somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের একজন শত্রু..

১১ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চীনের এক অদ্ভুত শাসকের কথা বলছি এবার । সেই শাসকের নাম ছিল কিন শি হুয়াং। ইতালির যখন হানিবল অবস্থান করছিলেন ঠিক সেই সময়টাই চীন শাসন করছিলেন কিন শি হুয়াং। কিন শি হুয়াং ইতিহাসকে খুব ঘৃণা করতেন। খ্রিষ্টপূর্ব ২১৩ অব্দে তিনি চীনের ইতিহাস সংক্রান্ত সকল বই-পূস্তক-দলির দস্তাবেজ পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। গানের বই তো দূরের কথা কনফুসিয়াস, তাওবাদের বইগুলোর ক্ষেত্রেও এরকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বই বলতে কৃষি সক্রান্ত কিছু বই থাকবে। স্রেফ এটুকুই। এছাড়া আর কোন প্রকার বই কারো কাছে পাওয়া গেলে সাথে সাথেই শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। ফলে চীনের মানুষজন ভয়ে তাদের ইতিহাসকে আগুনের মধ্যে বিসর্জন দিতে থাকে।
এখানে কিন শি হুয়াং এর একটু পরিচয় দিয়ে নিই। কিন শি হুয়াং চীন (chin) প্রদেশের এক রাজার পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন। খুব বড় রাজা বলতে বুঝায় সেরকম কিছু তিনি ছিলেন না। একটা প্রদেশের ছোট্ট একটা অঞ্চল তার বাবার নিয়ন্ত্রনে ছিল কেবল। সেই পরিবারেই কিন শি হুয়াং বেড়ে উঠেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য এই চীন (chin)প্রদেশ থেকে চীন( china) নামটি আসে সে নামে আমরা এখন দেশটিকে চিনি।

স্বভাতই প্রশ্ন জাগতে পারে কিন শি হুয়াং এর মাথায় এরকম উদ্ভট শখ চাপলে কেন? আসলে কিন শি হুয়াং পুরো চীনকে নতুন করে তৈরী করতে বলেছিলেন। তিনি পুরো চীন জুড়ে প্রচুর পরিমানে উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন। অনেক রাস্তাঘাট নির্মান করেছিলেন। তার আমলে চীনের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয় । চীনের বৃহৎ প্রাচীর বলতে যেটাকে আমরা চিনি সেটা তার আমলেই নির্মিত হয়েছিল। এটি চীনকে অনেক বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা করে। কিন্তু ইতিহাসের প্রতি ঘৃণা থেকে তাকে কেউ চুল পরিমাণও সরাতে পারে নি।

তবে কিন শি হুয়াং খুব বেশিদিন ক্ষমতায় ছিলেন না। এক পর্যায়ে হান পরিবার খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং কিন শি হুয়াংকে গদি ছাড়তে হয়। হান পরিবার অবশ্য কিন শি হুয়াং এর মত ইতিহাসকে ঘৃণা করত না। তার ইতিহাস পছন্দ করত। শুধু পছন্দ নয়, কনফুসিয়াসেরও দারুণ ভক্ত ছিল তারা। ক্ষমতায় বসে হান পরিবার এক এক করে তাদের ইতিহাসের বই পুস্তকগুলো পুনরায় খুঁজতে শুরু করে। যদিও কিন শি হুয়াং এর কড়া নির্দেশনা ছিল ইতিহাস পুড়িয়ে ফেলার। কিন্তু খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল অনেক ইতিহাস পাগল চীনা তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই পূস্তক আড়াল করে রেখেছিলেন। ফলে এক বিশাল ধ্বংসস্তুপে পড়তে পড়তেও রক্ষা পেয়ে যায় চীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস।

চীন তৎকালীন পৃথিবীর এমন একটি দেশ ছিল যেটি তার ২০০ বছরের ইতিহাস কোন অভিজাত কিংবা কোন সেনা দ্বারা শাসিত হয়নি। তাদের শাসন পালন করত শিক্ষিত মানুষজন। একটি মানুষ কোথেকে আসল সেটি তাদের কাছে বড় কোন বিয়য় ছিল না। সে ধনী না গরীব তাতেও তাদের কিছু যেত আসত না। কেউ যদি তার নিয়োগ পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করত তাহলেই সে অফিসিয়াল পদে নিয়োগ পেত। যার রেজাল্ট সব থেকে ভাল হত সে তত ভাল পদে নিয়োগ পেত। এভাবেই তৎকালীন চীনের প্রশাসন চলত। যে পরীক্ষার মাধ্যমে এই নিয়োগ দেখা হত সেটি খুব কঠিন একটি পরীক্ষা ছিল। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে অনেক কিছু জেনে শুনে আসতে হত। চীনের ইতিহাস, আইন কানুন, কনফুসীয় মতবাদ, তাওবাদ আরো কত কী!
শেষমেষ যেটা দাঁড়ালো তা হল কিন শি হুয়াঙ ইতিহাস ধ্বংস করতে পারেন নি। ইতিহাস ধ্বংস করা কোন সমাধান নয়। সবার ইতিহাস জানা দরকার। ইতিহাস ধ্বংস করা আর জ্ঞানকে হত্যা করার মধ্যে কোন তফাৎ নেই।

লেখক
সৌরভ দাস
সভাপতি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাকৃবি শাখা

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×