(প্রসঙ্গ কথা
আমার লেখা ‘কোরআন হাদিসের আলোকে তাবিজাত শিরিক নয় কি?’ গ্রন্থের প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়েছে সিলেটের প্রসিদ্ধ মাদ্রাসা জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর, বিয়ানীবাজার, সিলেটের ম্যাগাজিন ‘আল-হিলাল-এ। আমরা প্রথমে এই প্রতিবাদ লিপি পাঠ করবো, অতঃপর বিচার-বিশ্লেষণ করবো হাদিস, কোরআন এবং আকাবিরদের দৃষ্টিতে এই লেখার গ্রহণযোগ্যতা।-
--------------------------------------------------------------------------------
আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মাদ্রাসার ফতোয়া
‘কোরআন হাদীসের আলোকে তাবিজাত র্শিক নয় কি?’
বই প্রসঙ্গে কিছু কথা
ইবনে তায়্যিব
গত কয়েকদিন আগে বিয়ানীবাজার গিয়েছিলাম। লাইব্রেরীর থাকে রাখা একটি বই হঠাৎ আমার নজর কাড়লো। হাতে নিয়ে দেখলাম বইটির নাম ‘কোনআন হাদীসের আলোকে তাবিজাত শিরক নয় কি?’ ঐ ছোট্ট পুস্তিকাটির লেখক সৈয়দ মবনু। প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে এক নিঃশ্বাসে বইটি পড়ে ফেলাম। লেখক কোরআন হাদীসের কিছু ব্যাখ্যা সাপে আয়াত ও হাদীস দ্বারা সব ধরনের তাবিজাতকে শিরক বলার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।
মূলত: সবধরনের তাবিজাত শিরক কি শিরক নয়, এ মতানৈক্যের বীজ সর্বপ্রথম সালাফী তথা আহলে হাদীসরাই বপন করে। সালাফীরা স্বভাবজাত উগ্রতা অনুযায়ী অন্যান্য বিষয়ের মতো তাবিজাতের ব্যাপারেও বেঁকে বসে। অত্যন্ত নির্বাকভাবে তাবিজাত শিরক বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
উক্ত বইয়ের লেখক আপন বইয়ের এক স্থান লিখেন- ‘তাবিজ সম্পর্কে ইসলামের রায় কি? তা আমরা অনেকেই জানিনা। বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় এ সম্পর্কে বিভিন্ন বই প্রকাশিত হলেও আমাদের বাংলাদেশী আলেম সমাজ রহস্যজনক নীরবতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন।’ অতঃপর তাবিজাতের পারিভাষিক ব্যাখ্যা, তাবিজাত শিরক হওয়ার দলিল সবকিছু আল্লামা আলী বিন নকী আল-উলয়ানী রচিত
‘ আকীদার মানদন্ডে তাবিজাত’ বই থেকে গ্রহণ করেছেন। আল্লামা আলী বিন নকী একজন বিখ্যাত সালাফী আলিম। লেখকের প্রতি আমার যেথেষ্ট আস্থা আছে। আমি তার বিভিন্ন বিপ্লবী রচনাবলীর একজন ভক্তপাঠকও বটে। কিন্তু তাবিজাতের ব্যাপারে আমার মনে হয় লেখক বর্তমান যুগের সবচে ভয়াবহ বাতিল মতবাদ সালাফীদের চোরাবালিতে আটকা পড়ে গেছেন। সাধারণভাবে সবধরনের তাবিজাতকে শিরক বলা সালাফীদের অন্ধ অনুকরণ ছাড়া আর কিছু নয়। আমার আশ্চর্য লাগে শুধুমাত্র তাবিজাত শিরক হওয়ার পরে হাদিসগুলো ভাসলো, কিন্তু লেখকের চোখে তাবিজ বৈধ হওয়ার দলীলগুলো ভাসলনা। আলোচ্য জবাবমূলক প্রবন্ধে প্রথমে তাবিজাত বৈধ হওয়ার পরে দলীলগুলো আমি পেশ করার চেষ্টা করব। অতঃপর তার পেশকৃত দলীলগুলোর জবাব দেব ইনশাল্লাহ।
তাবিজ জায়েজ হওয়ার পক্ষে আহলুস্সুন্নাহ ওয়ালা জামাতের দলীল :
আহলুস সুন্নাহ ওয়ালা জামাতের মতে কুরআনে কারীমের আয়াত, আল্লাহর নাম, দুয়ায়ে মানকুলা ইত্যাদি দ্বারা তাবিজ দেয়া জায়েজ। তবে শর্ত হল তাবিজের মধ্যে নিজস্ব মতা আছে মনে করে তার উপর ভরসা না করা। তাছাড়া কুফুরী কালাম দ্বারা তাবিজ দেয়া বা অর্থ জানা যায়না এমন কালাম দ্বারা তাবিজ দেয়া জায়েজ নয়। (আহসানুল ফাতওয়া, খন্ড ৮, পৃঃ ২৫৫)। তাবিজ জায়েজ হওয়ার পে অসংখ্য দলীল রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা গেল।
ইমাম আবু বাকর ইবনে আবী শাইবাহ ‘মুনান্নাফ’ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন, আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা ও তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে, সে যেন ******** দো’আটি পাঠ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন। এই হাদীসটি ইমাম আবূদাউদ (রাহ.) তাঁর সুনানে আবূ দাউদের কিতাবু-তিব্বের **** অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল-তাবিজ দেয়া জায়েজ। যদি শিরক হত তাহলে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) এর মত বিখ্যাত বুযুর্গ সাহাবী তাবীজ লিখে ছোট ছোট শিশুদের গলায় লটকিয়ে দিতেন না। বিধায় কোন হাদীস পেলেই তার ব্যাখ্যা, মর্মার্থ, প্রয়োগ স্থল না বুঝে কোন কিছুর ব্যাপারে শিরকের সার্টিফিকেট লাগানো আদৌ ঠিক নয়।
ঃ ‘ইবনে আবী শাইবাহ মুজাহিদ (রাহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, মুজাহিদ (রাহ.) লোকদের জন্য তাবিজ লিখে তাদের গলায় লটকিয়ে দিতেন। এ মত তিনি আবু জাফর, মুহাম্মদবিন সীরিন, উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর এবং যাহহাক প্রমুখ থেকে লটকানো, অথবা হাতে বাঁকানো বৈধ মনে করতেন।’
উপরে যেসব তাবিয়ীর কথা বলা হলো তারা বিখ্যাত সর্বজন অনুসৃত। এসব তাবিয়ীদের থেকেও কি শিরকের কল্পনা করা যায়? না এসব দুনিয়া বিখ্যাক মুহাদ্দিস তাবিয়ীগণ লেখক কর্তৃক উদ্ধৃত হাদীসগুলো সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন?
ঃ আয়িশা (রা.) বলেন, বিপদ আসার পর যা লটকানো হয় তা তামীমা (অর্থাৎ নাজায়েজ তাবীজ) এর অন্তর্ভূক্ত নয়।
(৪) সর্বজন মান্য বিশেষত: সালাফিরা যার পদে পদে অনুসরণ করে সেই ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ.) এর দৃষ্টিতেও তাবিজ-কবচ বৈধ। তিনি ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়ার ১৯নং খন্ডের ৬৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেন, বিপগ্রস্থ বা অসুস্থ লোকদের জন্য কালি দ্বারা আল্লাহর কিতাব লিখে তাবিজ দেয়া এবং ধুয়ে পান করানো জায়িজ।
উক্ত আলোচনার শেষদিকে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রাহ.) তাবিজাত বৈধ হওয়ার পক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর একটি আছর পেশ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) কাগজের টুকরায় তাবিজ লিখে দিতেন, তা সন্তানসম্ভবা নারীদের বাহুতে বেঁধে দেয়া হত।
(৫) হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ, আল্লামা শামী (রাহ.) লিখেন, নাজায়িজ তাবিজ হল ঐ সব তাবিজ যা কুরআন বহির্ভূত। (রাদ্দুল মুহতার, খন্ড ৫, পৃ: ২৩২)। অতপর তিনি আরোও লিখেন, কুরআনে কারীম দ্বারা অথবা আল্লাহর নাম দ্বারা তাবিজ লিখলে কোন অসুবিধা নেই। (রাদ্দুল মুহতার, খন্ড ৬, পৃ:৩৩৬)। তাছাড়া আল-মুজামুল ওসীত, আল-কামূসুল ওজীয, মিসবাহুল লুগাত, আল-মানার ইত্যাদি প্রামান্য আরবী অভিধাগুলোতে
শব্দের অর্থ বলা হয়েছেন মন্ত্র, ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ। যদি
শব্দের অর্থ তাবিজ মানা যায় তাহলে তাবিজ বৈধ হওয়ার পে মারফু হাদীসের অভাব হবেনা। কারণ, অসখ্য হাদীসে আল্লাহর রাসূল বলেছেন ***** জায়েজ। আহসানুল ফাতাওয়া গ্রন্থে বলা হয়েছে, আবজাদ সংখ্যা দ্বারাও তাবিজ লিখা বৈধ। কারণ, এসব সংখ্যার নির্ধাররিত অর্থ জানা সম্ভব আছে।
আরো বহুত দলীল আছে। স্থানাভাবে উল্লেখ করা গেল না। হ্যাঁ এটাকে সকলেই স্বীকার করেন যে, তাবিজকে পেশা বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ খুব সম্মানজনক নয়। তাবিজাতের পেশা সম্মান জনক না হওয়ার দরুনই অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম তা থেকে পরহেয করেন, এজন্য নয় যে তাবিজাত শিরক।
লেখক কর্তৃক উদ্ধৃত দলীলসমূহের জবাব ঃ
লেখক বিখ্যাত সালাফী আলিম আল্লামা উলয়ানীর অনুকরণে ইত্যাদি আয়াত দ্বারা তাবিজাতকে শিরক সাব্যস্থ করার চেষ্টা করেছেন। আসলে এসব আয়াত তাবিজ নাজায়িজ হওয়ার পে দলীল দেয়া সম্পূর্ণ হাস্যকর ও শিশুসূলভ কান্ড। যারা তাবিজ কবচকে বৈধ বলেছেন তারা তো ঢালাওভাবে তাবিজকে বৈধ বলেননি। বরং তারাও তো বলেছেন তাবিজের উপর ভরসা চলবেনা।
তাবিজের নিজস্ব কোন প্রভাব নেই। রোগ থেকে মুক্তিদানকারী একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। তাবিজ ওসীলা মাত্র। তাবিজকে শুধুমাত্র ওসীলা হিসেবে গ্রহণ করা যদি শিরক হয় তাহলে বলতে হবে বৈধ পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণসহ সবধরনের ওসীলা শিরক। তা ছাড়া শুধুমাত্র তাবিজ কেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেকোন কিছুর উপর ভরসা করা শিরক। সুতরাং কেউ যদি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে তাবিজ গ্রহণ করে তাহলে তা শিরক হতে যাবে কেন? এসব আয়াতের ভিত্তিতে ঢালাওভাবে সবধরনের তাবিজকে শিরক বলা কি স্থুল জ্ঞানের পরিচায়ক নয়? লেখক তাবিজাত শিরক হওয়ার পক্ষে ৫ খানা হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। সবগুলো হাদীসের ইজমালী জবাব হলো- আলোচ্য হাদীসসমূহে ঐসব তাবিজ কবচকে শিরক বলা হয়েছে যার মধ্যে শিরকী কালাম থাকবে। অথবা এসব হাদীস দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তাবিজের নিজস্ব মতা আছে বলে বিশ্বাস করা, তাবিজই একমাত্র মুক্তিদানকারী ইত্যাদি ধারণার বশীভূত হয়ে তাবিজ ব্যবহার করা শিরক। এসব হাদীসে এ ব্যাখ্যা করতে আমরা বাধ্য। কারণ, বিভিন্ন জলীলুল্ কদর সাহাবী ও তাবিয়ীকে মুশরিক বলতে হবে। সকল মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাওয়াক্কুল বিরোধী বলে উলেখ করেছেন। সেসব হাদীসের উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। লেখকের দলীর হিসেবে পেশকৃত প্রথম হাদীস
(অর্থাৎ ঝাড়ফুঁক, তাবিজাবলী এবং ডোরা সূতা বাঁধা শিরক) এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ফক্বীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা শাওকানী (রাহ তাঁর ‘নাইলুল আওতার’ গ্রন্থে বলেছেন।
‘তামীমা’ রাকী এবং তাওলাকে শিরক বলা হয়েছে এ কারণে যে, জাহিলী লোকেরা মনে করত এসবের মধ্যে নিজস্ব প্রভাব রয়েছে।’ বুঝা গেল আমভাবে সবধরনের তাবিজ শিরক নয়, বরং যে এ কথা বিশ্বাস করবে যে, তাবিজের নিজস্ব মতা রয়েছে, তার জন্য তাবিজ ব্যবহার করা শিরক। তাছাড়া উক্ত হাদীসের একটা শব্দের দিকে নযর দেয়ার মতো। লেখক আপন বইয়ের স্থানে স্থানে উল্লেখ করেছেন যে, তাবিজাত শিরক হলেও ঝাড়ফুঁক বৈধ। কিন্তু উপরোক্ত হাদীসে তো ঝাড়ফুঁককেও শিরক বলা হয়েছে। তাহলে ঝাড়ফুঁক বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে যে ব্যাখ্যা দেয়া হবে তাবিজাত বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রেও সে ব্যাখ্যা প্রজোয্য হবে।
আসল কথা হল, যেভাবে সকল ঝাড়ফুঁক শিরক নয় সেভাবে সকল তাবীজ কবজ শিরক নয়। হ্যাঁ, কুফরী কালাম দ্বারা রচিত তাবীজ শিরক। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রাহ.) যেসব হাদীসে তাবিজকে শিরক ও তাওয়াক্কুল বিরোধী কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে, সেব হাদীসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন ‘এসব হাদিসের মধ্যে তামিমা দ্বারা মুরাদ হল জাহিলী যুগের তামীমা বা তাবিজ-কবজ। যেসব তাবিজ আল্লাহর নাম এবং আল্লাহর কালাম দ্বারা লিখিত সেসব তাবিজ আলোচ্য হাদীসের অর্ন্তভূক্ত নয়। বরং এ জাতীয় তাবীজ মুস্তাহাব ও বরকতের কারণ। (মিরক্বাত খন্ড নং ৮, পঃ নং ৩২২)
আল্লামা শামী (রাহ বলেছেন ‘আলোচ্য হাদীসগুলোর মধ্যে যেসব তাবিজকে শিরক বলা হয়েছে, তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল কোরআন ছাড়া অন্য কোন শিরকী কালাম দ্বারা তাবিজ লেখা। শুধুমাত্র কোন হাদীস পেয়ে গেলেই নিজের পকেট থেকে ব্যাখ্যা না করে মুহাদ্দিসীনে ক্বিরাম ও ফুক্বাহায়ে ক্বিরাম যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সে ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে। নতুবা সিরাতে মুসতাক্বীম থেকে ছিটকে পড়ার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে। লেখক যেসব হাদীসকে দলিল হিসাবে গ্রহণ করেছেন সেসবের তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ফুকাহায়ে ক্বিরাম যে ব্যাখ্যা দেননি বরং তারা অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কারণ, তারা বুঝেছিলেন যে লেখকের মত ধুম ফতোয়াবাজী করলে অনেক সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিয়ীনে ইযামকে মুশরিক বলতে হবে। কারণ, সাহাবায়ে কেরাম ইসলাম গ্রহণের পর সব ধরণের শিরক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন। আচ্ছা বলুন তো! আমরা আপনার ব্যাখ্যা মানব না মোল্লা আলী ক্বারী, ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, আল্লামা শাওকানী, আল্লামা শামী প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত ফকিহ ও মুহাদ্দিসগণের ব্যাখ্যা মানবো? তারা তো ঢালাওভাবে সবধরনের তাবিজকে শিরক বলেন নি বরং বলেছেন লাভ ও রোগ মুক্তির উপায়। তাছাড়া কিয়াছও তাবিজের বৈধতার পক্ষে কারণ, সকল উলামায়ে কিরাম একথার ব্যাপারে একমত যে, আয়াতে কুরআনী, দুয়ায়ে মাছুরা ইত্যাদি দ্বারা ঝাড়ফুঁক জায়িজ, তাহলে আয়াতে কুরআন বা দুয়ায়ে মাছুরা দ্বারা তাবিজ লিখে গলায় লটকালে দোষ কোথায়?
আগেই বলেছি কুরআন হাদীস দ্বারা তাবিজের বৈধতার পে অসংখ্য দলীল থাকা সত্ত্বেও তা লেখকের নজর কাড়তে সম হয়নাই। শুধুমাত্র হযরত আয়িশা (রা এর একটি হাদীস তার নজরে পড়েছিল। যে হাদীসে নবী পত্নী আয়িশা (রা.) বলেছিলেন, ‘বালা মুসীবত আসার পর যা লটকানো হয় তা তামীমা (তথা যে সব তাবীজকে শিরক বলা হয়েছে।) সে সবের অন্তর্ভূক্ত নয়। এই হাদীসের জবাব দিতে গিয়ে লেখক সম্পূর্ণ বিষয়টাকে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছন। কারণ, তিনি উক্ত হাদীসে আয়েশার জবাব দিতে গিয়ে বলেন, হযরত আয়েশা (রা.) আত-তামাইমু দ্বারা ব্যাপকভাবে সকল তাবিজ বুঝান নি। বরং শুধু মাত্র কুরআনের আয়াতের শিরক নয়কি? বইয়ের স্থানে স্থানে ব্যাপকভাবে সবধরনের তাবিজকে শিরক বলা হয়েছে কোন ধরনের বাছ-বিচার ছাড়াই। এমনকি এক জায়গায় তিনি লিখেন ‘মাজারে গিয়ে কোন কিছু প্রার্থনা করা যেমন পাপ। তেমনি তাবিজের মাধ্যমে কিছু প্রাপ্তির আশাও পাপ’। তাই হাদীসের আয়িশার তিনি যে জবাব দিয়েছেন তা কি স্ববিরোধী হলনা। আর যদি আমরা মেনে নেই যে, লেখকের মতেও সবধরণের তাবিজ শিরক নয়, বরং কেবলমাত্র কুফরী কালাম দ্বারা লিখিত তাবিজ শিরক। তাহলে প্রশ্ন, লেখক বাঙ্গালী আলিমদেরকে এতো বিষোদগার করলেন কেন? কেন উলামায়ে কেরামের গায়ে শিরকের কালিমা লেপন করলেন? কেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আমাদের আকাবিরকে হেয় প্রতিপন্ন করলেন? আলিম সমাজ তো ঢালাওভাবে সব ধরনের তাবিজকে বৈধ বলেন না। তবে আসলে লেখকের মূল মাকসুদ হল সব ধরনের তাবিজাতকে শিরক সাব্যস্ত করা। যা তার বইয়ের বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে। আমি লেখককে অনুরোধ করব, আপনি আপনার বিবেককে জিজ্ঞেস করুন, সালাফীদের অন্ধ অনুকরণে অবৈধ ফতোয়াবাজী করে আমাদের আকাবিরদের চরিত্রে শিরকের কালিমা লেপন করা কতটুকু ঠিক হল?
----------------------------------------------------------------------------------জবাব পড়ুন পরবর্তী পোষ্টে
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১০ সকাল ৮:৪৫