ের জীবনটা রক্ষা করতে চেয়েছিলো আজ তার মেয়ের নামেও সে কলঙ্ক বর্তে গেলো। তার সামনে যে রান্না করছে সে কি আসলেই তার মেয়ে? নাকি আজকের সবচেয়ে বড় কোপ দেয়া চামেলী! কোনটা হবে তার পরিচয়?

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৭
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×